‘মানুষের মনে জসীম উদ্দীন জাতীয় কবি হিসেবেই আছেন’

নাজমুল মাতুব্বর
প্রকাশ: ০৫ জানুয়ারি ২০২০, ১৭:৪৯

মানুষের মনের মধ্যে জসীম উদ্দীন জাতীয় কবি হিসেবেই আছেন বলে মন্তব্য করেছেন চিন্তাবিদ অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান।
তিনি বলেন, কবিতা ছাড়াও আরো অনেক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন কবি জসীম উদ্দীন। এর মধ্যে অন্যতম হলো জারিগান। এছাড়া ময়মনসিংহের প্রত্যন্ত এলাকা ঘুরে ঘুরে তিনি অসংখ্য গানও সংগ্রহ করেন। শুধু ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’, ‘নকশি কাঁথার মাঠ’ বা ‘রাখালী’ নয়, জাতীয়তাবাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাংলার জারিগানের মর্মও অনুধাবন করতে পেরেছিলেন এ কবি। সেই জায়গা থেকে তাকে আমাদের জাতীয় কবিও বলা যায়।
শনিবার (৪ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে জসীম উদ্দীনের জন্মদিন উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এভাবেই কবিকে মূল্যায়ন করেন অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান। ‘বাংলা ও বাঙালির কবি’ শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করে শিল্প-সাহিত্যের কাগজ ‘কালের ধ্বনি’।
অনুষ্ঠানে জসীম উদ্দীনকে নিয়ে আরো আলোচনা করেন- জাতীয় জাদুঘরের সাবেক মহাপরিচালক, সাহিত্যিক ও গবেষক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী, সাংবাদিক কাজল রশীদ শাহীন ও প্রাবন্ধিক কুদরত-ই-হুদা। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন- কালের ধ্বনির সম্পাদক ইমরান মাহফুজ।
প্রাবন্ধিক কুদরত-ই-হুদা তার প্রবন্ধকে তিনটি ভাগে উপস্থাপন করেন। প্রথমত, জসীম উদ্দীনের প্রথম জীবনের সংগ্রাম নিয়ে তিনি বলেন, ঢাকা থেকে কলকাতায় যখন জসীম উদ্দীন যান তখন তিনি রবীন্দ্র ঘরানার কিছু কবিতা নিয়ে যান। যা পড়ে কাজী নজরুল ইসলাম খুবই উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। পরবর্তীতে কবিতাগুলো প্রবাসী এবং মোসলেম ভারতী পত্রিকায় ছাপা হয়। এরপরে তিনি নিয়ে গেলেন গ্রাম্য গানের সংগ্রহ এবং নিজের স্টাইলে লেখা কিছু কবিতা। কিন্তু, এই কবিতাগুলো কোনো পত্রিকায় ছাপা হয়নি। কারণ কবিতাগুলো ছিলো পল্লী জীবন ও পল্লী সংস্কৃতি নিয়ে।
সোজন বাদিয়ার ঘাট প্রকাশের পরে বইটি প্রায় অবিক্রিতই থেকে যায়। অন্যদিকে এই বই নিয়ে দীনেশচন্দ্র সেন ৭/৮ পৃষ্টার রিভিউ লেখার পরে কবি বলেন, এমন দিনও গেছে যে দিনে ৫০ কপির উপরে বিক্রি হয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন লেখকদের কাছ থেকে অনেক সমালোচনা শুনতে হয়েছে কবিকে।
দ্বিতীয়ত, জসীম উদ্দীন গানের লোক। তিনি নিজেই বলতেন, আমি কবিয়াল হতে চেয়েছিলাম কবি হতে চাইনি। এ ব্যাপারে হেমাঙ্গ বিশ্বাস বলেন, জসীম উদ্দীন পদ্মা পাড়ের গানের মুর্শিদ। আব্বাসউদ্দীনকে গান শেখাতেন জসীম উদ্দীন। তিনি বালিশ-কাথা নিয়ে ঘুরতেন আর গ্রামে গ্রামে গান সংগ্রহ করতেন।
তৃতীয়ত, কবির হাসির গল্প। জসীম উদ্দীন দুই খণ্ডে হাসির গল্প লিখেছিলেন। যেগুলো এখন অনেকটাই আড়ালে। গল্পের বিষয় ছিলো- অশিক্ষিত জেলে, তাঁত, মজুর, নাপিত ও কৃষক। প্রাবন্ধিক কুদরত-ই-হুদার মতে, গল্পগুলো গ্রাম বাংলার প্রান্তিক শ্রেণীর মানুষের বলেই হয়তো তা আজ হারিয়ে যেতে বসেছে।
আলোচনায় সাহিত্যিক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী বলেন, জসীম উদ্দীনই প্রথম ব্যক্তি, যিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
তিনি জানান, জাতীয় জাদুঘরের উদ্যোগে ফরিদপুরে কবির বসতভিটার পাশে তার নামে একটি জাদুঘর তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে তাকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্মরণের কাজ করা হয়েছে। আমরা আশা করি গবেষণার মাধ্যমে কবিকে আমরা আরো ভালোভাবে জানতে পারবো।
সাংবাদিক কাজল রশীদ শাহীন বলেন, পল্লীকবি জসীম উদ্দীনকে মূল্যায়নে এখনো সমস্যা ও সংকট রয়েছে। আমরা যতোদিন না প্রকৃত বাঙালি হতে পারবো ততোদিন তার প্রকৃত মূল্যায়ন হবে না। এই কবিকে আমাদের বর্তমান প্রজন্মের যেভাবে চেনার কথা ছিলো সেভাবে চেনে না। অথচ তিনি তার কাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে সোনালী আলো ফেলে রেখে গেছেন। তিনি আমাদের শেকড়ের সন্ধান দিয়েছেন।