Logo
×

Follow Us

শিল্প-সাহিত্য

তিন নারী

Icon

অভিজিৎ সেন

প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২২, ১৫:০১

তিন নারী

প্রতীকী ছবি

নৌকার ভেতরে অন্তত একশ’ মানুষ আছে। কেউ গোনেনি, একশ’ পঁচিশ জনও হতে পারে। এত লোক এই মাপের নৌকায় চলাচল করা বিপজ্জনক। তবুও ক’দিন ধরে নানা ঘাট থেকে রামের ঘাটে লোক যাচ্ছে প্রচুর। রাঢ়ের প্রখর রোদ এবং দমবন্ধ করা গরম উপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষ রামচন্দ্রপুরে রঘুনাথের কাছে আগাম কবুল করা মানত রাখতে, পূজা দিতে, রঘুনাথের মেলায় কিছু কেনাবেচা করবে বলে, নিছক মানুষের ভিড়ে মিশে মেলা দেখবে বলে যাচ্ছে। ভটভটিতে যাতায়াত হয় বলে আজকাল আর আগের মতো সময় লাগে না। জেলা নদীয়া, গ্রামের নাম রামচন্দ্রপুর, বিগ্রহের নাম রঘুনাথ। বাৎসরিক পূজা ও মেলা হয় রামজবসীতে। মানুষ রঘুনাথের কাছে মানত করে অঙ্গহানির আশঙ্কায়, বিশেষ করে চোখের অসুখে বা চোখ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায়। 

নৌকায় সুমিত্রা আছে। সঙ্গে একজন সহচরীও আছে তার। তার নাম জবা। তারা কাটোয়া এসেছিল তিন দিন আগে। এই তিন দিন কাটোয়ার বৈষ্ণব পাট ঘুরে ঘুরে দেখেছে তারা। রাতে আশ্রয় নিয়েছে কোনোদিন গৌরাঙ্গ আশ্রমে। কোনো দিন মাধাইতলার আশ্রমের প্রশান্ত শান বাঁধানো চত্বরে। পবিত্র বৈষ্ণত তীর্থ দেখে, কীর্তন শুনে এবং মহাজনদের চরণধুঠিপত ভূমিতে সর্বাঙ্গ গড়িয়ে ভারি শান্ত হয়েছে সুমিত্রার মন। এখন বাকি আছে রঘুনাথের মন্দিরে মানতের পূজা দেওয়া। সুমিত্রার বিশ বছরের মেয়ে নির্মলা আজ বছর তিনেক হলো চোখের অসুখে ভুগছে। বাঁ দিকের চোখটির অবস্থা খুবই খারাপ। ডাক্তার দেখিয়েছে দু-তিন বার। ডাক্তার এখনো বলেননি যে, চোখটা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাবে, তবে ভালো করে চিকিৎসা করার কথা বারবার বলেছেন। কেউ আবার বলেছে এখানে চিকিৎসা হবে, না হাতি হবে! সময় থাকতে মাদ্রাজ যাও। সেখানকার নেত্রালয়ে যা ভালো ব্যবস্থা আর যা বড় বড় ডাক্তার, তাতে সারতে সাত দিনের জায়গায় দশ দিন লাগবে না। সেখানকার ডাক্তাররা সাক্ষাৎ ধন্বন্তরি!

নবদ্বীপের যে পাড়ায় সুমিত্রা থাকে, বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে তার অনেক পার্থক্য আছে। বাইরের পৃথিবীর মানুষ সবাই থাকে সংসারে। সুমিত্রারা থাকে সংসারের বাইরে। সংসারের মানুষ প্রয়োজনে হরদম যেখানে আসে; কিন্তু সুমিত্রাদের কখনো সংসারে ঢোকার ইচ্ছা থাকলেও সুযোগ হয় না। এমন নিয়মই নেই। 

সে পাড়ার নিয়মিত আছে এমন একজন যুবক সুমিত্রাকে প্রস্তাব দিয়েছিল যে নির্মলাকে নিয়ে গিয়ে সে নেত্রালয়ে থেকে চোখ ভালো করিয়ে নিয়ে আসবে। যাতায়াত দু’জনের ভাড়া ধর পাঁচ হাজার টাকা। আর ডাক্তার হোটেল বাবদ ওখানকার খরচ ধর বিশ হাজার টাকা। এই মোট পঁচিশ হাজার টাকার ব্যবস্থা যদি সুমিত্রা করতে পারে, তাহলে নির্মলাকে নিয়ে সে চিকিৎসা করিয়ে নিয়ে আসতে পারে। 

সুমিত্রা রাজি হয়নি। প্রথমত, এত টাকা শুধু একটা অনির্দিষ্ট সম্ভাবনার লক্ষ্যে খরচ করার মতো তার অবস্থা নয়। তার চেয়েও বড় কথা, ওই লোকটিকে বিশ্বাস করার কোনো কারণ আছে? মেয়েটাকে সে যে কোথাও নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দিয়ে আসবে না তার কী স্থিরতা আছে?

বাইশ বছর আগে সুমিত্রা নিজেও এইভাবেই নবদ্বীপের এই মেয়ে মানুষদের পাড়ায় এসে হাজির হয়েছিল। একজন পুরুষ তাকে পাগল করেছিল। ভারি রূপবান ছিল সেই পুরুষ মানুষটি। সে তাকে ঘরের বাইরে এনেছিল। কিছু মিথ্যা প্রলোভন সে অবশ্যই সুমিত্রাকে দেখিয়েছিল সেই প্রথম পর্বে; কিন্তু সব থেকে সত্য যে ব্যাপারটা ছিল, তা হলো সেই মানুষটির রূপ। এ কথা সুমিত্রা কোনো দিনই অস্বীকার করতে পারবে না। সে কি জানত না যে, এই সব প্রতিশ্রুতি মিথ্যা? 

অবশেষে নবদ্বীপের মেয়ে মানুষদের পাড়ায় এসে তার ঠাঁই হয়েছিল। না, সে কাউকে দোষী করে না, সেই পুরুষটিকেও নয়। সেই প্রথম বয়সে সে যে পাগল হয়ে গিয়েছিল তা তো আর মিথ্যা নয়। বছর তিনেক তার সঙ্গে সে ঘর করেছিল স্বামী-স্ত্রী হয়ে। হ্যাঁ, দেবতাকে সাক্ষী করে তাদের বিয়েও হয়েছিল মন্দিরে। পুরোহিত আর দেবতার সামনে তার স্বামী তাকে সিঁদুর পরিয়েছিল। 

এই তিন বছর সুমিত্রা অবিমিশ্র সুখে কাটায়নি। তার স্বামী নবীন চন্দ্র মুখোপাধ্যায় নবদ্বীপের একটি গরিব পাড়ার একখানা কোঠার বাসা ভাড়া করেছিল। প্রতি দশ-পনেরো দিনে সে একবার কাটোয়া না কান্দি কোথায় যেন তার নিজের বাড়ি, সেখানে চলে যেত। বাড়িতে নাকি তার দায়-দায়িত্ব অনেক ছিল। কখনো কখনো যাওয়ার সময় সে সুমিত্রার হাতে পঞ্চাশ টাকা, একশ’ টাকা দিয়েও যেত; কিন্তু তাকে ঘর ভাড়া দিয়ে যে ভরণপোষণ সম্ভব নয়, তা বুঝত সুমিত্রা। এ কারণেও নবীন চন্দ্রকে দায়ী করেনি। বস্তুত বিয়ে করার জন্য সে-ই বেশি পাগল হয়েছিল। বর্ধমান শহরের দরিদ্র পাড়ার তার বাবার একটা মুদি দোকান ছিল। সামান্যই আয় হতো সেই দোকান থেকে। সেই আয়ে তাদের চার ভাইবোন একজন বিধবা পিসি এবং ঠাকুমা, এই আটজনের গ্রাসাচ্ছাদন চালাতে হিমসিম খেত তার বাবা-মা। 

নবীন সে সময়ে তাদের বাড়ির কাছেই একটা মেস বাড়িতে বোর্ডার ছিল। কী একটা পড়াশোনা, নাকি ট্রেনিং নেওয়ার জন্য সে বর্ধমানে থাকত। 

বাবার অনুপস্থিতিতে তারা ভাইবোনেরা কখন কখনো দোকানে বসত। সুমিত্রা চার ভাইবোনের মধ্যে বড়। বাবার অনুপস্থিতিতে তাকেই বেশি সময় দোকানে বসতে হতো। দোকানে বসা অল্প বয়স থেকেই সুমিত্রার কাছে বিরক্তিকর ছিল। একটু বড় হতেই সে বুঝতে পেরেছিল যে সে দোকানে বসলে দোকানের বিক্রি অপেক্ষাকৃত বেশি হতো। দোকানে ভিড় বাড়ত। যারা ভিড় করত, তাদের মধ্যে অনেকেই প্রকৃতপক্ষে ক্রেতা ছিল না। সওদা নেওয়া বা পয়সা দেওয়ার ছলে গায়ে-হতে একটু স্পর্শ পাওয়ার অভিলাষে যে পুরুষ মানুষের কী লাভ হয়, তা সে বুঝতে পারত না। কখনো কখনো সেই অভিলাষ শিষ্টতার সীমা ছাড়িয়ে যেত। মা বলত, মেয়ে মানুষকে সারাজীবন কৌশল করে আত্মরক্ষা করতে হয়। তুচ্ছ ব্যাপার একটু ছোঁয়া-ছানি গায়ে মাখবি না, সীমা ছাড়ালে ফনা তুলে ফোঁস করবি। এতেই নিরানব্বই ভাগ ঝামেলা এড়ানো যায়। 

আসলে তার মা-বাবা চাইত সে দোকানে বসুক। সে দোকানে বসলে বিক্রি-বাটা ভালো হতো! সেই ভালো বিক্রি বাটার সুতো ধরে নবীন চন্দ্র দোকানে সিগারেট কিনতে আসত। মা যে নিরানব্বই ভাগ ঝামেলা এড়াবার কথা বলেছিল, নবীন চন্দ্র তার বাইরের একভাগ। একটি সিগারেট নিয়ে সে দিয়াশলাইয়ের জন্য হাত বাড়াত। একটি সিগারেটের দামের মধ্যে ফাউ মিলত একটি দিয়াশলাই কাঠি এবং চার চারবার অকুণ্ঠ স্পর্শ। একবার সিগারেট নেওয়া, একবার পয়সা দেওয়া, একবার দিয়াশলাই নেওয়া এবং একবার দিয়াশলাই ফেরত দেওয়া, এই চারবারের স্পর্শের বোঝাপড়া পরিষ্কার হতে নবীন চন্দ্রের দু-তিন বারের বেশি দোকানে আসতে হয়নি। 

সুমিত্রার মা যে একভাগ ঝামেলার কথাটা বাকি রেখেছিল সেই একভাগের মধ্যেই ছিল মন্ত্রপূত ধুলো যা উদ্যত ফনাকে নমিত করে আত্মসমর্পণে। সুমিত্রারতো স্বাভাবিক কারণেই অভিজ্ঞতার খামতি ছিল। 

একবার সুমিত্রা গোপনে মায়াবাজারে গিয়েছিল নবীনচন্দ্রের সঙ্গে। শাড়ির সঙ্গে মানিয়ে ব্লাউজ কিনতে হবে। সায়া, ছোট বোনের জন্য এক জোড়া টেপ জামা এবং নিজের ব্রেসিয়ার, একটু বড় দোকান থেকে। আর একবার বন্ধু সবিতার সঙ্গে সিনেমায় যাওয়ার নাম করে আসলে নবীন চন্দ্রের সঙ্গে সিনেমা হলের অন্ধকারে অনেকটা সময় ঘনিষ্ঠভাবে বসা। হাতে হাত রেখে দীর্ঘ সময় বসে থাকা এবং অত্যন্ত সাহসী হয়ে পুরুষের হাতকে আরও খানিকটা অভিগমনের অধিকার দেওয়া; কিন্তু ব্যাপারটা কষ্টকর। একটা বাংলা বা হিন্দি সিনেমার পুরো দৈর্ঘ্য সময়টা বড় কম নয়। 

বার দু’একের এরকম গোপন অভিসার-সুমিত্রার ভেতরে সেই দুর্দম আকাঙ্ক্ষার জন্ম দিয়েছিল, লোকে যাকে প্রেম বলে। সে সেই আশ্চর্য বাঁশির সুর শুনেছিল, যা তার শরীরের ভেতরে বয়ে যাওয়া যমুনাকে অধীর করেছিল, বাতাসকে করেছিল উতলা এবং প্রকৃতিকে বিক্ষুব্ধ। সে নবীনকে প্রস্তাব নিয়ে তার মা-বাবার কাছে যেতে বলেছিল। নবীন রাজি হয়নি। রাজি না হওয়ার পেছনে যুক্তি ছিল তার। চাকরি-বাকরি না করা পুরুষ মানুষ বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে হাজির হলে, তার কী হেনস্তা হতে পারে, তা সে সুমিত্রাকে বুঝিয়েছিল। তা ছাড়া অন্য গোটা দু-তিন কারণেও সুমিত্রাকে সে বিয়ে করতে পারবে না; কিন্তু সে সব কথা বলে সুমিত্রাকে হতাশ করার এই মুহূর্তে নবীনচন্দ্রের কোনো হেতু নেই। 

কিন্তু সংক্ষিপ্ত এবং সতর্ক দু-চার বারের ঘনিষ্ঠ দেহ-সংস্পর্শ দু’জনার ভিতরেই আগুনকে ক্রমাগত উসকে দিচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত নবীনের হাত ধরে এক বর্ষণমুখর শেষ রাত্রিতে সুমিত্রা রাস্তায় বেরিয়ে এসেছিল। কেউ কিছু টের পাবার আগেই ভোরের প্রথম বাসে তারা নবদ্বীপের পথে। সুমিত্রার বাবার ব্যবসার পুঁজির একটা অংশ নিয়মিত জমানো থাকত একটা কৌটার মধ্যে। হাজার পাঁচেক টাকার এই পুঁজির হদিশ সুমিত্রার জানা ছিল। পরিকল্পনা করার সময় নবীন এই পাঁচ হাজার টাকার কথা জেনেছিল; কিন্তু শেষ মুহূর্তে বাপ, মা, ভাই-বোনের মলিন মুখ স্মরণ করে টাকাটা আর নিতে পারেনি। পাঁচশ’ টাকা মাত্র তুলে নিজের ব্যাগে নিয়ে দরজার বাইরে পা রেখেছিল সে। বিরোধের প্রথম বীজ উপ্ত হয়ে রইল যথাসময়ে ডালপালা মেলার অপেক্ষায়। এক বছর এইভাবে পার হল কষ্টেসৃষ্টে। বর্ধমানে পড়াশোনা চালাবার জন্য বাড়ি থেকে নবীন যে খরচ পেত, তাদের দু’জনের সংসারের মূল ভরসা হলো সেই কটা টাকা। ফলে সুমিত্রাকে লোকের বাড়িতে রান্নার কাজ নিতে হল। বামুনের এয়ো হিসেবে এ কাজ সহজেই জোগাড় হলো তার; কিন্তু সে আর কটা টাকা। শেষে নবীনের অনবরত বিরক্তি এবং ঘনঘন অন্তর্ধানের পরিণতিতে আতঙ্কিত হয়ে সুমিত্রা তাকে অন্যভাবে বাঁধতে চাইল। নবীনের নিষেধ অমান্য করে সে সন্তানসম্ভবা হয়। অপরিণত অভিজ্ঞতার কারণে তার ধারণা হয়েছিল একবার সন্তানের চাঁদমুখ দেখলে নবীনচন্দ্র মায়ায় পড়ে যাবে। 

হায় মেয়ে মানুষের কপাল। আসলে হলো ঠিক তার উল্টো। নবীন তার গায়ে হাত তুলল, অকথ্য খিস্তি-খাস্তা করল এবং বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে গেল। 

দু’মাস পরে নবীন ফিরে এল নবদ্বীপে। তার মাথা ন্যাড়া। বলল, ‘পিতৃবিয়োগ হয়েছে’। 

সুমিত্রা সহানুভূতি দেখাল। এই দু-মাসে নিজের যে অবর্ণনীয় দুর্দশা হয়েছে সে সব কথা তুলল না। দু’দিন পার হবার পর আগেকার অনেক বারের মতো সে কথাটা তুলল। জানতে চাইল, এখনো কি নবীন তাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতে পারবে না। 

এখনো বলতে সুমিত্রা পিতৃবিয়োগের ইঙ্গিত দিয়েছিল। কেননা নবীন আগে বলেছিল, ব্রাহ্মণসন্তান হয়ে সাহার মেয়ে সুমিত্রাকে ঘরে তুললে তার বাবা আত্মহত্যা করবে। ভারি রক্ষণশীল তাদের পরিবার। 

নবীন যথারীতি বলেছিল যে, না এখনো কেন, কোনো দিনই সম্ভব নয়। ভেব না, বাবা মারা গেলেও জ্ঞাতি পরিজন, মা, ভাইরা আছে। আছে প্রবল গ্রামসমাজ। তা ছাড়া নবীনরা তাদের গ্রামের প্রাচীন মন্দিরের পুরোহিত বংশ। তা ছাড়া কুলগুরু হিসেবে আছে তাদের যজমানির ব্যবসা। 

সুতরাং সাহা-শুঁড়ির মেয়েকে বাড়িতে তুলে সে বংশকে যেমন কলুষিত করতে চায় না, তেমনি চায় না যে তার পারিবারিক পেশা থেকে সে বিতাড়িত হোক। 

শ্মশ্রুগুম্ফ শূন্য মু-িতমস্তক নবীনচন্দ্রকে দেখে আরেক চন্দ্রের কথা মনে হলো সুমিত্রার, যাঁর লীলা সংগঠিত হয়েছিল এই নবদ্বীপের ধুলোমাটিতেই। নিজে সে বৈষ্ণবঘরের মেয়ে। বাবা মায়ের গলায় জন্মাবধি তুলসীর মালা দেখে এসেছে। রূপ-রূপ, গৌরাঙ্গের রূপের মানুষ মজেছিল, অন্য কিছু নয়। কী পুরুষ, কী স্ত্রী লোক নবীনযৌবন গলিতকাঞ্চন গৌরচন্দ্রমা দেখে কেউ স্থির থাকতে পারেনি। নবদ্বীপের আখরায় আখরায় গৌর কথা হয়, গৌর গান হয়। সেসব কথা আর গান শুনে সুমিত্রার উপলব্ধি হয়েছে এমনই। গৌরাঙ্গ কথায় সে একদিন তার উপলব্ধির যেন সমর্থনও পেল। কথক শোনাল সেই আশ্চর্য পদ :

একদিন আমি শাশুড়ি-ননদি বসিয়াছি আঙ্গিনায়

খেড়কির পথে যাইতে দেখিনু যাইছে গৌরাঙ্গ রায়

গৌরাঙ্গকে দেখে মদন আক্রমণে ননদি বিরল হলো। 

এমন বেহায়াপনা দেখে শাশুড়ি তাকে তাড়া দিলে, সে শাসন তার কানে গেল না। 

বিবল ননদি গোরারূপ হেরি সে তাড়া না শুনিল

দেখিতে দেখিতে সর্বাঙ্গ উলঙ্গ-বসন পড়িয়া গেল

হায়..হায়, ঠিক এমনইতো প্রায় হয়েছিল সুমিতার যে দিন সে দোকানের সামনে নবীন চন্দ্রকে দেখে। দোকানে সে সময় কেউ ছিল না, না অন্য কোনো ক্রেতা, না তাদের বাড়ির অন্য কেউ। নবীন বলেছিল, একটি সিগারেট দাও তো গো। সুমিত্রা দেখল হাত বাড়িয়ে সে দাঁড়িয়ে আছে, সে যদি চায়, তা হলে এখনি সব দিয়ে দিতে পারে সে। মরি, মরি, এত রূপ কি মানুষের দেহে হওয়া সম্ভব। নবীনের মুখের দিকে তাকিয়ে আত্মবিস্মৃত হয়েছিল। সিগারেট বাড়িয়ে দিতে গিয়ে হাত থরথর করে কাঁপছিল তার। স্পর্শ পেতে সারা শরীরের ভিতর দিয়ে একটা গরম ভাপ বয়ে গেল তার। 

গঙ্গায় এই চৈত্র মাসে তেমন জল নেই। কোথাও কোথাও তো মাঝখানেও চরা প্রকট হয়ে জেগে আছে। কোথাও কোথাও সবুজ রঙের বয়া ভাসছে জলের ওপর। ভুটভুটি নদীর মাঝখানে দিয়ে চলছে। একপার নদীয়াতে, অন্যপার বর্ধমানে। এই চৈত্রমাসে নদী তীরবর্তী মাঠে ফসল ফলে আছে। সবুজ ফসলের মাঠে কাজ করছে চাষিরা। নদীর জল যন্ত্রে তুলে ক্ষেতে প্রবাহিত করে দিচ্ছে। ছোট ছোট বাড়িঘর, গরু-মোষ, হাঁস-মুরগি এই সব নিয়ে মানুষের সংসার বিস্তৃতির আড়াল থেকে বেরিয়ে আসার ছবির মতো, যেন বাস্তব নয়। 

জবা তাকে ধাক্কা দিয়ে জিজ্ঞেস করল, এই তুমি ঘুমোচ্ছ নাকি গো? দেখো, জলে পড়ে যেও না। 

নৌকোর উঁচু ধারিতে আরও অনেকের সঙ্গে বসে ছিল তারা। তাদের পেছনে জল। অন্যমনস্ক হলে বা ঘুমিয়ে পড়লে আচমকা জলে পড়ে যাওয়া কোনো অসম্ভব ব্যাপার না। অন্যমনস্কই তো ছিল যে, ফলে খানিকটা তন্দ্রাছন্ন। সেই সুযোগে অতীতের কঙ্কালেরা শরীরে রক্ত মাংস লাগিয়ে সামনে দিয়ে মিছিল করে গেল এতক্ষণ। 

হাতের থলের ভেতর থেকে গামছাখানা বের করে গঙ্গার জলে ভিজিয়ে নিল সুমিত্রা। জবা তেমন না চেপেই ভাঁজ করে মাথায় চাপাল গামছা। ভীষণ গরম লাগছে। বাতাস শূন্য স্তব্ধ প্রকৃতি। নদীর জল থেকেও গরম বাষ্প উঠে শরীর ভাপিয়ে দিচ্ছে। ভটভটির ডিজেলের কটু ধোঁয়া মাঝেমাঝে নাকে এসে ঢুকছে। শরীর কেন যেন ক্রমেই অস্থির হয়ে আসছে। চৈত্রের দুপুর বেলায় নদীর জলে প্রতিফলিত রোদ্দুর আগুনের মতো ঝলকাচ্ছে। ওপরে পোড়া আকাশ নির্মম। ক্রমাগত ঘাম ঝরতে ঝরতে শরীর নিস্তেজ। তার গা-মাথা গুলিয়ে একবার দু’বার বমির ভাব এলো। ঠিক যেমন যখন সে চার-পাঁচ মাসের পোয়তি ছিল। পুরো সময়টাই সে নানা উপসর্গ নিয়ে যখন তখন ওয়াক তোলার অস্বস্তি। 

রামের ঘাটে যখন নৌকো ভিড়ল, সূর্য তখন পশ্চিমে হেলতে শুরু করেছে। হুড়পাড় করে লোক নামছে পাড়ে। উঠতে গিয়ে মাথায় কেমন যেন একটা চক্কর লাগল সুমিত্রার। সে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল নৌকোর পাটাতলে। পরে লোকের ভিড় পাতলা হতে সে সঙ্গিনীকে বলল, জবা, আমাকে ধরে তোল। 

কেন গো? কী হলো তোমার আবার? জবা ধরে তুলল তাকে। 

মাথায় চক্কর লাগার রোগ মাস দুয়েক হলো শুরু হয়েছে সুমিত্রার। কত বয়স হলো তার? মাসান্তিক নিগ্রহের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার সময় তার এসে গেছে? বিগত কয়েক মাস ধরেই মাসিক অনিয়মিত হয়ে গেছে তার। কতবার ভেবেছে, এ আপদ গেলেই বাঁচে সে। সব মেয়েমানুষ বোধহয় এইভাবেই ভাবে; কিন্তু যখন সত্যি সত্যিই সময় আসে, কোথা থেকে শরীর মনে এক বিচিত্র হাহাকার এসে বাসা বাঁধে। সুমিত্রার দেহমনে কেমন একটা আতঙ্ক এসে উপস্থিত হয়েছে এবং একটা হতাশা। 

জবার দেহে ভড় দিয়ে টলমল করতে করতে নৌকো থেকে নামল সে। ঘাটে অনেক মানুষ। জলে বিস্তীর্ণ জায়গাজুড়ে অসংখ্য নৌকা। পাড়ে মানুষের মেলা, দোকানপাট, খাবার-দাবার, মনিহারি হাজার জিনিস। সংসারের নিত্য প্রয়োজনের কত জিনিস। লোকের ভিড়ে হাঁটা দায়। নদীর পাড় থেকেই মেলা বসে গেছে। কোলাহল, খিস্তি-খেউর। শুকনো বিষ্ঠার গন্ধ চারদিকের বাতাসে। আচমকা প্রচুর লোক একত্র জড়ো হলে যা হয় আর কী। এখানে-ওখানে প্লাস্টিকের তাঁবু, চালা। একটা বড় আকারের ক্যাম্পও করেছে কোনো বড় সেবাশ্রম বা মিশনের লোকেরা। সেখানে বহু মানুষের একত্র কোলাহল, বিবাদ, মিলন। পিঠে নিতান্ত প্রয়োজনীয় টুকিটাকি এবং জামা-কাপড়ের ব্যাগ। ভিড় ঠেলে চলতে টলেটলে পড়ে যাচ্ছে সুমিত্রা। 

কোথায়, কদ্দুরে আমাকে নিয়ে যাবি, জবা? 

জবা পেছনে ফিরে তাকায় না। বলে; কী জানি গো, কোথায় নিয়ে যাচ্ছি তোমাকে। কোথাও তো তিল ধারনের ঠাঁই নেই গো! বাপরে মানুষ! রঘুনাথ এত ন্যাংড়া, কানা, নুলো, ভেংড়ার রোগ সারিয়ে দেবে! কে জানে। 

রাস্তার পাশে একখানা একতলা বাড়ি। সামনের দিকে দু-খানা পাকা ঘর, পেছন দিকে ছনের চালা তোলা আরও দু-তিন খানা ঘর আছে। আরও পেছনে আম-কাঁঠালের বাগান ঘেরা বাড়িখানায় লক্ষ্মীশ্রী আছে। 

পাকা ঘরের বারান্দার ওপরে সুমিত্রা থেবড়ে বসে পড়ল। কঁকিয়ে উঠে বলল, ওরে জবা, আমি আর হাঁটতে পারছি না। শরীরের মধ্যে এমন করছে কেন রে!

জবা পেছন ফিরে দেখল সুমিত্রাকে। মুখের কোণে ফেনা, সমস্ত শরীর থেকে রক্ত যেন কেউ টেনে বার করে নিয়েছে। এমন চেহারা হয়েছে সুমিত্রার! থরথর করে কয়েকবার কেঁপে উঠে রোয়াকের ওপরে গড়িয়ে পড়ল সে। 

জবা উঠে এর বারান্দার ওপর। পিঠের ব্যাগের ভিতর থেকে জলের বোতল টেনে বার করে দেখল বোতল প্রায় শূন্য। জলটুকু সুমিত্রার গলায় ঢেলে দিয়ে সে চার ধারে তাকিয়ে দেখল। এ বাড়ির আনাচে-কানাচে, গাছের নিচে, পথের ধারে এটা-ওটা বেড় দিয়ে, ছাউনি টাঙিয়ে মানুষ বসে গেছে। আগামীকাল রামনবমী। পূজা সেরে তবে এইসব লোকজন যে যার বাড়ির পথ ধরবে। 

জবা দরজার কড়া নেড়ে ভেতরের লোককে ডাকল। 

একঘটি জল দেবে গো? এক ঘটি জল দেবে গো?

দরজা খুলে বেরিয়ে এলো পঁচিশ-ছাব্বিশ বছরের একটি মোটাসোটা বউ। 

এক ঘটি জল দাও গো, আমার বামনির মাথায় চক্কোর লেগে গেছে রোদ্দুরে- আরে পড়ে যাবে নাকি গো-ওঠো না, ওঠো না, বস, বস- আরে পড়ে যাবে যে-

দেয়াল ধরে ফের গড়িয়ে পড়ল সুমিত্রা। পড়তে পড়তে জবার মুখের বামনি শব্দটা তার কানে এসে লাগল তার। 

স্থুলাঙ্গী মেয়েটি, আরে আরে পড়ে যাবে যে, ধর ধর, বলতে বলতে এগিয়ে জবার সঙ্গে একযোগে ধরে ফেলল সুমিত্রাকে। বলল, এখানে নয়, এখানে নয়, বামনিকে ভেতরে নিয়ে চল। এদিকে-এদিকে।

দু’জনে ধরাধরি করে ঘরের ভিতর দিয়ে পেছনের বারান্দায় সুমিত্রাকে নিয়ে এল তারা। ঝপাস করে একখানা মাদুর পেড়ে ফেলে বউটি বলল, বামনী মাকে এখানে শোয়াও। এক ঘটি জল নিয়ে এসে জবার হাতে দিয়ে বলল, চোখে-মুকে ঝাপটা দেও, আমি নুনচিনির সরবত করে নে আসছি। আহাগো! রোদের ধকে এমনটা হয়ে গেছে গো!, 

সুমিত্রা বিকল হয়ে আসা অনুভূতির ভেতরে অবাক হয়ে মেয়েটির মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। ভারি মায়াময় ভালোমানুষ মুখখানি তার। ভালো মানুষ না হলে এমনভাবে অজানা অচেনা বাইরের লোককে কেউ ঘরের ভেতরে টেনে এন শুশ্রুষা করে। বড় এক গেলাশ নুন চিনির সরবত এনে সে মুখের সামনে ধরল সুমিত্রার। পিঠের নিচে হাত দিয়ে ঠেলে খানিকটা উঁচু করে বলল, খেয়ে নাও গো, বামুক মা, রোদে শরীল থেকে সব জল বেইরে গেছে তো, তাইতে এমন হাল। এটা খেয়ে নিয়ে দেখবে ধীরে ধীরে শরীরে বল ফিরে পাবে। 

সুমিত্রা আস্তে আস্তে সরবতের গেলাশ নিঃশেষ করে তার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি কে গো? আমার এমন সেবা করছ?

সে বলল, আমি শ্যামা গো, এ বাড়ির বউ আর তোমার আগের জন্মের মেয়ে। পূজা দিতে এয়েচতো? সব বেবস্থা হয়ে যাবে। এখন বিশ্রাম কর চোখ বুজে। 

সুমিত্রা সারা জীবনে গায়েপড়া মানুষ অনেক দেখেছে, কিন্তু এমন গায়ে পড়া ভালোমানুষ একজনও দেখেনি। ভাবল, জবার মুখে বামনি শুনে এমন ভক্তি দেখাচ্ছে? হলেও হতে পারে। সে চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইল। চোখ বন্ধ করে থাকতে থাকতে এক সময় হয়তো সে হতচেতন হয়ে পড়ল অথবা ঘুমিয়ে পড়ল। 

গভীর রাত্রে ঘুম ভাঙল সুমিত্রার। অন্ধকারের মধ্যেই বুঝতে চেষ্টা করল কোথায় সে। পাশে যে শুয়ে আচে, সে নিশ্চয়ই জবা। তার দিনের বেলার কথা ধীরে ধীরে মনে পড়ল। অসারে ঘুমিয়েছিল সে। মাঝখানে একবার ঘুম ভাঙিয়ে জবা অথবা শ্যামা দুধ-সাবু বা ওই ধরনের অন্য কিছু খাইয়েছিল তাকে। সে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আবার ঘুমিয়ে পড়েছিল। 

খানিক সময় অন্ধকারে ধাতস্থ হয়ে সে জবাকে নিচু গলায় ডেকে তুলল। বলল, জল দে আমাকে। 

জবা মাথার কাছ থেকে একটা বোতল টেনে এনে বিড়বিড় করে বলল, এ বামনি তো জ্বালালে গো আমায়। রাত্রেও ঘুমোতে দেবে না। না-ও। 

সুমিত্রা উঠে বসে জল খেল। জবাটা অমনিই। যে কোনো পরিস্থিতিতেই সে মস্করা করতে পারে। সে বলল, বারবার বামনি বলে আমার পাপ বাড়চ্ছিস কেন? আর রাত্রে কোন বেল্যে ঘুমোয়?

জবা তার মুখে হাত চাপা দিয়ে ফিসফিস করে বলল, চুপ চুপ, বামনি নাতো, কী? বামুনের বউতো বামনীই হয়। হয় না? এখন চুপ কর। কে কোত্থেকে শুনবে। 

অন্ধকারের মধ্যে সুমিত্রা হাসল। বলল, তুইই ভালো জানবি। এখন বল, বাইরে যাব কোনদিকে?

জবা, কোত্থেকে একটা টর্চবাতি বের করে বলেল জালালে! এস এদিকে। 

সুমিত্রা বিষণ্ণগলায় বলল, বামনি জেনে সেবা করল সেটা পাপ হল! আবছা এক টুকরো চাঁদের আলো এসে পড়েছে তার মুখে। নবমী স্পর্শ করা চাঁদ। আর ঘণ্টাখানেক পরেই হয়তো পুরোপুরি নবমীতে প্রবেশ করবে চাঁদ। তখন দিন হবে! রঘুনাথের মন্দিরে পূজা দিতে যাবে শয়ে শয়ে মানুষ সন্তানের, প্রিয়জনের মঙ্গল কামনায়, অঙ্গহানি রোধকল্পে। 

পশ্চিম দিকে মুখ করে ছিল তারা। সে দিক থেকে ঠাণ্ডা হাওয়া হঠাৎ বেঁধে এলো। গঙ্গা সেই দিকে। ঠাণ্ডা হাওয়ায় সুমিত্রার শরীরে আচমকা একটা কাঁপন উঠল। কাঁপাগলায় পাশে দাঁড়াল জবাকে বলল, জলের বোতলটা দে, জবা। বয়ঃসন্ধি থেকে মা বাধ্যতামূলক শিক্ষা দিয়েছিল জলমৌচের, সেই পাপ-পুণ্যের অভ্যাস যায়নি। 

নেও, নেও! জবা ঝাঁঝিয়ে উঠল, বিশ বছর ধরে খানকিগিরি করছ, তবু তোমার বাতিক গেল না। নেও, ওঠো। 

সুমিত্রা উঠে দাঁড়াল জবাকে ভর দিয়ে। বলল, বাতিক নয় রে, জবা, উচিত অনুচিত, ভালোমন্দ-পাপ পুণ্য মানে তো এসবই, সে আবার বলল, বামনি ভেবে গায়ে পায়ে হাত দিল মেয়েটা, পাপ হলো আমার। যা আমার পাওনা নয়, তাই নিলাম। গলা কেঁপে উঠল তার চাপা কান্নায়। 

জবা বলল, চল এখন, এরা এমনিতেই ভালো লোক গো। আর আমরা তো একা নয় আনাচে কানাচে, সামনে পেছনে বাইরে ভিতরে আরও কত জবা পড়ে আছে, দেখগে। কাউকে না বলছে না বউটা। কাল পূজা দিয়ে যে-যার বাড়ি ফিরবে। 

তাই, সুমিত্রা শুনে ভারি অবাক হলো। 

শুধু তাই? জবা বলল, ও মেয়ে সত্যিসত্যিই আগের জন্মের তোমার কেউ ছিল গো। তুমি তো চেতন হারা হয়ে পড়ে গেলে, ও মেয়ে তোমার জামা-কাপড় খুলে কুয়োর ঠাণ্ডা জল এনে সারা গা-হাত-পা মুছিয়ে দিলে দু’বার করে। পরে পাশে বসে হাওয়া করতে লাগলে, হ্যাঁ অন্ধকারের মধ্যে কাল্পনিক কাউকে যেন সাক্ষী মানল জবা। বলল, বামনি না বললে এমন সেবা ভক্তি পেতে? এই যে টর্চ দেখচ, এও সন্ধ্যেবেলা আমার হাতে দিয়ে গেল। বলল, রাত-বিরোতে লাগতে পারে, কাছে রাখ। 

দাওয়ায় ফিরে এসে দু’জনে ফের শুয়ে পড়ল। জবা ফের বলল, এবার একটু ঘুমোও তো আর মেলা বকিও না। সে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ঘুমিয়ে পড়ল। 

সুমিত্রা অন্ধকারের মধ্যে চোখ মেলে শুয়ে রইল। দুপুর থেকে টানা এতটা সময় ঘুমিয়ে এখন আর তার চোখে ঘুমি আসছিল না। শরীর খুবই দুর্বল। গঙ্গার দিক থেকে হাওয়া আসছে। তাতে তার শরীর কিছুক্ষণ আগের সেই কম্প এখন একটা স্থায়ী শিহরণ জাগিয়ে ভেতর থেকে থিরথির করা অস্বস্তিতে শরীরে থিতু হয়ে জেগে রইল। তার মনে হলো এবার বোধহয় সত্যিসত্যিই জ্বর এসেছে তার শরীরে। আঃ এক খানা চাদর বা কাঁথা পেলে এখন বড় উপকার হত তার! এ কথা মনে হতেই একখানা নরম কাঁথা সে ঠিক পায়ের কাছেই টের পেল। সে কাঁথাখানা টেনে গায়ে তুলে নিল এবং সারা শরীরের সঙ্গে জড়িয়ে সে আস্তে আস্তে উষ্ণ হওয়া টের পেতে লাগল। সে চোখ খুলেই শুয়ে রইল। অন্ধকারে চোখ খুলে শুয়ে থাকা তার একটা পুরনো অভ্যাস। নবদ্বীপের বউবাজারের গলিতে অনেক ক্লান্ত অবশিষ্ট রাত সে অন্ধকারে তাকিয়ে থেকে ভোর করেছে। অতীত ভিড় করে আসা সেই সব নিষ্ঠুর রাতে প্রায়ই একটা দৃশ্য সে পুনর্নির্মাণ করত মনে মনে। সেটা নবীন চন্দ্রের সঙ্গে তার প্রথম সর্বাঙ্গীন মিলনের রাত। সে ঘটনা সে কখনো ভুলতে পারে না। ফলে না নিজেকে, না নবীনকে বা তার বাপ মাকে, না তার ভবিতব্য-কাউকেই সে দোষারোপ করতে পারে না। 

তার বাবার জ্বর হয়েছিল। তিন-চার দিন ধরে সুমিত্রাই দোকানে বসছিল। এই তিন-চার দিনে নবীন চন্দ্রের সিগারেটের নেশা খুব বেড়ে গিয়েছিল। ফলে সুমিত্রার সঙ্গে তার একটা মানসিক বোঝাপড়া প্রায় নিশ্চিত হয়েই গিয়েছিল। উপরন্তু সিগারেট, দেশলাই এবং দু’জোড়া হাত সবার অজান্তে সেই রহস্যময় বিদ্যুৎ সংযোগের খেলাও খেলতে শুরু করেছিল উভয়ের ওপরে নির্মমপীড়নের চাপ নিয়ে। 

এক বৈশাখের সন্ধ্যায় সারা দিনের প্রবল দাবদাহের পর সারা আকাশ দাপুটে মেঘেরা দখল করে নিল। ঝড়ো উন্মাদ বাতাসের সঙ্গে অসংখ্য ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে প্রবল বৃষ্টি এসে ঝাঁপিয়ে পড়ল। স্বাভাবিক কারণেই বিদ্যুৎ চলে গিয়ে পুরো অঞ্চল গভীর অন্ধকারে ডুবে গেল। 

সুমিত্রা দোকানের পাল্লা টেনে চার আঙুল পরিমাণ ফাঁক রেখে হাঁটুতে চিবুক ঠেকিয়ে নিশ্চুপ বসে রইল। নিয়মমতো এ অবস্থায় দোকানের শিকল তুলে পেছনের একচিলতে খুপরিতে আশ্রয় নেয় দোকানি। 

কিন্তু সুমিত্রা সে চার আঙুল ফাঁকার বাইরের ঘন অন্ধকারের মধ্যে বিদ্যুতের ঝলকের মধ্যে তার ভবিতব্যকে দেখতে চাচ্ছিল। প্রলয় শুধু বাইরে নয়, প্রলয় তার ভেতরেও চলছিল। প্রতিদিন একটা সিগারেট কিনে খাওয়ার জন্য একবার দোকানে আসবে, তা তখন সুমিত্রা দোকানে থাকুক চাই না থাকুক। সুমিত্রার সর্বান্তকরণ যেন জানত নবীন আজকে আসবেই। ভিতরের মহাপ্রলয়ে একে একে তার ডালপালা সব ভেঙে পড়ছিল। তারপরে এক সময় তার শিকড়েও টান লাগল যখন ওই চার আঙুল ফাঁকের মধ্যে নবীন আশ্চর্য সুন্দর সিক্ত, বিস্ত্রস্ত মুখ খানাকে সে দেখতে পেল। দেখে তার চোখের ঠোটের কোনে এক আশ্চর্য অহংকারের হাসি তির্যক ফুটে উঠল। তার নিশ্চিত ধারণা হয়েছিল এতক্ষণের আকাঙ্ক্ষা শক্তিশালী ডাকিনি বা জাদুকরি হয়ে এই মহাপ্রলয়ঙ্কর ঝড়বৃষ্টির মধ্যেও নবীনকে বেঁধে এখানে নিয়ে এসেছে। নাহলে কেউ এহেন দুর্যোগে ঘরের বাইরে বের হয়? নবীনের তো জানার কথা নয় যে, সে ই ঝড় বাদলের রাতেও সুমিত্রা এখানে তার জন্য অপেক্ষা করছে। 

ফাঁকার ভেতর দিয়ে হাত বাড়িয়ে নবীন তাকে স্পর্শ করেছিল। তার মুখ, ঠোট, গলা, বুক, যতদূর পর্যন্ত হাত পৌঁছায়, নবীন চন্দ্র ততদূর পৌঁছল। 

সুমিত্রা ফুঁ দিয়ে মোমবাতির শিখা নিভিয়ে ফেলল। তার শরীরের অভ্যন্তরে জমা থাকা এতক্ষণের আকুল প্রতীক্ষা একটা গরম ভাপের মতো তার যোনিপথ দিয়ে বেরিয়ে এল। পূর্ব অভিজ্ঞতাহীন সুমিত্রার অকস্মাৎ মনে হলো তার বোধহয় শরীর খারাপ হয়ে গেল। 

নবীন ওপরের শিকল সরিয়ে কপাটের ফাঁক আর একটু প্রশস্ত করে ভিতরে ঢুকে এলো এবং অন্ধকারের মধ্যেই পাল্লা ঠিকমতো সেঁটে শিকল তুলে দোকান একেবারেই বন্ধ করে দিয়েছিল। সুমিত্রাকে আশ্রয় করে এর পরে পেছনের প্রকোক্ষে আসতে এবং সুমিত্রার ভিতরে প্রবেশ করতে নবীন চন্দ্রের মিনিট চার-পাঁচের মতো সময় লেগেছিল এর পরে। ঘন অন্ধকারের প্রমত্ত প্রকৃতির আবহে সুমিত্রার মনে হয়েছিল, চৌকিতে নয়, তারা দু’জন যেন শূন্যে, যেন মাটির সঙ্গে তাদের আর কোনো সম্পর্কই নেই। তারপর নবীন সেই অন্ধকার এবং ঝড়জল আশ্রয় করে বেরিয়ে যেতে দীর্ঘসময় সুমিত্রা অন্ধকারের মধ্যে দু-চোখ খুলে শুয়েছিল। চোখ খুলে অন্ধকারের মধ্যে চুপচাপ শুয়ে থাকা সেই থেকে শুরু হয় সুমিত্রার। 

পরদিন সকারে জবা সুমিত্রার গায়ে হাত দিয়ে ঠেলা দিল। বলল, কিগো, উঠতে হবে না? পূজা দিতে যাবে না মন্দিরে? একি, তোমার গায়ে জ্বর নাকি গো?

সুমিত্রা লাল চোখে তার দিকে তাকাল। বলল, মন্দিরে পূজা দিতে যেতে পারব বলে মনে হচ্ছে না রে জাবা। গা-হাত-পায়ে খুব ব্যথা। আমার গায়ে আর একটা ক্যাঁথা-মেথা কিছু দিতে পারিস? বড্ড শীত করছে। 

জবা বলল, এই সেরেছ। তুমি তো আচ্ছা ফেসাদে ফেললে। দাঁড়াও, দাঁড়াও এ বাড়ির বউকে একবার ডাকি। 

বউকে ডাকতে হল না। সকাল হতেই সে সবার খোঁজ নিতে বেরিয়ে এসেছে। 

তাকে দেখে জবা বলল, তুমি এয়েছ বউ দিদি? দেখ দিনি কাণ্ড, আমার বামনীর বোধহয় জ্বরই হয়েছে। এই শরীরে কীভাবে মন্দিরে যাবে, কীভাবে পূজা দেবে, ভারি বিপদে পড়লাম ভাই আর তোমাদেরও ফেলালাম। 

সব শুনে শ্যামা বলল, দেখি দেখি, সে সুমিত্রার মাথায় গলায় হাত দিয়ে বলল, ও বাবা, এত দেখি বেশ জ্বর। দাঁড়াও, দাঁড়াও আর একখানা ক্যাঁথা দিই বামনদিদিকে। সে ফের তার ঘরের দিকে চলে গেল। ভেতর থেকে একখানা কাঁথা এনে সুমিত্রার গায়ের কাঁথার ওপর চড়িয়ে দিল। বলল, ভয় পেয়ো না গো, বামুন দিদি। রোদ লেগে এমন আচমকা জ্বর এখেনে এ সময়ে হয়ই। ফি-বছর দেখছি তো। তোমার জ্বরও ছাড়বে পূজাও দেওয়া হবে। 

শ্যামা এক বাটি দুধ-সাবু খাইয়ে কী একটা বড়ি গিলিয়ে গেল সুমিত্রাকে। ঘণ্টাখানেক পরে সে যখন ফের এল সুমিত্রা তখনো মুহ্যমানে মতো শুয়ে রয়েছে। শরীরে মনে ভয়ানক দুর্বল সে। শ্যামাকে দেখে তার দু’চোখে জল টলটল করে উঠল। তারপর ধারায় বেয়ে নামল গাল বেয়ে। বলল, আমি উঠে মন্দির পর্যন্ত যেতে পারব না, বোন। সে ফুঁপিয়ে উঠল। 

শ্যামা বলল, ওমা, তাতে কাঁদার কী হলো? সে ব্যবস্থাও হবে। আমাদের গুরুঠাকুর মশাইকে খবর পাঠাচ্ছি। তিনিই রঘুনাথের মন্দিরের পুজারি এনে তোমার মানত নিয়ে নিজে গরজ করে পূজা দিয়ে দেবেন। এ বাড়ি কুলগুরুর বংশতো, কোনো ভয় নেই। 

সুমিত্রা বলল, তুমি সত্যিই আমার গতজন্মের বোন গো। 

ঘণ্টাখানেক পরে শ্যামাদের গুরুঠাকুর এসেছে শুনে সুমিত্রা দুর্বল শরীরে কোনোমতে উঠে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসল। মাথায় বেশ খানিকটা দীর্ঘ করে ঘোমটাও তুলে দিল। ব্যাগের ভেতর থেকে স্যাকরার দোকানের লাল সৌখিন কৌটোটা বের করল সে। তার ভেতরে আকাশি রঙের নরম মখমলের শয্যায় পাশাপাশি সাজানো সোনার চোখ দুটি আলোতে ঝিকমিক করে উঠল। ব্যাগের চেইন খুলে দু-খানা একশ’ টাকার নোট বের করে ছোট গয়নার কৌটার সঙ্গে রাখল সে। পূজার নৈবেদ্য ও প্রণামী বাবদ দাম ধরে দিতে হবে।

দূর থেকে পূজারিকে আসতে দেখেই সুমিত্রা ঘোমটা নাক পর্যন্ত নামিয়ে দিল। সুঠাম চেহারার লোকটির বয়স পঞ্চাশ-বায়ান্ন হবে। জুলফিতে পাক ধরেছে। চেহারা ঈষৎ ভারী হয়েছে, ফলে গায়ের রঙ আরও উজ্জ্বল হয়েছে। লোকটি আশ্চর্য সুদর্শনও। একবার দর্শনেও সুমিত্রার চিনতে ভুল হল না নবীন চন্দ্রকে। ঘোমটার নিচ থেকে সে স্থির দৃষ্টিতে দেখতে লাগল। ধবধবে ধুতি আর হালকা গেরুয়া রঙের হাফহাতা পাঞ্জাবীতে কী মোহময় লাগছে লোকটিকে এখনো!

শ্যামার পেতে দেওয়া একটা মোড়ায় নবী বসল। 

কই, কার মানত?

এই যে, এই বামুনদিদির!

কাগজ-কলম দাও। কার নামে হবে মানত?

সুমিত্রা দাঁতে দাঁত চেপে ফিসফিস করে বলল

নির্মলা, নির্মলা মুখুজ্জে। 

নবীন কাগজে খসখস করে লিখল এবং সঙ্গে সঙ্গে মুখেও বলে গেল, নির্মলা মুখুজ্জে, হ্যাঁ। মানতকারী?

সুমিত্রা মুখুজ্জে

সুমিত্রা মুখুজ্জে। মা

হ্যাঁ। 

কী মানত দেবে

দু-পাতা সোনার চোখ

দু-পাতা সোনার চোখ, তোমার কে হয়?

মেয়ে

মেয়ে-কন্যা

কন্যার বাপের নাম?

জবা আশ্চর্য হয়ে ভাবছিল সুমিত্রা দিদি এমন কাঁপছে কেন? কেনই বা অতখানি ঘোমটা টেনে মুখ ঢেকে আছে। সত্যিসত্যিই এক রাত্রিতেই বামনি হয়ে গেল নাকি?

সুমিত্রা খুব সন্তর্পণে বলল, ন-বী-ন চন্দ্র মুখুজ্জে। 

নবীন অভ্যাস মতো মুখে উচ্চারণ করে কাগজে লিখতে লাগল, পিতা-নবীন চন্দ্র মু-খু অ্যাঁ? কী নাম বললে? সুমিত্রা ঘোমটা সরিয়ে মুখ খানিকটা উন্মুক্ত করে নবীনের দিকে তাকাল। তবুও তার মুখমণ্ডল ছায়াতেই রইল। শুধু চোখ দুটি নিস্পলক তাকিয়ে আছে নবীনের চোখে সরাসরি। সেইভাবে অপলক চোখ রেখে সুমিত্রা বলল, নবীন-চন্দ্র-মু-খু-জ্জে। 

নবীন একবার চোখ সরিয়ে ফের আরেকবার তাকাল। সুমিত্রা পলক না ফেলে তাকিয়ে আছে তার দিকে। কী আছে সেই দৃষ্টিতে। যদি সে কথা কেউ জানে, তাহলে সে ওই নবীন চন্দ্রই। সে ঝটপট নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, বাস আর কিছু দরকার নেই। দাও, মানতের সামগ্রী টাকা, সব দাও। ঠিক মতো সবই হয়ে যাবে। 

শ্যামা সুমিত্রার হাত থেকে সোনার চোখ এবং টাকা নিয়ে নবীনের হাতে দিল। ঘোমটার আড়াল থেকে সুমিত্রা তখনো তাকিয়ে আছে। নবীন চন্দ্র শ্যামাকে বলল, ঠিক আছে, আমি চলি তাহলে সে বেরিয়ে যেতে শ্যামাও তার পেছনে পেছনে বাইরে গেল। সুমিত্রা সম্মোহিতের মতো নবীন চন্দ্রের গমনপথের দিকে তাকিয়ে রইল। 

আচমকা জবা বলল, এই সেই লোক?

সুমিত্রা ধীরে ধীরে মাথা নাড়ল। 

আর হাতের মধ্যে পেয়ে তুমি তাকে ছেড়ে দিলে, সুমিত্রা কিছু বলল না

তার মানে দু-আনা সোনার ওই চোখ আর রঘুনাথের পায়ে পড়ছে না। 

সুমিত্রা জানে এমন সম্ভাবনা ষোলো আনা। তবুও সে চুপ করেই রইল। তার শুধু মনে হচ্ছিল, কী আশ্চর্য সুন্দর লোকটা এখনো। সেই প্রথম দিন স্পর্শ মাত্রই তার মনে হয়েছিল শরীর খারাপ হয়ে গেছে। তখন ভারি অনভিজ্ঞ ছিল সে; কিন্তু এখন সে মেয়ে মানুষের ভেতরের বাইরের সবখবরই জানে। গত তিন মাস ধরে শরীর খারাপ তার অনিয়মিত হয়ে গেছে। শরীরের জোয়ারে ভাটার টান লেগেছে সে বুঝেছিল; কিন্তু নবীন চন্দ্র মোড়া থেকে উঠে দাঁড়াতেই সে বুঝেছিল, কী আশ্চর্য এই অসুস্থ শরীরও কী পরিমাণ কাঙাল যে হতে পারে।

জবা বলল, ওই যে বলেছিলে বাপের তহবিল থেকে পাঁচ হাজার টাকা প্রানে ধরে আনতে পারনি তুমি বলে গালমন্দ করেছিল, সেটার ডবল উসুল করে নিয়ে গেল। 

সুমিত্রা তাও কোনো কথা বলল না। জবা পুরোটা জানে না। সে পাঁচটা হাজার টাকা তখনি উসুল করেছিল নবীন। বাপ মরার পর সেই যে শেষবারের মতো নবীন এল। তখন ছ’মাসের ওপরে বাসা ভাড়া বাকি পড়েছিল। বাড়িওয়ালা লোকজন ডেকে উঠিয়ে দিয়েছিল বাড়ি থেকে। এক বেলার মধ্যে নবীন নতুন বাসা ঠিক করে তাকে নিয়ে উঠে এসেছিল বউ বাজারের কোঠায়। পরদিন সকালে বাজারে যাওয়ার নাম করে সেই যে সে পালাল, তারপর দেখা হলো এই বিশ বছর পর আজকে। এক রাতের মধ্যেই সুমিত্রা টের পেয়েছিল যে বাড়িউলির কাছে পাঁচ হাজার টাকায় নবীন তাকে বিক্রি করে গেছে। জবা বলল, বিশ বছর ধরে খানকিগিরি করচ তুমি আর আমি তো খানকির বেটি খানকি, শরীরে রোঁয়া হওয়ার আগে থেকেই পাকা খানকি; কিন্তু এই রাস্তায় কুত্তার বাচ্চাদের মতো-

সুমিত্রা হঠাৎ এতক্ষণে বলে উঠল, থাম জবা, থাম। 

জবা বলল, থামব? থামতে বলছ আমাকে? তুমি বলে এই হারামির বাচ্চা বামুনকে আজ ছেড়ে দিলে। তোমার জায়গায় যদি আমি থাকতাম আজ, ওই খানকির বাচ্চার কলিজা আমি খুবলে তুলে নিতাম, হ্যাঁ, জবা আহত সরিসৃপের মতো ফুঁসতে লাগল। সুমিত্রা তার রাগ দেখে হঠাৎ হেসে ফেলল। বলল, থাম-থাম, অত রাগছিস কেন? মানুষটার রূপ দেখেছিস? অমন রূপবান মানুষ সারাজীবনে একবারের জন্যও বুকের ওপর তুলেছিস?

জবা হতাশ হয়ে সুমিত্রার মুখের দিকে খানিক্ষণ বিস্ময়ে তাকিয়ে রইল। শেষে বলল, সত্যি তুমি কী বলতো!  

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫