জসীমউদ্দীন তার বউয়ের লজ্জামিশ্রিত হাসি উপহার পেয়েছিলেন

শোয়াইব আহম্মেদ
প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:৩৭

জসীমউদ্দীন। ছবি: সংগৃহীত
আধুনিক বাংলা কাব্যসাহিত্যে রূপময় বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি জসীমউদ্দীন বাংলার পল্লীপ্রকৃতি ও গ্রামবাংলাকে প্রধান বিষয় করে কাব্য রচনার মাধ্যমে সাহিত্যের ইতিহাসে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছেন। আজ এই নন্দিত কবির বাল্যজীবনের তিনটি মজার ঘটনা তুলে ধরা হলো। লিখেছেন, শোয়াইব আহম্মেদ।
ছোটোবেলায় জসীমউদ্দীনের ইচ্ছে ছিল মৌলবী হওয়ার। প্রতিবার মায়ের কাছে অপরাধ করে বকা খেয়ে তিনি তার পিতার বইপত্র বগলে ঝুলিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিতেন। তখনো বাড়ি থেকে বেশি দূর যাওয়ার সাহস হয়নি। বকুনি খেয়ে বাড়ির সামনের ছনক্ষেতে দাঁড়িয়ে থাকতেন। তার বাবা এসে অনেক সাধ্যসাধনা করে তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যেতেন।
ফরিদপুরের আদালতচত্বরে এক লোক নারিকেলের বরফি বিক্রি করতেন। জসীমউদ্দীন একদিন নিজের পাঠ্যবই বন্ধক রেখে দুই আনার বরফি কিনে খেলেন। তারপর হলো মুশকিল। কোনোভাবেই পয়সা জোগাড় করতে পারলেন না তিনি। পয়সা দেওয়ার ভয়ে অনেক দিন সেই পথে যাওয়া-আসাও বন্ধ করে দেন। বহুদিন পর কোনো একটা জিনিস বাজারে বিক্রি করে দুই আনা নিয়ে হাজির হলেন আদালত চত্বরে। বরফিওয়ালাকে পয়সা দিয়ে বই ফেরত চাইলে দোকানি বলল- ‘তোমার দেখা না পেয়ে বইগুলো ছিঁড়ে ঠোঙা বানিয়েছি।’ এ কথা শুনে কবির মাথায় হাত! এখন তিনি পড়ালেখা করবেন কীভাবে, আর পরীক্ষাই দিবেন কী করে!
গ্রামে এক কাকচরিত ব্রাহ্মণ আসতেন। বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে লোকের হাত দেখাই ছিল তার কাজ। তিনি গ্রামে আসলে তার সঙ্গে সঙ্গে ঘুরতেন জসীমউদ্দীন। গ্রামের কেউ ব্রাহ্মণের নামে নিন্দা করলে গোপনে সে কথা বলে দিতেন। ব্রাহ্মণ পরদিন হাত দেখার সময় ঐ নিন্দার কথাও বলতেন। এ দেখে লোকে বলাবলি করত, ‘দেখো ঠাকুরের কত কেরামতি, মনের কথা সব জানে!’
ঠাকুরকে একবার জসীমউদ্দীন তার বাগান দেখাতে নিয়ে গেলেন। বাগান দেখে ঠাকুর বেশ খুশি হলেন। পাতাবাহার গাছের সামনে এসে কানে কানে ঠাকুর বললেন, “এই গাছগুলোর কাছে আসিয়া তুমি মনে মনে বলবে- ‘এই পাতাবাহারের মতো সুন্দর একটি বউ যেন আমার হয়।’” এর পর থেকে বাগানে পানি দিতে এসে লজ্জায় রাঙা হয়ে যেতেন কবি। আর মাঝে মাঝে দুই-একবার মনে মনে বলতেন- ‘গাছ, তোমার মতো সুন্দর বউ যেন আমার হয়!’ বিয়ের পর এই গল্প জসীমউদ্দীন তার বউকে বলে লজ্জামিশ্রিত হাসি উপহার পেয়েছিলেন।