Logo
×

Follow Us

শিল্প-সাহিত্য

লুইস ক্যারল

ছোটদের প্রিয় লেখক

Icon

সুদেষ্ণা ঘোষ

প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২০২২, ১৬:০৯

ছোটদের প্রিয় লেখক

লুইস ক্যারল

১৮৬৫ সালে লন্ডনের নামকরা পাবলিশিং হাউস থেকে বিখ্যাত কার্টুনিস্ট-ইলাস্ট্রেটর জন টেনিয়েলের আঁকায় বের হয় ‘অ্যালিস’স অ্যাডভেঞ্চারস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড’। বইটির লেখক নাম হিসেবে ‘লুইস ক্যারল’ ছদ্মনামটি ব্যবহার করেন। বইটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে এতটাই জনপ্রিয়তা পায়, যে কারণে লেখকের মূল নামটি ‘চার্লস লুডউইগ ডজসন’ তা আর কেউ মনে রাখেনি।

আজও সারা দুনিয়ার শিশু-কিশোরেরা এই নামেই জানেন তাঁকে। লুইস এই উপন্যাসটি লিখেছিলেন তাঁর এক ছোট্ট বন্ধুর অনুরোধে। কে ছিলেন লুইসের মতো অত বড় মানুষের বন্ধু-তা এবারে জেনে নেওয়া দরকার। লুইস শিশুদের ভালোবাসতেন, শিশুদের সঙ্গে খেলতেন। শিশুদের নিয়ে ট্রেনে করে ঘুরে বেড়াতেন। পকেটে রাখতেন শিশুদের জন্য চকোলেট আর পাজল খেলনা। শিশুরা ছিল লুইসপ্রিয়। এই উপন্যাসের শুরুটা হয়েছিল ৬৫ সালের বছর কয়েক আগে কোনো এক জুলাই মাসে।

কলেজের ডিনের ছিল তিন মেয়ে। লোরিনা, অ্যালিস আর এডিথ লিডল। এরা বাড়ি থেকে পিকনিকে যাওয়ার অনুমতি পেয়েছিল তাদের পছন্দের বন্ধু এবং খেলার সঙ্গী অধ্যাপক চার্লস লুডউইগ ডজসনের সঙ্গে। ছোটদের সঙ্গে সময় কাটাতে ভালোবাসতেন বলে অধ্যাপক ছোটদের গল্প শোনাতেন। মজার ছড়াও বানাতেন ওদের জন্য। সেদিন আইসিস নদীতে নৌকা চালাচ্ছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিল ডিনের এই তিন কন্যা।

মেজো মেয়ে অ্যালিস ছিল অধ্যাপকের অতিপ্রিয়। সে আবদার ধরলো তাকে গল্প শোনাতে হবে। সেদিনের পিকনিকে অধ্যাপক একটি গল্প বলেছিলেন মুখে মুখেই ছোট্ট বন্ধুদের আবদার রাখতে; কিন্তু যখন তাঁর গল্প বলা শেষ হলো, তখনো ছোট্ট বন্ধুদের ভালো লাগার আবেশ কিছুতেই শেষ হয় না যেন। ফের দশ বছরের অ্যালিস বায়না ধরলো তাকে গল্পটি লিখে দিতে হবে। তারপর ১৮৬৪ সালে বড় দিনের উপহার হিসেবে অধ্যাপক নিজের হাতে আরও সাজিয়ে গুছিয়ে লিখলেন গল্পটি, আঁকলেন পাতায় পাতায় অদ্ভুত সুন্দর সমস্ত ছবি। শেষে তাঁর নিজের ক্যামেরায় তোলা অ্যালিসের একটি ছবিও যোগ করেন। সবুজ চামড়ায় বাঁধানো, ছবিতে ভরা, হাতে লেখা এক আশ্চর্য সুন্দর বই- ‘অ্যালিস’স অ্যাডভেঞ্চারস আন্ডারগ্রাউন্ড’। এরপরের গল্প সকলেরই জানা, লেখকের নাম বদলালো, লেখক হয়ে উঠলো আরও সুতিক্ষ্ণ তাঁর লেখনীতে। যদিও মুদ্রিত আকারে প্রকাশের সময় লেখক গল্পে কিছুটা পরিবর্তন আনেন। বইয়ের প্রচ্ছদশিল্পী, ইলাস্ট্রেটর আর নিজে থাকেননি। বইয়ের নামও পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘অ্যালিস’স অ্যাডভেঞ্চারস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড’।

বিশ্বশিশু সাহিত্যের এক মুকুটহীন রূপকার লুইস ক্যারল। তাঁর শিশুসাহিত্য সারাপৃথিবীর শিশু-কিশোরদের নিকট আজও এতটাই জনপ্রিয় যে তা ভাবনার জগৎ ছাড়িয়ে যায়। ক্যারলের গল্পে ছোটরা যত বেশি স্বপ্ন বুনতে পারে আর কারও গল্পে এতটা দেখা যায়নি। ভয় না দেখিয়ে শিশুদের মজার জগতে প্রবেশ করানোতে ওস্তাদ লেখক ছিলেন তিনি। শিশুর মনের মধ্যের কল্পনার জগতকে জাগিয়ে তুলতে তাঁর রচনা আজও অদ্বিতীয়। ২৭ জানুয়ারি ১৮৩২ সালে তিনি ইংল্যান্ডের চেশায়ার কাউন্টির ডেরসবেরিতে জন্মগ্রহণ করেন। পারিবারিক নাম ছিল চার্লস লুডউইগ ডজসন।

লুইস ভাই-বোনদের মধ্যে তৃতীয় ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই ভাইবোনদের সঙ্গে ছিল তাঁর দারুণ বন্ধুত্ব। বিশেষত বড় বোন ও ছোট বোনের সঙ্গে তার নিবিড় বন্ধুত্ব ছিল। লুইসের পরিবার ছিল অভিজাত, যে কারণে ছিল নিয়মের কঠোরতা। আর পূর্বপুরুষরা অধিকাংশই ছিলেন হয় আর্মি অফিসার নয়তো চার্চের বিশপ। নীতিবোধের মধ্যে থেকেও তিনি গড়ে তোলেন নিজের ভাবনার জগতকে। ছোটবেলায় তিনি অসুস্থ হন। কানে কম শুনতেন, তাঁর ছিল তোতলামির অভ্যাস। ১৪ বছর বয়সে যে স্কুলে ভর্তি হন, সেখানকার পরিবেশ তাঁর পছন্দ হয়নি। তবে কিশোর লুইস বরাবরই রেজাল্ট ভালো করতেন। অঙ্কে ছিল দারুণ নেশা। খুব অল্প সময়ে শিক্ষকদের তিনি মুগ্ধ করেছিলেন। এর বাইরে তাঁর সাহিত্যের প্রতি ঝোঁক জন্মে এ সময়। বাড়ির ভাই-বোনদের জন্য তিনি গল্প আর কবিতা লিখতেন। অদ্ভুত সব চিন্তা করতেন এ বয়সেই তিনি। তাঁর চিন্তার খোরাকের দেখা মেলে ভাই-বোনদের সঙ্গে মিলে বের করা বাড়ির পত্রিকার পাতায় পাতায়। তিনি ভালো গান করতে পারতেন, গল্প বলতেন। অন্যের কথা নকল করায়ও ছিলেন একবারে দক্ষ।

লুইস ১৮৫১ সালে জুনিয়র স্কুল পর্যায় সম্পন্ন করেন। এরপর অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রাইস্ট চার্চ কলেজে ভর্তি হন। ওই বছরই তাঁর মা মারা যান। ১৮৫৪ সালে অঙ্কে ফার্স্ট ক্লাস পেয়ে লুইস গ্র্যাজুয়েট হন। শিক্ষাজীবন শেষে তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রাইস্ট চার্চ কলেজে লেকচারার হিসেবে যোগ দেন। তারপর ২৬ বছর এখানেই শিক্ষকতা করেন। ১৮৮১ সালে অবসর নেন। এরপর ১৮৮২ সাল থেকে ১৮৯২ সালঅব্দি হেনরি লিডেল ক্রাইস্ট চার্চ কলেজের কিউরেটর ছিলেন। এর মধ্যে লুইস ১৮৬১ সালে অক্সফোর্ডের একটি গির্জার যাজক নিযুক্ত হয়েছিলেন। 

লুইস ছিলেন ছোটদের প্রিয়জন। ছোটরা তাঁকে যেমন ভালোবাসতো, ছোটদেরও ভালোবাসতেন লুইস। খুব অল্প সময়ে সদ্য পরিচিত হওয়া কোনো শিশুর বন্ধু হওয়ার এক বিশেষ গুণ ছিল গণিতজ্ঞ, কবি, আবিষ্কারক, প্রাবন্ধিক, যাজক এবং শখের আলোকচিত্র শিল্পী সকলের প্রিয় ক্যারলের। তাঁর অমর রচনা শিশুদের জন্য এক নতুন স্বপ্নের দিগন্ত উন্মোচন করে রেখেছে সেই ১৮৬৫ সাল থেকে। লুইস তাঁর বন্ধুদের চিঠি লিখতেন। তাঁর ডায়েরির ১৩টি খ- পাওয়া যায়। মৃত্যুর ৩৭ বছর আগে থেকে তিনি যত চিঠি লিখেছেন, সব নথিভুক্ত করে রেখেছিলেন। সেই রেজিস্টারের ২৪টি খণ্ড ছিল এবং সেখানে ৯৮,৭২১টি চিঠির হিসেব পাওয়া যায়।

পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় তাঁর লেখা প্রকাশ পেয়েছে। শব্দ নিয়ে বুদ্ধিদীপ্ত রচনা তৈরি আর হাস্যরস করা এই চিরশিশু ১৮৯৮ সালে তাঁর বোনের বাড়ি ‘দ্য চেস্টনাট’-এ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫