Logo
×

Follow Us

শিল্প-সাহিত্য

নারীগণ

Icon

সাদত হাসান মান্টো

প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০২২, ১৩:২৭

নারীগণ

সাদত হাসান মান্টো। ছবি: সংগৃহীত

সাদত হাসান মান্টো এই উপমহাদেশের একজন শক্তিমান, সাহসী বিদ্রোহী ও বিতর্কিত লেখক। জন্ম ১৯১২ সালের মে, লুধিয়ানার সামরালায়। মাত্র ৪৩ বছর বয়সে লাহোরে প্রয়াত হন। ২২টি গল্পগ্রন্থ, একটি উপন্যাস, ৫টি বেতার নাটক, ৩টি প্রবন্ধের বই, ২টি নকশা ও অসংখ্য চিত্রনাট্যের রচয়িতা তিনি।

সাদত হাসান মান্টো প্রণীত ‘শিকারি আওরত’ গ্রন্থটি ১৯৫৫ সালে প্রকাশিত হয়। বইটিকে পরম বিনোদনসমৃদ্ধ ও আনন্দোচ্ছ্বাসপূর্ণ এক বিস্মৃত আধুনিক ক্ল্যাসিক বলে অভিহিত করা হয়।  গ্রন্থটির অধিকাংশ গল্পেই নারীরা নিগৃহীত বা কোনো ঘটনার শিকার নয়, বরং তারা স্মার্ট, চতুর, আস্থাশীল এমনকি প্রতিশোধপ্রবণ। মান্টোর গল্পে সবসময় প্রতিফলিত হয়েছে সামাজিক-রাজনৈতিক, অবক্ষয়, ভণ্ডামি, উন্মত্ততা আর সময়ের বিষাদ ও হতাশায় ভরা কৌতুক। ‘নারীগণ’ গল্পটিও এ গ্রন্থের অন্তর্গত।

মহারাজা গ’য়ের সঙ্গে অশোকের পরিচয় রেসের মাঠে। সেই থেকে তারা একে অপরের জানের বন্ধু। রেসের ঘোড়ার মালিকানা মহারাজা গ’য়ের শুধু শখ নয় রীতিমতো আবেশ, বিমুগ্ধকর একটা অবস্থা। তাঁর বিশাল আস্তাবলে উন্নত জাতের নানান রকমের ঘোড়া। বিরাট তাঁর সুরম্য অট্টালিকা যার চূড়াটা দেখা যায় দূরের রেসকোর্স ময়দান থেকে, যেখানে থরে থরে সাজানো বহুবিধ শিল্পকর্ম, নানা ধরনের নানান হাতের।

অশোক প্রথম যখন মহারাজার প্রাসাদ পরিদর্শনে যায় তিনি স্বয়ং তাকে সঙ্গে করে প্রাসাদে রক্ষিত অ্যান্টিক শিল্পকর্মগুলো দেখিয়েছিলেন। এইসব শিল্পকর্ম তিনি পৃথিবীর নানা স্থান থেকে সংগ্রহ করেছেন অনেক যত্নে। মহারাজার শিল্প সংগ্রহ দেখে অশোক মুগ্ধ। রেসের কিছু কৌশল জানার জন্য অশোক একদিন মহারাজার প্রাসাদে গিয়ে হাজির হলো। মহারাজা একটা সিনেমা দেখছিলেন অন্ধকার ঘরে বসে। অশোককে ওই ঘরে যেতে আমন্ত্রণ জানালেন। ছবিটা ১৬ মিলিমিটার ফিল্মে তোলা। মহারাজা নিজের ক্যামেরা দিয়ে শুট করেছেন। প্রজেক্টর চালু হতেই শেষ রেসের দৃশ্য পর্দা থেকে মিলিয়ে যাচ্ছিল। মহারাজার ঘোড়া ওই রেসে জিতেছিল।

অশোকের অনুরোধে মহারাজা আরও কয়েকটা ছবি দেখালেন সুইজারল্যান্ড, পারি, নিউইয়র্ক, হোনোলুলু আর কাশ্মীর উপত্যকার ছবি। রঙিন ওই ছবিগুলো দেখে অশোক খুব আনন্দ পেল। অশোকের নিজেরও ১৬ মিলিমিটারের ক্যামেরা ও প্রজেক্টর আছে। তবে তার কাছে এত ছবি নেই। এ রকম ছবি দেখার সময়ই সে পায় না। কয়েকটা ছবি দেখানোর পর মহারাজা ঘরের আলো জ্বালিয়ে অশোকের উরুতে একটা থাপ্পড় মেরে বললেন, ‘কী হে, দিনকাল কেমন যাচ্ছে?’ সিগারেট ধরিয়ে অশোক বলল, ‘সব রং তামাশা।’ ‘আরও ছবি দেখবে নাকি?’ জিজ্ঞেস করলেন মহারাজা। অশোক মানা করল। তারপরও মহারাজা জোর করলেন, ‘না। এই ছবিটা তোমার দেখা উচিত।’ ছোট একটা বাক্স থেকে রিল বের করে প্রজেক্টরে চাপিয়ে দিলেন তিনি। একটু ধৈর্য ধরে দেখতে হবে।’

‘তার মানে?’

মহারাজা বাতি নিভিয়ে দিলেন। বললেন, ‘সবকিছু খুব ভালো করে দেখবে। সতর্কতার সঙ্গে।’ প্রজেক্টর চালিয়ে দিলেন তিনি। কিছু সময়ের জন্যে পর্দায় সাদা আলো বিচ্ছুরিত হলো। তারপর হঠাৎ সেখানে ছবি ফুটে উঠল : একজন নগ্ন যুবতী সোফায় শুয়ে আছে, অন্যজন ড্রেসিং টেবিলের সামনে চুল আঁচড়াচ্ছে। অশোক নীরবে ছবি দেখছিল। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ তার গলা থেকে অদ্ভুত একটা আওয়াজ বেরিয়ে এলো। মহারাজা হেসে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী হলো?’ কাঁপা কাঁপা গলায় সে বলল, ‘থামাও, থামাও।’

‘কী থামাব?’

অশোক উঠে যেতে উদ্যত হতেই মহারাজা তাকে বসিয়ে দিয়ে বললেন, ‘পুরো ছবিটা তোমার দেখা উচিত।’

আবার ছবি চলছিল। পর্দাজুড়ে নগ্ন নাচের উদ্দামতা। নারী-পুরুষের অবাধ যৌনতা। খুবই অস্বস্তির সঙ্গে দেখছিল অশোক। ছবির শেষে আবার সেই সাদা আভা ফুটে উঠলে অশোক ভাবল প্রজেক্টরে প্রদর্শিত কোনো ছবি সে দেখছিল না সবই ছিল তার কল্পনা।

আলো জ্বালিয়ে মহারাজা গ অশোকের দিকে তাকিয়ে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন।

‘হয়েছে কী অ্যাঁ?’

অশোক তার নিজের আসনে সংকুচিত হয়ে বসে আছে। ঘরে হঠাৎ করে আলো জ্বলে ওঠায় তার চোখ কুঁচকে গেছে। কপালে দেখা দিয়েছে বিন্দু-বিন্দু ঘাম। মহারাজা হাসিতে ফেটে পড়ে তার উরুতে এমন জোরে একটা থাপ্পড় মারলেন যে, তার চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগল। রুমাল দিয়ে কপাল ও চোখ মুছে অশোক বলল, ‘কিছু না দোস্ত।’

‘কিছু না মানে? ছবিটা কি তুমি উপভোগ করোনি?’

অশোকের গলা ধরে এসেছে। শুকনো কণ্ঠে বলল, ‘এ ছবি তুমি কোথা থেকে সংগ্রহ করেছ?’

সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে মহারাজা বললেন,

‘পারি, পারি...’

অশোক মাথা ঝুঁকিয়ে বলল, ‘ও আচ্ছা। কিন্তু আমি কিছুতেই বুঝতে পারছি না,...’

‘কী?’

‘মানে, এই মানুষগুলো ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে কী করে...?’

‘খুব মজার না ব্যাপারটা?’

অশোক রুমালে চোখ মুছে বলল, ‘হয়তো। মনে হলো ছবিগুলো আমার চোখে আঘাত হেনেছে।’ মহারাজা উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘একবার তো আমি কয়েকজন মহিলাকেও এ ছবি দেখিয়েছি।’

অশোক আঁতকে উঠে বলল, ‘মহিলাদের?’

‘হ্যাঁ, মহিলাদের। তারা তো ছবিটা দারুণ উপভোগ করেছে।’

‘হতে পারে তোমার কথা সত্যি।’

মহারাজা প্রচন্ড গুরুত্বের সঙ্গে বললেন, ‘আমি সত্যি কথাই বলছি তোমাকে। একবার দেখার পর তারা আবার দেখতে চেয়েছে। তারা চোখ বন্ধ করে চিৎকার চেঁচামেচি করেছে আর প্রচণ্ড হাসিতে ফেটে পড়েছে।’

অশোক মাথা নাড়িয়ে বলল, ‘শুধু ওইটুকুই? আমি তো ভেবেছিলাম তারা অজ্ঞান হয়ে যাবে।’

প্রথমে আমিও তাই ভেবেছিলাম। পরে দেখলাম তারা খুব মজা করেছে।

‘তারা কি ইউরোপিয়ান নারী?’

‘আরে ধুর, কী যে বলো। এরা সবাই আমাদের দেশের মেয়ে। সত্যি কথাটা হলো- ওরাই ছবিটা জোগাড় করে আনে আর প্রজেক্টর দিয়ে অনেকবার দেখে। তাদের কত বান্ধবী যে ছবিটা দেখেছে তা বলা সম্ভব না আমার পক্ষে।’

‘আমি বলি কি- অশোক বলতে গিয়েও থেমে যায়।

‘কী বলতে চাচ্ছ অশোক?’

‘ক’দিনের জন্যে ছবিটা আমাকে ধার দিতে পারো?’

মহারাজা তার পাঁজরে একটা খোঁচা মেরে বললেন, ‘নিশ্চয়ই। কাদের দেখাবে?’

‘বন্ধুদের।’

মহারাজা গ প্রজেক্টর থেকে রিল বের করতে করতে বললেন, ‘নিয়ে যাও আর তোমার যাকে খুশি দেখাও। কোনো আপত্তি নেই আমার।’ মহারাজা গ প্রজেক্টর থেকে রিল বের করে বাক্সে ভরে অশোকের হাতে দিলেন। বললেন, ‘নিয়ে যাও। সবাইকে নিয়ে উপভোগ করো।’

বাক্সটা হাতে নিতেই অশোকের শিরদাঁড়া বেয়ে একটা শিহরণ তিরতির করে নিচে নেমে গেল। ঘোড়া নিয়ে যেসব কথা সে বলতে চেয়েছিল তা ভুলে গেল সে। একটা দুটো কথা বলে দ্রুত প্রস্থান করল সে। 

অশোক তার বেশ কজন বন্ধুকে ছবিটা দেখাল। নারীদের এই নগ্নতা ছিল তাদের কাছে সম্পূর্ণ নতুন। অশোক সবার প্রতিক্রিয়া আলাদা আলাদা ভাবে জেনে নিল। কেউ কেউ সামান্য উত্তেজিত ও বিরক্ত হলেও প্রতিটি দৃশ্য খুব ভালো করে পর্যবেক্ষণ করেছে। কেউ আবার একটুখানি দেখেই চোখ বন্ধ করে ফেলেছে। কেউ চোখ খোলা রেখেও সিনেমাটি উপভোগ করতে পারেনি। অনেকে আবার সহ্য করতে না পেরে মাঝপথে উঠে গেছে।

কয়েক দিন পর অশোক ভাবল ছবিটা এবার ফেরত দিয়ে দেবে। তখনই সে ভাবল সিনেমাটা তার স্ত্রীকেও দেখাবে। প্রজেক্টর ও রিল সে বাড়িতে নিয়ে গেল। রাতে দরজা বন্ধ করে প্রজেক্টরে রিল ঢুকিয়ে স্ত্রীকে ডাকল। আলো নিভিয়ে সিনেমা চালিয়ে দিল সে। পর্দাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ল সাদা আলো, তারপর ধীরে ধীরে ছবি ফুটে উঠল। অশোকের স্ত্রী দেখে চিৎকার করে উঠল। রীতিমতো কাঁপতে লাগল সে। এক লাফে সরে গেল ওখান থেকে। তার মুখ থেকে বেরিয়ে এলো অদ্ভূত এক ধরনের শব্দ। অশোক তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করল। কিন্তু তার বউ চিৎকার করেই চলল- বন্ধ করো শিগগির বন্ধ করো এসব। অশোক হেসে বলল, ‘আরে দেখো না। এত লজ্জা পাওয়ার কী আছে?’

তার কথায় কর্ণপাত না করে সে দ্রুত কেটে পড়ল ওখান থেকে। অশোক তাকে ফিরিয়ে এনে নিজের কাছে টানার চেষ্টা করল। দুহাতে মুখ ঢেকে রেখেছিল সে। অশোক তার হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলে কাঁদতে শুরু করল সে। হতবিহ্বল অশোক থামল এবার। একটুখানি বিনোদন লাভের জন্যেই সে স্ত্রীকে ছবিটা দেখাতে চেয়েছিল। কেঁদে কেটে অস্থির হয়ে বিড়বিড় করতে করতে অন্য ঘরে চলে গেল সে। উদাস দৃষ্টিতে অশোক পর্দায় চলতে থাকা নগ্ন ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে রইল। পাত্র-পাত্রীরা তখন যৌন-উন্মত্ততায় লিপ্ত হয়েছে। আর তখনই অশোক পরিস্থিতির নাজুকতা বিষয়ে সচেতন হলো। এই উপলব্ধি তাকে এক ধরনের গ্লানির ভেতরে নিয়ে গেল। তখন তার মনে হলো সাংঘাতিক লজ্জাকর একটা কাজ করে ফেলেছে সে। অস্বস্তিতে ভুগে ভুগে সে ভাবল, এই উপলব্ধিটা তার আগে হলো না কেন? বন্ধুদের ছবিটা দেখিয়েছে তা ঠিক আছে। কিন্তু বাড়িতে এনে নিজের বউকে দেখানোটা কতটা যুক্তিসঙ্গত হয়েছে? রীতিমতো ঘামতে লাগল অশোক। ছবিটা তখনো চলছিল। নগ্ন নারীরা পর্দাজুড়ে হল্লোড় করে নাচছে। অশোক প্রজেক্টর বন্ধ করে দিল। লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে আসছিল তার। অবাক হয়ে ভাবছিল স্ত্রীকে কী করে মুখ দেখাবে সে? গাঢ় অন্ধকারে ডুবে আছে ঘরটা। একটা সিগারেট ধরিয়ে গ্লানি আর অস্বস্তি থেকে রেহাই পেতে অন্যকিছু ভাবার চেষ্টা করল অশোক। কিন্তু পারল না। মনটাকে অন্যদিকে ঘোরানোর জন্যে প্রাণপণ চেষ্টা চালাল সে। কিন্তু তাতেও যখন ব্যর্থ হলো এক অদ্ভুত ইচ্ছে তার হৃদয়ে ঝলসে উঠল। ঘরের অন্ধকারের মতো মনেও তার অন্ধকারের কালিমা লিপ্ত হয়ে আছে।

তখন সে ভাবল এই ঘটনার কথা যদি তার শাশুড়ির কানে যায় তাহলে কী হবে? যদি জানতে পারে তার শ্যালিকা? কী ভাববে তাকে? আমি কি তাদের কাছে এক বিকৃত রুচির মানুষে পরিণত হব না, নিজের স্ত্রীর কাছেও কি এক অশ্লীল রুচির মানুষ হিসেবে প্রতিভাত হব না? ইত্যাকার ভাবনার পীড়নে সে আরও একটা সিগারেট ধরাল। যে-নগ্ননারীদের ছবি সে বহুবার দেখেছে তারা তার চোখের সামনে এসে নৃত্য করতে লাগল। তার পেছনেই সে দেখতে পেল স্ত্রীর মুখ ভেসে উঠেছে, ওই অবিশ্বাস্য নোংরা দেখে দেখে সে বিস্ময়ে হতবাক। প্রবল বেগে মাথা নাড়াতে নাড়াতে সে ঘরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে হেঁটে বেড়াতে লাগল। এতেও মন শান্ত হলো না তার। একটু পরে সে সন্তর্পণে পাশের ঘরের দরজা একটুখানি সরিয়ে উঁকি মারল। দেখল, তার স্ত্রী চাদর জড়িয়ে বিছানায় শুয়ে আছে। অনেকক্ষণ ওখানে দাঁড়িয়ে থেকে অশোক অবাক হয়ে ভাবতে লাগল কী বলে সে তার স্ত্রীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে! কিন্তু সাহস করে উঠতে পারল না। নিজের ঘরে ফিরে এসে সোফায় গা এলিয়ে দিল। অনেকক্ষণ সাত-পাঁচ ভাবল, তারপর এক সময় ঘুমিয়ে পড়ল। পরদিন ঘুম থেকে উঠলে কাল রাতের কথা নতুন করে মনে পড়ে গেল তার। স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করা সমীচীন বলে বিবেচনা করল না। নাশতা না খেয়েই অফিসে চলে গেল। অফিসে গিয়ে কাজে মন বসাতে পারল না। লজ্জা আর ভয়ানক অনুভূতি কিছুতেই সে মন থেকে তাড়াতে পারছিল না। এমন একটা অশ্লীল ব্যাপার, একবারও আমার অনুভবে এলো না? ভাবল সে। ফোন করে স্ত্রীকে জানাতে চাইল ব্যাপারটা। কিন্তু বারবার ডায়াল করেও শেষ পর্যন্ত রিসিভার রেখে দিল সে। দুপুরে বাড়ি থেকে তার লাঞ্চ নিয়ে এলো যে কাজের ছেলেটা তাকে জিজ্ঞেস করল, মেমসাহেব খেয়েছেন?

সে বলল, ‘তিনি তো বাড়িতে নেই। বাইরে গেছেন।’

‘কোথায় গেছেন?’

‘আমি জানি না, সাহেব।’

‘কখন গেছেন?’

‘এগারোটার দিকে।’

অশোকের অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল। খিদে মরে গেছে। কয়েক লোকমা খেয়ে খাবার রেখে দিল। মনটা বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে। এগারোটায় বেরিয়েছে, এখনো ফেরেনি? কোথায় গেছে? মায়ের বাড়ি? সে কি তার মাকে সব বলে দেবে? নির্ঘাত। কন্যা তার মাকে সবকিছু বলতে পারে।... হতে পারে বোনদের বাড়িতে গেছে সে। কী বলবে তারা! তারা তো আমাকে খুবই শ্রদ্ধা করে। খবরটা কতদূর অবধি ছড়াবে? এ রকম একটা বাজে ব্যাপার। অথচ আমার মাথায়ই এলো না? অফিস থেকে বেরিয়ে পড়ল অশোক। গাড়ি চালিয়ে সারা শহর পরিক্রমা করতে লাগল। কী করবে বুঝে উঠতে পারছিল না। শেষমেশ বাড়ির পথে গাড়ি চালিয়ে দিল। যা হয় হবে। যতই বাড়ি নিকটবর্তী হতে লাগল তার হৃদকম্পন বাড়তে লাগল। লিফ্টে উঠতেই শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলো তার। তিন তলায় লিফ্ট থামতেই সে ইচ্ছে করেই থমকে দাঁড়াল, আর শেষ পর্যন্ত দরজার হাতল ঘোরালো। ঘরে ঢুকতে গিয়ে লক্ষ করল তার পা চলছে না। বিড়ি হাতে তার কাজের লোকটা বেরিয়ে আসছিল। অশোককে দেখে বিড়ি লুকিয়ে সালাম দিল। অশোক ভেতরে না ঢুকে পারল না। কাজের লোকটা তার পেছন পেছন এলো। অশোক তাকে জিজ্ঞেস করল ‘মেমসাহেব কোথায়?’

‘ভেতরে, নিজের ঘরে।’

‘আর কে আছে ওখানে?’

‘ওনার বোনেরা, কোলাবার মেমসাহেব আর ওই পার্টির মাহিলারা।’

একথা শুনে অশোক ওই ঘরের দিকে এগিয়ে গেল। দরজা বন্ধ ছিল। ধাক্কা দিয়ে ঘরে ঢুকতেই সে শুনল তার স্ত্রী বলছে, ‘কে ওখানে?’

কাজের লোকটি বলল, ‘সাহেব এসেছেন।’

ঘরের ভেতর চাপা গুঞ্জন উঠল। অতঃপর বেদম হাসির শব্দ আর খুটখাট দরজা জানালা বন্ধ করার আওয়াজ। অশোক দেখল প্রজেক্টর চলছে- পর্দায় নারী-পুরুষের অস্পষ্ট ছবি, জঘন্য পাশবিকতা আর কমনায় ভরা যান্ত্রিক নৃত্যে ডুবে আছে তারা। অশোক প্রচণ্ড হাসিতে ফেটে পড়ল। ওই হাসি নিয়ন্ত্রণ করার কোনো রকম সাধ্য তার ছিল না।


ভাষান্তর : দিলওয়ার হাসান

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫