Logo
×

Follow Us

শিল্প-সাহিত্য

এক ফাল্গুনে

Icon

মো. আরিফুল হাসান

প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২০, ১৭:৫১

এক ফাল্গুনে

‘এক ফাল্গুনে আমরা সবাই নতজানু হবো/এক ফাল্গুনে আমরা সবাই/ নিজেদেরকে সঁপে দেবো সত্যের পায়ের কাছে।/ তারপর আমরা সবাই উদোম ও উদ্যমহীন হয়ে পড়বো/ চিন্তিত হয়ে পড়বো/ হয়ে উঠবো যুগপৎ চিন্তাহীন।’ এতটুকু লিখে থামতে চায় কবি রশিদ রাফি। তারপরের শব্দগুলো কী হতে পারে একটু চিন্তা করে নেয়। ভাবে, কাজল কালো দীঘির উপমা টানলে কেমন হয়? আবার ভাবে, না। এভাবে না। একটু অন্যভাবে চেষ্টা করা যাক। তারপর দুটো লাইন এসে তার কলমের ডগায় ভীর করে। কবি রশিদ রাফি তড়িঘড়ি করে লিখে রাখে লাইন দুটো। ‘তারপর শব্দ রং, রংঘর-জলসার প্রলাপ, বাজে অক্ষর/ তোমার মুমূর্ষু চিন্তায় এসে খেলা করে নিশিদিন।’

সন্ধ্যার পর থেকে গলা একদম শুকিয়ে আছে রাফির। হাতের কাছে অগাধ জল, তবুও পান করার একটুও ইচ্ছে হচ্ছে না রাফির। এ এক ভবঘুরে চেতনা, প্রত্যক্ষ করে নিজের অভ্যন্তরের মরুতে। ভাবতে থাকে, চিতা। ভাবে, মরুভূমি। আবার তার কাছে নিজেকে আগ্নেয়গিরি বলে মনে হয়। মনে হয় মেঘহীন বিশুষ্ক চৈত্রের আকাশ, দুপুরের রোদ, কিংবা তার মনে হতে থাকে শৈশবে মায়ের রান্না করার মাটির চুলোটি অবিকল তার বুকের আদলে লেখা। এক মুহূর্তেরও কম সময়ের জন্য তার মায়ের মুখ ভেসে উঠে। স্পষ্ট বুঝা যায় না। ভাসা ভাসা চোখে ভাসে মায়ের মুখ।

মায়ের ছবির কাছে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। লুকিয়ে লুকিয়ে দেখেছে। কখনো বা পলকহীন চেয়ে থেকেছে মায়ের মুখের দিকে। তবুও কেনো মায়ের চেহারা পুরোপুরি মনে আসে না। কেমন যেনো অনঙ্কিত থেকে যায় কল্প কলমে। নিজেকে ধিক্কার দেয়। মায়ের চেহারা ভুলে যাওয়ার অপরাধটা ক্ষমাযোগ্য মনে হয় না। ভাবে, এমনকি হতে পারে? কিশোর বয়েসে মা মারা গেলে চেহারা মনে থাকে না কারো? কাকে জিজ্ঞেস করবে? কার কাছে শুধোবে মনের কথা। ভাবতে ভাবতে আবারো মনে হয় এখন লিখার সময়। খাতার লিখতে থাকে- ‘কখনো রাত হয়ে গেলে/ মনে করো তুমি নেই/ আমি নেই/ কেউ নেই কোনখানে।/ সবকিছু শূন্যতা জেনে/ তুমিও আসবে/ আমার শূন্য দুয়ারে/ ফেলবে পদছায়া।/ আমি ভাববো, তুমি আসবে/ আমি ভাববো, তুমি আসছো।’

এতটুকু লেখে আবার থামে রাফি। কার আসার কথা ছিলো? কার জন্যে অপেক্ষা করে আছে? সে জানে না। জানতেও চায় না। কিন্তু কিছুতেই মাথা থেকে ভাবনা সরাতে পারে না, কার জন্যে অপেক্ষা করছে? কার পায়ের ছায়া দেখতে কাতর প্রাণ। কোন রূপের সুধাময়ী শূন্য দরোজায় পা রেখে পূর্ণ করে দেবে? সে ভাবতে থাকে। ভাবনার ফাঁকে হঠাৎ মনে হয় জয়তুনের কথা। জয়তুন তার গ্রামের মেয়ে। দেখতে সুন্দর না। কিন্তু জয়তুনের নেশাতেই একসময় অন্ধ হয়ে গিয়েছিলো রাফি।

রাফিদের সমবয়সীদের মাঝে জয়তুনের দেহে প্রথম যৌবন টের পাওয়া যায়। ফুলে উঠা স্তন এক রাতের মধ্যে যেনো ডালিমের আকার ধারণ করেছে। এই স্ফীত স্তনের জন্য মোহাবিষ্ট হয়ে পড়েছিলো রাফি। জয়তুনকে প্রেম প্রস্তাব করেছে। বলেছে সন্ধ্যার সময় ছাড়াবাড়িতে দেখা করতে। জয়তুন বলেছিলো, কেনো? রাফি বলেছিলো, কথা আছে। আসলে রাফির কোনো কথা ছিলো না। আর জয়তুনও তা বুঝতে পেরেছে অনায়াসে। জয়তুন আসেনি। সেদিন রাফির অনেক অপমানবোধ হয়েছিলো। যেখানে তাহমিনা, সুহানা কিংবা সুমির মতো সুন্দরীরা তার কাছে প্রেম চেয়ে চেয়ে অস্থির। সেখানে অরূপসী জয়তুন, বলা যায় কুৎসিত জয়তুন কিনা তার প্রেম প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। এক ধরণের ক্রোধ হয় জয়তুনের প্রতি।

সে জয়তুনের কথা ভাবছে কেনো? না আসাতে? যদি এসে যেতো তাহলে আর ভাবনায় আসতো না? কিন্তু এমনটিও তো নয়। তার ভাবনায় প্রায়ই আসে সুমি, সুহানা কিংবা তাহমিনা। তবুও শূন্য দরোজায় কার পদছায়া দেখতে চেয়েছিলো? আর ভাবতে পারে না। বানের জোয়ারের মতো কলম আবার লিখে চলে, তাহলে কি অস্পষ্ট আঁধার?/ তীব্র নিনাদ?/ স্রোতের বৈরিমুখে দাঁড়িয়ে আমরা কী দেখছি/ কালো ধোঁয়া/ জীবনের কলুষ সময়/ না নষ্টগীতের সংসার?/

সংসার বলতে কবি রশিদ রাফির এক বেডের কক্ষ। সাথে ছোট বাথরুম। মেসের এই ক্ষুদ্র কক্ষ ভাড়া নিয়েছে জমাদার তরিকুলের কাছ থেকে। মেসটি জমাদারের মেস নামেই পরিচিত। অন্যান্য রুমে ব্যাচেলররা থাকে। এক দুজন বিবাহিত লোকও থাকে। তাদের বাড়ি কুড়িগ্রামের অভ্যন্তরে। কর্মসূত্রে কুমিল্লায় থাকা। একটি সিকিউরিটি সংস্থার অধীনে তারা কাজ করে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় তাদের কাজ করতে হয়। কোম্পানি যাদের কাছে ভালো টাকা পয়সা পায় তাদের কাছেই বেচে দেয় সিকিউরিটি কর্মীদের। রশিদের তাদের সাথে সম্পর্ক মন্দ না। তবুও একটু দূরত্ব বজায় রেখে চলে রশিদ রাফি। এটি তার শিক্ষাজাত অহংকার থেকে নয়। কিংবা নয় তার লেখালেখির জন্যে একাকীত্বের প্রয়োজনে। অন্য একটি বিষয় আড়াল করতে অনেকের সাথেই তেমন মিশতে চায় না।

রশিদ রাফি মাদকসেবী। ভয়ানক গাঁজাখোর। প্রতিদিন রুটিন করে বা রুটিনের বাইরেও গঞ্জিকায় মগ্ন থাকে। মনে করে এটি তার কবিতার জন্য উপাদেয়। তাই সেবন করে। অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই। তবুও চায় না বিষয়টি জানাজানি হোক। তাছাড়া আইনের কড়া শাসন, পুলিশের বাড়াবাড়ি, আর লোকলজ্জার বিষয়ও ভাবে। তাই মৌমিতাকেও বলতে পারেনি, বাসায় এসো।

মৌমিতার সাথে তার দেখা হয়েছিলো গত শীতে। তাকে দেখে রাফির মায়ের কথা মনে পড়ে যায়। মায়ের ছবি চোখের সামনে ভেসে থাকে। এই প্রথম মায়ের চেহারা এতক্ষণ ধরে তার মনের ক্যানভাসে জ্বলে রইলো। রাফি চোখ ফেরাতে পারেনি। অনুষ্ঠান শেষে মৌমিতা এগিয়ে প্রশ্ন করেছিলো, এতক্ষণ তাকিয়ে ছিলেন কেনো? রাফি বলতে গিয়েও থেমে গেলো। সে বলতে পারলো না, মৌমিতাকে দেখে তার মায়ের চেহারা ভেসে উঠেছিলো হৃদয়পটে। এটি বলতে কেমন লজ্জাবোধ করলো। নিমিষেই সামলে নিয়ে নিজেকে বলে বসলো, ভালো লাগছিলো। কথাটি শুনে মৌমিতা এমনভাবে তাকালো, যেনো নিজেও বিশ্বাস করতে পারছে না।

তারপর থেকে মৌমিতার সঙ্গে রাফির যোগাযোগ বাড়তে থাকে। ছোট্ট চাকুরির অবসরে রাফি চলে যায় ধর্মসাগর পাড়ে। কলেজ শেষ করে মৌমিতাও গিয়ে বসে। দুজনে ধর্মসাগর পাড়ে বসে বাদামের খোসা ছড়াতে ছড়াতে পেরিয়ে গেছে কতদিন। মৌমিতা তাকে বিয়ের কথা বলেছিলো। না বলে দিয়েছে। তবুও হাল ছাড়েনি মৌমিতা। অদ্যাবধি তার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। লেখতে বসার আগেও মৌমিতা ফোন করেছিলো। রশিদ রাফি ফোনটা কেটে দিয়ে খাতা টেনে লিখতে বসে।

‘ইচ্ছেরা ডানা মেলে/ নীল পায়রা উড়ে আকাশে/ মানুষগুলো/ দিন দিন নিজেকে নামিয়ে আনছে পাঁকে।’ শেষের লাইনটি রশিদ রাফির মনে ধরে যায়। তাহলে কী মানবের অধঃপতন অনিবার্য। মানুষ কি ধ্বংস হয়ে যাবে? নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে একেবারে? তিল তিল করে গড়া অনেক সভ্যতার মৃত্যুর ইতিহাস তারও কিছু জানা আছে। সে দেখেছে, কীভাবে একটি অর্গল খুলে খুলে মানুষ প্রবেশ করে আরেকটি সত্যতায়। এ মুহূর্তে মনে পড়ছে একসময় ভাবতো জগতে অনিবার্য উপাদান তার মা। মার সাথে যেনো একটি নিঃশেষ অথবা অবিনশ্বর সম্পর্ক জুড়ে আছে বুকের গভীর থেকে। সেই মাও তাকে ছেড়ে চলে গেছে। ভাবতেও পারেনি এমন হবে। কিন্তু হয়েছে। তারপর ভেবেছে এখন কি মৃত্যুর দুয়ারে দাঁড়িয়ে বাঁচতে পারবে, যখন মা বেঁচে নেই? তবুও বেঁচেছে, বেঁচে আছে। নিজেকে, নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে দিনরাত লড়ছে জীবনের সাথে।

রশিদ রাফির তৃষ্ণাটা আরো বাড়তে থাকে। তার মনে হতে থাকে ফুসফুস দুটো ফেটে যাবে। তার হাতের কাছেই জলভরপুর দিঘী, সে পান করছে না। সে দেখছে ঢেউ উথলে উঠছে স্বচ্ছ সরোবরে। নিজেকে নিবৃত্ত রাখে পান থেকে। চোখের সামনেই বৃষ্টি ঝরছে অবিরাম, আজলা ভরে পান করতে ভুলে গেছে। তবুও তৃষ্ণাকে ভুলতে পারেনি। হঠাৎ মনে হয় মৌমিতাকে একটা ফোন করা দরকার। কী কথা মৌমিতার সাথে? নিজেকে প্রশ্ন করে? ভেতর থেকে কোনো উত্তর আসে না। আবারও ঝুঁকে পড়ে খাতার উপর। গুটি গুটি অক্ষরে লিখতে থাকে, ‘তুমি বলেছিলে/ বসন্ত আসলে আমাদের দরজাগুলো খুলে যাবে/ খুলে যাবে সমস্ত শৈশব/ কেটে যাবে অন্ধকার/ আমরা মুখোমুখি দাঁড়াবো তখন।’

ঠিক তখনই তার চোখের সামনে সুহানার মুখ ভেসে উঠে। দেখতে পায়, বেণি দুলিয়ে একপায়ে লাফিয়ে এক্কা দোক্কা খেলছে সুহানা। সুহানা, যার সাথে পরবর্তীতে প্রেম করেছিলো। আসলে জয়তুনের ফিরিয়ে দেয়ার পর থেকেই রাফি ভাবতে থাকে একটা প্রতিশোধ নেয়া দরকার। তাই সুহানার প্রেম প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়। দুজন দুজনকে দেখে হাসে। স্কুলের পথে গল্প করতে করতে পথ চলে। বইয়ের ভাঁজে গুঁজে দেয় ছন্দে লেখা প্রেমপত্র।

সুহানার বিয়ে হয়ে গিয়েছিলো নবম শ্রেণিতে পড়াকালীন সময়ে। সে বছরই রাফির মা মারা যান। একা হয়ে যায় রাফি। সেই থেকে সিগ্রেটে নিয়মিত সাথী হয়। আবার প্রেমকেই আরেকটা আশ্রয় করে। এবার তাহমিনার সাথে দেখা করার সিদ্ধান্ত নেয়। সন্ধ্যার অন্ধকারে ছাড়াবাড়িতে তাহমিনাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলো, তাকে ছাড়া বাঁচবে না।

তাহমিনা তাকে নিরাশ করলো। বললো, দেড়ি হয়ে গেছে। আমিই বলেছিলাম। তখন সাড়া পাইনি। এখন আমি অন্যজনের। রাফি ছেড়ে দিয়েছিলো তাহমিনাকে। তার ইচ্ছে হচ্ছিলো এমনিভাবেই দুনিয়াকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু পারেনি। বেঁচে উঠেছে। এ বেঁচে থাকার সময়গুলোতে তাকে অবলম্বন দিয়েছে সুমি। সুমির প্রস্তাবও ফিরিয়ে দিয়েছিলো জয়তুনের সাথে দেখা হওয়ার আগে। পরে ঘুরে ফিরে আবার তাদের প্রেম।

উচ্চমাধ্যমিকের প্রথম বর্ষে সুমির বাবা তার বিয়ে ঠিক করে। সুমি কেঁদে রাফিকে বলেছিলো কিছু একটা করতে। রাফির সেদিন কিছুই করার ছিলো না। নীরবে সরে এসেছে সুমির জীবন থেকে। নিজেকে একরকম লুকিয়ে চলে আসে কলেজ হোস্টেলে। তার কলমের খোঁচায় আরো লিখা হয়, ‘তোমাকে শোনাবো বলে/ নিজেকে নিয়োজিত করেছি কোকিল কাজে/ যেনো প্রত্যক্ষ রাত/ যেনো প্রত্যক্ষ দিন/ আমাদের দিনের মাসুল/ তারপর আরেকবার বেঁচে থাকা/ তোমাকে শোনাবো বলে/ নিজের ভেতরে বপন করেছি গল্প।

তারপর রাফির জীবনের খেরো খাতা লেখা নেই। পড়াশোনার পাশাপাশি মাদকের প্রতি আসক্তি বেড়ে যায়। একসময় মনে হয় আর কোনো দিন ছাড়তে পারবে না। শেষে ভাবে, ছাড়ার দরকার কী? স্নাতকোত্তর শেষে শুধু লেখালেখি করবে বলে স্থায়ী কোনো চাকুরিতে জড়ায়নি নিজেকে। জড়ায়নি নতুন কোনো প্রেমে। মৌমিতার ব্যাপারেও বন্ধু ছাড়া অন্যকিছু ভাবতে পারে না। কিন্তু আজ কেমন যেনো মন চাইছে মৌমিতাকে। যতই নিজেকে লেখার ভেতর ডুবিয়ে দিতে চাইছে ততই তার চোখের সামনে ভেসে উঠছে মৌমিতার ফোন কল।

খাতা একপাশে সরিয়ে রশিদ রাফি মুঠোফোন তুলে নেয়। মৌমিতা ফোন তোলে। বরাবরের মতো প্রশ্ন করে, খেয়েছো? রাফি জবাব দেয়, না, লিখছিলাম। অপর প্রান্ত থেকে একটি হাসির শব্দ খেলে যায়। রাফি অবাক হয়ে হাসি শুনতে থাকে। মৌমিতা বলে, কী হবে এতো লেখে? রাফি জবাব দিতে পারে না। চুপ করে থাকে। কিছুক্ষণ পরে আস্তে করে প্রশ্ন করে, কী করছো? মৌমিতা আবার হেসে উঠে। বাইরে তখন বসন্তের বাতাস দোল দিচ্ছিলো পরস্পরের গায়ে। রাফির ছোট্ট কক্ষের অন্ধকারে এসবের টের পাওয়া যায় না। নিজেকে যেভাবে নিষ্পেষণের ভেতর দিয়ে যেতে দিচ্ছে, মৌমিতাকে জীবনে জড়িয়ে শুধু শুধু দুঃখ বাড়ানো ছাড়া আর কিছু সম্ভব নয়। তাই মৌমিতার জবাবের অপেক্ষা না করে ফোন কেটে দেয়। তারপর মুঠোফোন সুইচ অফ করে একপাশে সরিয়ে রাখে। একবার ভাবে লিখবে। আবার ভাবে, নাহ, খাতাটাকেও সরিয়ে রাখে একপাশে।

ঘড়িতে সময় দেখে রাফি। রাত একটা বেজে পঁয়তাল্লিশ মিনিট। তৃষ্ণা এখন অসহ্য মাত্রায় চলে এসেছে। চারপাশে নিস্তব্ধ গুমোটতা। শুধু বসন্তের বাতাস ছোট্ট কক্ষের টিনের চালে মাঝে মাঝে মৃদু ঝাপটার পরশ দিয়ে যাচ্ছে। রাফির ঘরে থাকতে মন চাইলো না। বেরিয়ে পড়ে ঘর থেকে। হাঁটতে থাকে রেল লাইনের দিকে। হালকা একটা কুয়াশার চাদর জ্যোৎস্নাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। হালকা শীত শীত অনুভূতি হয়। হাঁটতে হাঁটতে রেল লাইনে চলে যায়। রেলপথ ধরে হাঁটতে থাকে। যেনো হাঁটছে যুগের পর যুগ। কাল থেকে মহাকালে, অপার নিঃসঙ্গ একাকী হাঁটছে। পথ যেনো শেষ হয় না। অনুভূতিগুলো নিঃশেষ হতে থাকে। একসময় পড়ে যায়। রেল লাইনে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকাকালীন সময়ে কখন যে সর্বস্ব গুড়িয়ে দিয়েছে দ্রুতগতির ট্রেন, তা হয়তো নিজেও জানে না।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫