Logo
×

Follow Us

শিল্প-সাহিত্য

আমার অসুখ ও আরোগ্য

Icon

পিয়াস মজিদ

প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০১৯, ১০:০৭

আমার অসুখ ও আরোগ্য

প্রতীকী ছবি।

ঘাসের ঘণ্টা; বেজে গেছে সময়সবুজ। 

জীবন মানে ট্রাঙ্ক আর ট্রাম 

ট্রাঙ্কভর্তি অবহেলিত গদ্য 

আর ট্রামের তলায় 

কাটাপড়া কবিতা, প্রার্থিত রক্তজ্ঞান। 

গদ্য দিয়ে ঘেরাও করা কবিতা 

নাকি কবিতা দিয়ে গদ্য 

এমন দ্বিধাথড়থড় পাতালে এসে ঢুকে  

প্রয়াত হেমন্তের গেরুয়া বাতাস। 

প্রজাতন্ত্র, রাজধর্ম- সব ফণা তুলে 

কাননে কুসুমে। 

তবু ভোর হয়, বরিশাল। 

বগুড়া রোডের অবশিষ্ট থাম ; 

বেলস্ পার্ক, অক্সফোর্ড মিশন, রক্তমুখী গির্জা 

সুসমাচার, কালপুরুষের উক্তি 

ধেয়ে আসে বাংলা কবিতার গায়ে। 

চিত্ররূপময় চোরাটানে কেন তুমি তাকে চাইছো এড়াতে?  

সময়ের কাছে সাক্ষ্য দিয়ে চলে যেতে হয় 

সময় অসময় দুঃসময় মহাসময় 

মন ও মাঠের সমরে দ্বন্দ্বমধুর 

হোগলা-হরিতকী-হিজলের বন। 

তোমাদের কাব্যব্যাকরণ আর নন্দনের সমীপে 

আমার উপহার চিত্রাহরিণের বদলে 

কয়েকটি ইঁদুর এবার। 

নিঃসুর সকালে ঝরাপালকের পাহাড় 

বিরহী বাদামদানা আর অবিরত বেজে যাওয়া 

প্রেমের পিয়ানো 

হৃদয়ে প্রেমের শীর্ষ 

আর শীর্ষসুখ মড়চে পড়া পেরেকের প্রায়। 

সফলতা নিষ্ফলতার বিভায় 

মাল্যবান ঘুমোতে যায়।

উৎপলা ঘুরে বেড়ায় ব্রাহ্মমন্দিরের বারান্দায় 

বাংলার ত্রস্ত নীলিমার নিচে 

মিরুজিন নদীর নীরে 

১/২ ব্যবিলন রোডে 

কিংবা মহাপৃথিবীর মহল্লায় পেতে রাখা  

জলের বিছানায় বাস করে চির-বহ্নিমান বনলতা সেন। 

তারা ও তিমিরে সমান উজ্জ্বল এই বেঁচে থাকা, 

মৃত্যুরঙিন আনন্দ উৎসবে।

স্বর্গের সৈকতে আমাদের অভিমুখ 

তবু আছে একজন যার জন্য 

নরকের নির্বচন মেঘ 

প্রেমরিক্ত পৃথিবীতে বেছে নেয়া 

ঘৃণার অবিরাম অঞ্জলি 

হায় প্রেম অশেষ বিশেষ! 

এই বেঁচে থাকা 

এমন কি বালতি বালতি জল টানা 

খরা-ভরপুর ডাঙায় 

রক্তমাংস ব্যর্থ দেহে 

প্রতিপন্ন করে যাওয়া 

এতটুকু মাছের কাঁটার সফলতা

এ জীবন কবিতার কথা নয় শুধু 

এ জীবন সজনীকান্ত- সমারূঢ়ও 

কোথায় কোথায় কবির বন্দর 

বাগেরহাট-রামযশ-দিল্লি 

না দূরের ঐ মিরুজিন নদী

অবরুদ্ধ অশ্রুর অক্ষরে লেখা 

দিনপঞ্জির পৃষ্ঠা; শচী, ওয়াই- 

নিরঞ্জন দাম্পত্যে ঘাই হরিণীর হামলা 

জাহাজ ছাড়ল- গন্তব্য 

রমানাথ মজুমদার স্ট্রিট, মেসবাড়ি

রাসবিহারীর মোড়, শম্ভুনাথ হাসপাতাল 

কোন পথে যায় লিবিয়ার জঙ্গল 

যখন সব পথই জঙ্গলের প্রায় 

অর্থকীর্তি, স্বচ্ছলতা, মশারি মিলেমিশে 

রুক্ষ করুণ সবুজ ডাঙায় 

ক্ষমাহীন বিরুদ্ধতার জলঢেউ 

ঘুরে ঘুরে একা কথা বলার কে আছে-

মুদ্রাদোষে আলাদা হওয়া যেখানে এক প্রবল মুদ্রা 

তখন কোথায় যাবে কুসুমকুমারীর ছেলে! 

লাবণ্য ঢাকার মেয়ে 

আইরিশ বিপ্লবের বই পড়ে 

দাশের মনের বিপ্লব থেকে যায় অপাঠ্য 

বিপ্লবী ভালোবাসে সোনাদানা তার, ব্যাংকের লকার 

ক্ষুধা প্রেম আগুন জ্বলছে 

বছর কুড়ি আর বছর কোটি... 

আগুনের অরণ্য থেকে বায়ুমর্মর 

কোথাও অবশিষ্ট নেই শুশ্রুষা কোনো 

সুচেতনা, অদ্ভুত আঁধার, ঘাসের হৃদয়- 

সব এই শীতে 

কমলালেবুর কোয়ার মতো 

মায়াবী হলুদে মিশে যেতে আছে 

আমাদের আসন্ন মৃত্যুর মিনারে মিনারে।

লুপ্ত রাণিগণের ঘাড়ে শুয়ে থাকে 

এই সময় ও জীবনানন্দ 

নামের কুহক-থিসিস 

বুদ্ধিভারী সমালোচক খুঁজে ক্লান্ত 

কোথায় কোথায় কবিমশায় কোথায়! 

ঘোড়ার হ্রেষায়, ফড়িঙের পাখনায়,

শিশিরের শ্বাসমহলে 

ততক্ষণে একটু হেঁটে আসে কবি।

তোমাদের এই ভোরের বন্দনায় 

যার গতি ও গন্তব্য 

লাশকাটা ঘরের গোধূলি। 

সমুদ্র কতটা সফেন হলে 

ঘনীভূত খুনের রক্ত 

মুছে যেতে থাকে 

বরিশাল থেকে শম্ভুনাথ 

বাগেরহাট থেকে ব্যবিলন।

মর্মে নিহিত বিলয়ের কারুকাজে 

শতবর্ষ, কীর্তিস্মারক, জয়স্তম্ভ চুরমার।  

অন্ধকারের অফুরান ঝনৎকারে 

অদ্ভুত আলো এক এসেছে আজ 

জীবনানন্দ দাশ;  

অনির্বচন অসুখ ও আরোগ্য আমার।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫