Logo
×

Follow Us

শিল্প-সাহিত্য

‘মহাবিপ্লবের পদধ্বনি’ মহসিন শস্ত্রপাণির নাট্যসংকলন

Icon

মনজুর শামস

প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২২, ১২:২৩

‘মহাবিপ্লবের পদধ্বনি’ মহসিন শস্ত্রপাণির নাট্যসংকলন

মহাবিপ্লবের পদধ্বনি

মহাবিপ্লবের পদধ্বনি মহসিন শস্ত্রপাণির নাট্য সংকলন। সংকলনটিতে মহসিন শস্ত্রপাণির চারটি নাটক প্রকাশ করা হয়েছে। নাটক চারটি হচ্ছে- মহাবিপ্লবের পদধ্বনি, শবের মিছিলে জীবনের জয়গান, লাল তারার কাহিনী ও আজালিয়া পর্বত। সংকলনটির মূল্য ৪০০ টাকা, প্রকাশ করেছে জনান্তিক, প্রচ্ছদ এঁকেছেন মোস্তাফিজ কারিগর। 

এ দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলের অগ্রপথিকদের অন্যতম মহসিন শস্ত্রপাণি। ঊনসত্তরের গণআন্দোলন এবং একাত্তরের অগ্নিঝরা মার্চে ‘উন্মেষ সাহিত্য-সংস্কৃতি সংসদ’ গণসংস্কৃতির যে উত্তাল ঢেউ তুলেছিল, তিনি ছিলেন তার অন্যতম সংগঠক। গণমানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে গড়ে তুলেছিলেন সাংস্কৃতিক লড়াই। দ্রোহী কবিতায়, গণসংগীতে ও নাটকে মানুষকে টেনে এনেছিলেন মহাসংগ্রামের লড়াকু মিছিলে। আর তাই তার মহাবিপ্লবের প্রতিধ্বনি নাটকে যেমন অনিবার্যভাবে ধ্বনিত হয়েছে গণমানুষের প্রাণের স্লোগান- ‘আসাদের মন্ত্র- জনগণতন্ত্র’-এর বিপ্লবী প্রত্যয়, তেমনি ১৯৭০ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে এ দেশের মানুষকে অবহেলার পরাকাষ্ঠা দেখানো পাকিস্তানি স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠা জনরোষও উঠে এসেছে এই ধরনের সংলাপে : ‘...যে দ্যাশে আজ ফসলের খ্যাতে শবের মিছিল, হেয়াই দ্যাশের মানুষ বাঁচতে চাইলে সরকারি নির্যাতন ভোগ করতে হয়।

ঢাকা ফিররিয়া এই কতা কইও দ্যাশের মানষেরে। আর কইও, যে সরকার আমাগো বাঁচতে দেয় না, যে সরকার দুর্যোগে দুর্দিনে সাহায্য করে না, হেই সরকার দিয়া আমাগো কাম নাই। এবার আমাগো ভাগ্যেরে আমরা ঘুরামু। শবের মিছিলে আমরা জীবনের জয়গান গাইমু।’

বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে ১৯৭০ সালের ভীষণ ঘূর্ণিঝড়ের পর উপকূলীয় এলাকায় শুধু লাশ ভাসছিল- মানুষের, গবাদিপশুর আর পাখির; তছনছ হয়ে গিয়েছিল গোটা এলাকা। অথচ এর ১৪ দিন পর তখনকার পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান দুর্গত এলাকা সফরে গিয়ে মাত্র ২৫ হাজার টাকা সাহায্য ঘোষণা করেছিলেন। ঘূর্ণিঝড়ের পর মওলানা ভাসানী উপদ্রুত এলাকা পরিদর্শন করে এসে এক জনসভায় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীকে ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোকে অবহেলার জন্য দায়ী করেন এবং বলেন, এ ধরনের আচরণের জন্য পূর্ব পাকিস্তান আলাদা হয়ে যেতে পারে। বাস্তবে ঘটেছিলও তাই। এর কয়েক দিন পর সাধারণ নির্বাচনে এ দেশের মানুষ তার মোক্ষম জবাব দিয়েছিল, যার ফলশ্রুতিতে সূচনা হয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম।

বাংলা সাহিত্যে সেই ঝড়ের লেখা বড় একটা চোখে পড়ে না। মহসিন শস্ত্রপাণির ‘শবের মিছিলে জীবনের জয়গান’ সেদিক দিয়ে অবশ্যই ব্যতিক্রম। মহাবিপ্লবের পদধ্বনি নাটকে ঊনসত্তরের গণআন্দোলনের দালিলিক সংলাপে প্রতিবাদের ঢেউ ছড়ায় দর্শকের মনোজগতেও। তার অন্য দুটি নাটক ‘লাল তারার কাহিনী’ এবং ‘আজালিয়া পর্বত’ নাটক দুটিতে চীন বিপ্লবে লং মার্চ চলাকালে চীনা কৃষকদের লড়াই, আত্মদান আর বিজয়ের কাহিনী উঠে এসেছে দর্শকহৃদয়ে আশার আবির ছড়িয়ে।

‘মহাবিপ্লবের পদধ্বনি’ নাটকটির রচনাকাল ও মঞ্চস্থ হবার সময়কাল জানুয়ারি, ১৯৭০ (শহীদ আসাদসহ আয়ুববিরোধী আন্দোলনে শহীদদের আত্মত্যাগের ওপর ভিত্তি করে)। মঞ্চস্থ হয় পল্টন ময়দানে, এখন যেখানে ভাসানী হকি স্টেডিয়াম সেখানে)। ‘শবের মিছিলে জীবনের জয়গান’ নাটকটির রচনাকাল ও মঞ্চস্থ হবার সময়- মার্চ, ১৯৭১ (১৯৭০-এর ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ দেওয়া কয়েক লাখ মানুষকে নিবেদিত, লেখক সেই ভয়াল ঘূর্ণিঝড়ের পরে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে গিয়েছিলেন দুর্গত অঞ্চলে।

মঞ্চস্থ হয় পল্টন ময়দানে, ১৯৭১-এর উত্তাল মার্চে। উন্মেষ ও প্রগতিশীল অন্যান্য সংগঠনের কর্মীরা নাটকটিতে অভিনয় করেছিলেন। ‘লাল তারার কাহিনী’ গণচীনের ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ৫ অক্টোবর, ১৯৭৯ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয়। আজালিয়া পর্বতের প্রকাশকাল ১৯৭৮। চীন মৈত্রী সমিতি-র সংকলন ‘আহ্বান’-এ প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৭৮ সালেই। মহসিন শস্ত্রপাণি আজীবন গণমানুষের মুক্তির সংগ্রামে সাংস্কৃতিক লড়াই চালিয়ে গেছেন। এ সংকলনে প্রকাশিত নাটকগুলো সে কথাই আবার মনে করিয়ে দেয়। বইটির অনবদ্য ভূমিকা লিখেছেন উন্মেষ সাহিত্য-সংস্কৃতি সংসদে তার ঘনিষ্ঠ সহযাত্রী কবি মুনির সিরাজ।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫