লেওপোল্ড হেনরিক স্টাফ-এর কবিতা

ভাষান্তর : অনন্ত উজ্জ্বল
প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২১, ১৫:৩৪

পোলিশ কবি লেওপোল্ড হেনরিক স্টাফ ১৮৭৮ সালের ১৪ নভেম্বর তৎকালীন অস্ট্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত বর্তমান ইউক্রেনের রাজধানী লিবিব শহরে জন্মগ্রহণ করেন। বিশ শতকের শুরুর দিকে তিনি আধুনিক পোলিশ সাহিত্যের সব চেয়ে প্রভাবশালী এবং অন্যতম সেরা কবি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। চেক-জার্মান বংশোদ্ভূত লেওপোল্ড হেনরিক স্টাফের নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ‘ইয়াং পোল্যান্ড’ সাহিত্য আন্দোলনের নাম। স্টাফের নেতৃত্বে ‘ইয়াং পোল্যান্ড’ সাহিত্য আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পোল্যান্ডের সাহিত্য, চিত্রশিল্প এবং সংগীত আধুনিক সময়ে প্রবেশ করে। এই সময়ের বৈপ্লবিক কবিতা, গান ও চিত্রশিল্প- প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পোলিশদের জাতীয়বাদী চেতনার বিশেষ হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হয়েছিল। তিনি ‘ইয়াং পোল্যান্ড’ আন্দোলনের মাধ্যমে পোলিশ কবিতায় (classicism and szmbolism) এর ব্যবহারের সূচনা করেন। ‘ইয়াং পোল্যান্ড’ আন্দোলনের পরে লেওপোল্ড হেনরিক স্টাফ পরবর্তী সময়ের বিভিন্ন প্রজন্মের কবিদের সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন ইস্যুতে কবিতা আন্দোলন করেছেন। তিনি তরুণ কবিদের শিখিয়েছেন কবিতা লেখার নৈপুণ্য। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই তিনি তরুণ কবিদের শেখানোর পাশাপাশি তাদের কাছ থেকে অনেক বেশি শিখেছেন। স্টাফ ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে ‘সিম্পোজিয়াম’ শিরোনামে চমৎকার একটি সিরিজ প্রকাশ করেন। এই সময়ে তার অন্যান্য কাজের পাশাপাশি তিনি বিশদভাবে ফ্রেডরিক নিৎসে এবং সেন্ট ফ্রান্সিসের শ্রেষ্ঠ লেখাগুলো মূল লাতিন, ফ্রেন্স এবং জার্মান ভাষা থেকে পোলিশ ভাষায় অনুবাদ করেন। গদ্য-পদ্য এবং দর্শন সব মিলিয়ে এই সময়ে তার অনুবাদ কর্মের অর্জন অনেক। উল্লেখ্য, স্টাফ ফ্রেডর নিৎসের দর্শন দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বহু দার্শনিক কবিতা লিখেছেন। তিনি ক্রমাগত তার লেখার শৈলী, ধারা পরিবর্তন করেছেন। সেই দিক থেকে স্টাফের লেখাগুলোকে সময় বিবেচনা করে তিন ভাগে ভাগ করা যায় : ১৯১৮ সাল পর্যন্ত ‘ইয়াং পোল্যান্ড’ আন্দোলন, আন্তঃযুদ্ধকালীন কবিতা ১৯১৮ থেকে ১৯৩৯ এবং যুদ্ধোত্তর কবিতা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ থেকে পরবর্তী সময় পর্যন্ত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন তিনি আবার পূর্বের মতো জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তরুণদের মাঝে। তার কবিতার লাইন পঠিত হয় মুখে-মুখে। স্টাফের কবিতা পাঠ করে যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশের মানুষ আবার স্বপ্ন দেখে পুরনো গৌরব ফিরে পাওয়ার। সোচ্চার হয়ে ওঠে স্বাধীনতার জন্য। স্বাধীন ভূমি অর্জনের দীর্ঘ প্রত্যাশিত ন্যায্য দাবি আদায়ের আদর্শে সোচ্চার হয়ে ওঠে কবি, লেখক, বুদ্ধিজীবী থেকে সাধারণ মানুষ। এই সময় তার যে কোনো বক্তব্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তার লেখা কবিতাগুলো জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ তরুণদের দ্বারা পরিচালিত গোপন প্রকাশনী থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হতো। বাহারি গোঁফ-দাড়িতে সজ্জিত কবি লেওপোল্ড স্টাফ যুদ্ধোত্তর পোল্যান্ডে স্তালিনের শাসন শেষ হওয়ার কিছু দিন পরেই ৭৮ বছর বয়সে ১৯৫৭ সালের ৩১ মে মৃত্যুবরণ করেন। এখনো তার লেখা কবিতা পড়ে উজ্জীবিত হয় তরুণ কবি-লেখক, স্বাধীনতাকামী মানুষ। এখনো তিনি আছেন আগের মতোই জনপ্রিয়।
তিনটি শহর
ছোট তিনটি শহর,
শহরগুলো আসলেই খুব ছোট
সম্ভবত এগুলো একই শহরের অন্তর্ভুক্ত ছিল
শহরগুলো এখন আর কোনো মানচিত্রে নেই,
যুদ্ধে ধ্বংস হয়ে গেছে,
সেখানে মানুষেরা বাস করতো
যারা ছিল খুব পরিশ্রমী,
শান্তিকামী
ওহে নীরব নির্বিকার ভাইয়েরা!
কেন তোমরা কেউ সেই শহরগুলোর খোঁজ করছ না?
মানুষেরা কতটুকু গরিব?
সেই মানুষেরা কারা?
জিজ্ঞেস করলে
উত্তর মেলে না।
রেউনবৃক্ষ
তাহলে কি এবার শরৎকালে শীত বেশি পড়বে?
পকেটের মধ্যে হাত রেখেই
আমি সব পাল্টে দেবো,
আমার হাত ইতিমধ্যে গরম হয়ে উঠেছে।
দূর থেকে বসন্ত আমাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে,
বাতাস আরও ভালো খবর নিয়ে এসেছে,
আর রেউনবৃক্ষের গায়ে জ্বলছে দাউ দাউ আগুন
শিকড় থেকে ছিটকে পড়ার মনোবেদনায়।
সেতু
আমি বিশ্বাস করি না
নদীর তীরে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা
নদীটি চওড়া আর গতিশীল
সে কারণেই আমি ব্রিজের ওপর দিয়ে যাব!
হালকা রঙে রাঙানো,
দুর্বল নলখাগড়া সুতার দৃঢ় বন্ধন
আমি সূক্ষ্মভাবে তৈরি করেছি- প্রজাপতির মতো
আর হাতির মতো ভারি করে;
তাই আমি নিশ্চিতে হেঁটে যাই নৃত্যশিল্পীর ঢঙ্গে
এবং তরঙ্গায়িত হই অন্ধের মতো
আমি বিশ্বাস করি না,
আমি সেতুটি পার হব
তাই এখনো আমি সেতুর এই পাশে দাঁড়িয়ে আছি
আমি বিশ্বাস করি না
আমি সেতু পার হচ্ছি।