Logo
×

Follow Us

শিল্প-সাহিত্য

যদি কেউ বুড়ো বলে...

Icon

সুমন্ত আসলাম

প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০২২, ১৪:১৮

যদি কেউ বুড়ো বলে...

প্রতীকী ছবি

বুড়ো হয়ে গেছেন আপনি? যারা নিজেদের বুড়ো হিসেবে স্বীকার করতে চান না, তাদের নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। যারা বুড়ো হয়ে গেছেন এবং সদর্পে তা স্বীকার করেন তাদের জন্যই এই প্যাঁচাল। অবশ্য আরও একদল আছেন যারা নিশ্চিত নন তারা বুড়ো হয়েছেন কিনা। যদি আপনি এই দলে পড়ে থাকেন তাহলে মনে মনে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিন, নিশ্চিত হয়ে যাবেন।

১. আপনি কি ইদানীং ‘আমাদের সময়ই ভালো ছিল...’ এ জাতীয় কথা বলে ঘন ঘন দীর্ঘশ্বাস ফেলেন?

২. ‘পুরনো সেই দিনের কথা ভুলবি কিরে হায়... ’ জাতীয় গান শুনতে আজকাল বেশি পছন্দ করেন?

৩. কম্পিউটারের সামনে বসে থাকা কোনো ছেলে বা মেয়েকে দেখলে দীর্ঘ প্যাঁচালে মেতে ওঠেন, ‘তোরা এখন জন্মেই কম্পিউটারের সামনে বসে পড়িস, আমাদের সময় তো দশটা মহল্লা খুঁজলে একটা টেলিভিশন পাওয়া যেত, তাও আবার সাদা-কালো ... ইত্যাদি ইত্যাদি?’

উপরোক্ত প্রশ্ন তিনটির উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে আপনি নিশ্চিতভাবে বুড়োদের খাতায় নাম লিখিয়েছেন। 

তো যাই হোক, যারা বুড়ো হয়েছেন, আমার সব গেল বলে হায় হায় করছেন কিংবা বর্তমানটাকে নিজের নয় ভেবে কেবল অতীত নিয়ে পড়ে আছেন, তাদের জন্য একটা গল্প বলি- সামাদ সাহেবের গল্প। বিরানব্বই বছর বয়সে এসে বিপত্নীক সামাদ সাহেব রেবেকা খানম নামের একজন ডিভোর্সি মহিলার প্রেমে পড়লেন, যার বয়স ঊননব্বই বছর। বয়সটাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে তারা দু’জনেই সিদ্ধান্ত নিলেন- বিয়ে করবেন। বিয়ের সিদ্ধান্তে তারা এতটাই উত্তেজনা বোধ করলেন যে, দু’জনে মিলে হাজির হলেন একটা ফার্মেসিতে। ক্যাশ কাউন্টারে বসা লোকটাকে সামাদ সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনি কী এই ফার্মেসির মালিক?’

‘জ্বি।’ লোকটি উত্তর দিল।

‘আপনাদের এখানে কি হৃদরোগের ওষুধ পাওয়া যায়?’

‘হ্যাঁ, হ্যাঁ অবশ্যই।’

‘বাতজ্বর, আর্থ্রাইটিস কিংবা স্মৃতিশক্তি ফিরে আসার ওষুধ?’

‘সব ওষুধই আছে, বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির।’

‘ভিটামিন, ঘুমের ওষুধ, পারকিনসন রোগের ওষুধ, এগুলো পাওয়া যায় তো?’

‘অবশ্যই, শুধু তাই না, আমরা সকল রকমের হুইল চেয়ার এবং ওয়াকারও বিক্রি করে থাকি।’

সামাদ সাহেব এবার নিশ্চিন্ত হয়ে শ্বাস ছাড়লেন। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রেবেকা খানমকে দেখিয়ে লোকটিকে বললেন, ‘আমরা বিয়ে করব বলে ঠিক করেছি। যদি কিছু মনে না করেন, আমরা এই ফার্মেসিতে বসে বিয়েটা রেজিস্ট্রি করতে চাই।’

যারা বুড়ো বয়সে বিয়ে করতে চান; কিন্তু ভয়ে আছেন বিয়ের উত্তেজনাটা ঠিক সইতে পারবেন কিনা, তারা সামাদ সাহেবের মতো সাবধানতা অবলম্বন করে বিয়েটা সেরে ফেলতে পারেন।

কেউ বুড়ো বয়সে বিয়ে করছেন আবার কেউবা বিয়ে করে সস্ত্রীক বুড়ো হচ্ছেন। এরকমই এক ভদ্রলোক ষাট বছর বয়সে এসে পাশে বসে থাকা স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবছেন- আজ থেকে ত্রিশ বছর আগে যখন আমার কেবল সস্তা বাড়ি আর সেকেন্ডহ্যান্ড গাড়ি ছিল, তখন একটা পুরনো সোফায় আমার পাশে বসে সাদাকালো টেলিভিশন দেখত একটা পঁচিশ বছর বয়সী টগবগে তরুণী। আর এখন আমি দু-দুটো বাড়ি, নতুন গাড়ির মালিক হয়েও চকচকে সোফায় বসে ফ্ল্যাটস্ক্রিন টেলিভিশন দেখতে হয় একজন পঞ্চান্ন বছর বয়সী বৃদ্ধাকে পাশে নিয়ে।

ভাগ্য ভালো কথাগুলো ভদ্রলোক মনে মনে ভাবছিলেন।

সবাই যে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে সঙ্গী বা সঙ্গিনীকে নিয়ে আফসোস করেন, তা কিন্তু নয়। কোনো কোনো দম্পতি আছেন, যারা সারাজীবনে হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখসহ সবকিছু ভাগাভাগি করতে করতে শেষ বয়সে এসে ভাগাভাগিটা তাদের অভ্যেসে দাঁড়িয়ে যায়। এরকমই এক বুড়ো দম্পতি একদিন রেস্টুরেন্টে গেছেন খাবার খেতে। তারা সেখানে একটা বার্গার, এক প্লেট ফ্রেঞ্চফ্রাই আর এক গ্লাস ফলের রস নিলেন। তারপর বুড়ো ভদ্রলোক অর্ধেক বার্গার আর অর্ধেকটা ফ্রেঞ্চফ্রাই তুলে দিলেন তার স্ত্রীর প্লেটে। গ্লাস থেকে অর্ধেকটা ফলের রসও ঢেলে দিলেন স্ত্রীর গ্লাসে। পাশের টেবিলে বসে এক অল্পবয়সী ছেলে ব্যাপারটা খেয়াল করছিল। সে ভাবল, দু’জনের জন্য আলাদা খাবার নেওয়ার মতো যথেষ্ট টাকা হয়তো ভদ্র লোকের নেই। ছেলেটি বৃদ্ধ দম্পতিটির কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল, ‘কিছু যদি মনে না করেন, আপনারা আরেকটা করে খাবার নিতে পারেন, দামটা আমিই দিয়ে দেব।’

বৃদ্ধ লোকটি বিনয়ের সঙ্গে প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করে বললেন, ‘না, না, ঠিক আছে, আমরা ভাগাভাগি করে খেতেই অভ্যস্ত।’

অগত্যা ছেলেটি তার টেবিলে ফিরে আসল আর তাদের লক্ষ্য করতে লাগল। দেখল, বৃদ্ধ লোকটি খুব ধীরে ধীরে বার্গারটি খাওয়া শেষ করে এরপর ফ্রেঞ্চফ্রাই খাওয়া শুরু করেছেন; কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো ভদ্র মহিলা কোনো খাবারই মুখে দিচ্ছেন না, কেবল একটু পরপর ফলের রসে দু-একটা চুমুক দিচ্ছেন। তাই দেখে ছেলেটি আবার উঠে গেল দম্পতিটির কাছে এবং আবার একই অনুরোধ করল। বৃদ্ধ লোকটি আবারও একই কথা বলে অনুরোধটি প্রত্যাখ্যান করলেন। তখন ছেলেটি আর চুপ থাকতে না পেরে বৃদ্ধ মহিলাটিকে জিজ্ঞেস করে বসল, ‘মানলাম আপনারা ভাগাভাগি করে খেতে অভ্যস্ত; কিন্তু আপনি না খেয়ে বসে আছেন কেন? কীসের অপেক্ষা করছেন আপনি?’ 

বৃদ্ধ মহিলাটি শান্ত কণ্ঠে জবাব দিলেন, ‘দাঁতের। উনি খাওয়া শেষ করে দাঁতটা খুলে আমাকে দেবেন, তারপর আমি খাব।’ 

বুড়ো বয়সের নানারকম ঝক্কি-ঝামেলা থাকলেও কেউ কেউ বেঁচে থাকতে চান দীর্ঘ দিন। এরকমই এক ভদ্রলোক গেছেন ডাক্তারের কাছে, ‘ডাক্তার সাহেব, আমি একশ’ বছর বাঁচতে চাই। এ জন্য আমাকে কি করতে হবে?’

‘সিগারেট, মদ আর নারীসঙ্গ সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করতে হবে।’ ডাক্তার ঝটপট জবাব দিলেন।

‘ঠিক আছে, ঠিক আছে। তাহলে আমি একশ’ বছর বাঁচব তো?’

‘না, ঠিক তা নয়। তবে আপনার মনে হবে আপনি একশ’ বছর বেঁচে আছেন।’ ডাক্তারের নির্বিকার উত্তর।

সিগারেট, মদ আর নারীসঙ্গবিহীন জীবন কতটা দীর্ঘ, তা পুরুষরা ঠিক বলতে পারবেন।

আর একদল লোক আছেন, যারা বেঁচে থাকতে চান অনেক বছর কিন্তু কিছুতেই চান না তাদের বয়স বাড়ুক। এ দলের লোকজন অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক এবং তারা বাংলাদেশের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত। সারা জীবনব্যাপী তারা থাকতে চান চির নবীন, চির তরুণ, চির যুবা। কারণ এর ফলে বাংলাদেশের যে কোনো রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হওয়া যাবে এবং পাওয়া যাবে যা খুশি তা করার ছাড়পত্র। মন্ত্রিত্ব পেয়ে যাওয়াও অস্বাভাবিক কিছু নয়, কারণ সেক্ষেত্রেও আজকাল তরুণদের অগ্রাধিকার।

কিন্তু সার্টিফিকেটে জন্ম তারিখ যতই পেছানো হোক না কেন, বয়স কিন্তু ঠিকই বেড়ে যাচ্ছে। তাই সব প্যাঁচালের প্যাঁচকথা হলো এই- বেঁচে থাকতে থাকতে বুড়ো হোন, বুড়ো হতে হতে বেঁচে থাকুন। 

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫