Logo
×

Follow Us

শিল্প-সাহিত্য

৭০ বছরেও স্বীকৃতি পেলেন না চারণকবি শামসুদ্দিন

Icon

বাগেরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৬:১১

৭০ বছরেও স্বীকৃতি পেলেন না চারণকবি শামসুদ্দিন

ছবিতে চারণকবি শেখ শামসুদ্দিন গেট। ছবি: সাম্প্রতিক দেশকাল

রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন করিলি, ও বাঙ্গালীরে ভাইরে/ ঢাকার শহর রক্তে ভাসাইলি…/ রাষ্ট্রভাষা বাংলা হবে…। এই গানের রচয়িতা চারণকবি শেখ শামসুদ্দিন। ভাষা আন্দোলনের সময় গানটি নিজ গলায় গেয়ে ছাত্র-জনতাকে প্রেরণা জোগাতেন তিনি। এটি ভাষা সংগ্রাম নিয়ে লেখা প্রথম গান। ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছর পেরিয়ে গেলেও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেলেন না কবি শামসুদ্দিন।

কবিকে তার প্রাপ্য সম্মান দেওয়ার দাবি জানিয়েছে পরিবার ও এলাকাবাসী। তবে কবিকে মরণোত্তর রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে জানান বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক।

বায়ান্নোর একুশে ফেব্রুয়ারি রাতে ভাষা শহীদদের স্মরণে কবি শেখ শামসুদ্দিন ওই গানটি রচনা করেন। কবির এই গানে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন বাংলার দামালরা। তার এ গান সেসময় বেশ জনপ্রিয়তা পায়। স্বল্প সময়ের মধ্যে মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের সময়ও গানটি মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে ।

১৯১৫ সালে বর্তমান বাগেরহাট জেলার সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামে এক কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন চারণকবি শামসুদ্দিন। উপজেলার বাগেরহাট টাউন স্কুলে (বর্তমান বাগেরহাট বহুমুখী কলেজিয়েট স্কুল) অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেন তিনি। অর্থ সংকটের কারণে তার উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ হয়নি।

কবির দুই ছেলে ও এক মেয়ে। দারিদ্রতার কারণে শামসুদ্দিনের ছেলেমেয়েরাও পড়ালেখা করতে পারেননি। এর মধ্যে মেয়ে লাইলি বেগম মারা গেছেন বছর খানেক আগে। ছোট ছেলে মুকুল শেখ ঢাকায় চাকরি করেন। শামসুদ্দিনের বড় ছেলে শেখ দেলোয়ার হোসেন খোকন বাড়িতেই থাকেন। তিনি বলেন, আমার বাবা হাটবাজারে ফেরি করে বিভিন্ন জিনিসপত্র বিক্রি করতেন। একই সাথে গান লিখতেন। ভাষা আন্দোলন নিয়েও তিনি গান লিখেছিলেন। গানগুলো জনপ্রিয়তাও পায়। তবু তিনি রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি পাননি।

কবিকে অন্তত মরণোত্তর সম্মাননা প্রদানের জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানান তার বড় ছেলে।

কবির লেখা ‘রাষ্ট্রভাষা’ গানের অবদানের কথা উল্লেখ করে আব্দুস সালাম নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা তাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দেয়ার দাবি জানান।

বেমরতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন টগর বলেন, স্থানীয়ভাবে কবির সম্মানে তার কবরটা বাধানো হয়েছে। তার নামে ইউনিয়ন পরিষদে একটি পাঠাগার নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কবি রাষ্টীয় স্বীকৃতি পাননি। কবিকে মরনোত্তর রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদানের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান এই জন প্রতিনিধি।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, ভাষা আন্দোলনের সময় চারণকবি শেখ শামসুদ্দিন নিজের গানের মাধ্যমে বাংলা দামালদের প্রেরণা জুগিয়েছেন। তাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য জেলা প্রশাসন সব রকমের চেষ্টা করবে। কবির পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন তিনি।

১৯৭৪ সালে চারণকবি শেখ শামসুদ্দিন মারা যান। বাগেরহাট-পিরোজপুর সড়কের পাশে নিজ গ্রাম ফতেহপুরে চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন তিনি।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫