
প্রতীকী ছবি
ভার্জিলিও পিনেরার জন্ম ১৯১২ সালের ৪ আগস্ট কিউবার কারডেনাসে। তিনি একাধারে লেখক, নাট্যকার, কবি, ছোটগল্পকার এবং প্রাবন্ধিক ছিলেন; কিন্তু প্রকাশ্যে সমকামিতার জন্য তিনি তার সাহিত্যজীবনে বিখ্যাত হতে পারেননি, বরং কুখ্যাত হয়েছেন। সমকামিতার দায়ে ১৯৬১ সালে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। কারাগার থেকে ফেরার পর বাকি জীবন লেখালেখি করেই কাটিয়েছেন, কোনো লেখা প্রকাশ হবে না জানা সত্ত্বেও। ১৯৭৯ সালের ১৮ অক্টোবরে হাভানায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তার লিখে যাওয়া ৪৩টি গল্প নিয়ে ‘কোল্ড টেলস্’ নামক বইটি প্রকাশিত হয়।
ফ্ল্যাটের দরজা খুলে দেখি আমার প্রতিবেশী তার ফ্ল্যাটের সামনে দাঁড়ানো। যেহেতু দুজনের ফ্ল্যাটের মাঝখানের করিডোরটি বেশ বড়, সেহেতু প্রথম দেখায় আমি ঠিক বুঝলাম তার গায়ে কী পোশাক। একটু কাছ থেকে লক্ষ করে দেখলাম, কাঁধ থেকে নিচের মেঝে পর্যন্ত অসংখ্য ভাঁজওয়ালা একটি অন্তরীপ (হাতা কাটা লম্বা কোট)। পোশাক লক্ষ করতে গিয়ে আমি একটা বিশাল ধাক্কা খেলাম; দেখি বাঁ হাতের যেখানে শুরু ঠিক সেইখানে কাপড়টা চুপসানো, ডান হাতের থেকে একেবারেই ভিন্ন এবং দৃষ্টিকটু। দেখে বোঝাই যাচ্ছে যে বাম হাতটি নেই।
এই বিষয়ে তাকে কিছু জিজ্ঞেস করব কি করব না, এই দ্বিধায় থাকতে থাকতে সে তার বাসার মধ্যে ঢুকে গেলেন, এবং অন্তরীপের শেষ লেজটুকুও দরজার ফাঁক দিয়ে ঢুকে গেল। আমি সেখানে দাঁড়িয়েই তার বাম হাতের চুপসানো অংশটুকুর কথা ভাবতে থাকি। এই ভাবনা আমাকে কোথাও নিয়ে যাওয়ার আগেই আমার প্রতিবেশী আবার দরজা খুলে বেরিয়ে আসেন।
এবার আমি দ্রুত তার বাম হাতের দিকে তাকালাম এবং অভ্যাসবশত ডান হাতের দিকেও, এবার ঠিক সেখানেও কাপড়টি একইভাবে চুপসানো। এইবার প্রতিবেশী আমাকে অবাক হওয়ার বিলাসিতাটুকুও করতে দিলেন না, তার আগেই দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দে টের পেলাম যে সে আবার ভেতরে ঢুকে গেছেন। কিংবা সেই শব্দেই আবার দরজা খুললেন, তিনি আবার বাইরে আসলেন, এবার তার বাম উরুর শুরুতে কাপড়ে বিশাল গর্ত দেখা গেল। আবার দরজার শব্দ তার আবার প্রস্থান ঘোষণা করল, চতুর্থবারের মতো।
এবারের প্রস্থানে গতবারের আশ্চর্য ফিকে করে দিল, কেননা এবার বের হওয়ার পর দেখি, অন্তরীপটি তার পাছার উপরে দারুণভাবে ফিট হয়ে আছে কিন্তু পাছার নিচে কাপড়ের এমন জবুথবু অবস্থা যে, দেখে মনে হচ্ছে এর নিচে আর কোনো অঙ্গ বিস্তারই করেনি। আমি ভাবলাম দরজা বন্ধের আরেকটি শব্দে হয়তো আরেকটি ব্যাখ্যা পাব; কিন্তু দরজা আরেকবার বন্ধ হয়ে এই রহস্য আরো বাড়িয়ে দিল। এবার সম্পূর্ণ বক্ষঃগহ্বরের অংশটুকুর জবুথবু অবস্থা, অন্তরীপটি যেন শুধু কাঁধ থেকে ঝুলে আছে।
আরো সঠিকভাবে বললে, গলার ঠিক নিচে থেকে অন্তরীপটি ঝুলে আছে। সেই সময়টায় আকাশ একদম পরিষ্কার, আকাশে মস্ত বড় সূর্য, এবং আমার প্রতিবেশীর মাথার উপর সুরক্ষিত ছাদ। এমন সময় সে সপ্তমবারের মতো তার ঘরে প্রবেশ করল। যৌক্তিকভাবে আমি অষ্টমবারের জন্য অপেক্ষা করছিলাম, কিন্তু আগের তুলনায় বেশি সময় চলে গেল, এবং দরজা খোলার কোনো ইঙ্গিত পেলাম না। এবার আমি নিজেকে প্রচণ্ডভাবে তার দরজায় নিক্ষেপ করলাম, ভয়ঙ্কর ধাক্কা দিলাম। ভেতরের দেয়ালে দেখি বড় বড় তীক্ষ্ণ গজালে মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ঝুলে আছে। দুই হাত (ডান, বাম), বুক, কোমর, দুই পা (ডান, বাম), সব এক এক করে সাজানো।
আমি খুব বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলাম না, শুধু শুনলাম আমার প্রতিবেশী আমাকে অনুরোধ করছিল খালি জায়গাটিতে তার পড়ে থাকা মাথাটা ঝুলিয়ে দেওয়ার জন্য। তার অনুরোধে আমি সাবধানে মাথাটি নিয়ে সবচেয়ে উপরের গজালে ঝুলিয়ে দিলাম। আর যেহেতু অন্তরীপটির আর সেখানে কোনো কাজ নেই, সেটা গায়ে জড়িয়ে আমি রাজার হালে দরজা দিয়ে বেরিয়ে এলাম।
ভাষান্তর : মাইশা তাবাসসুম