Logo
×

Follow Us

শিল্প-সাহিত্য

আগাথা ক্রিস্টি রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হওয়ার পর

Icon

আহমেদ ইশতিয়াক

প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২২, ১৪:০৫

আগাথা ক্রিস্টি রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হওয়ার পর

আগাথা ক্রিস্টি। ছবি: সংগৃহীত

১৯২৬ সালে বিখ্যাত অপরাধ বিষয়ক লেখক আগাথা ক্রিস্টি তার বার্কশায়ারের বাড়ি থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন এবং ১১ দিন পর কয়েকশো মাইল দূরের এক হোটেল থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনা নিয়ে ইতিহাসবিদরা দীর্ঘদিন ধরেই মাথা ঘামাচ্ছেন।

জনপ্রিয় গোয়েন্দা চরিত্র মিস মার্পল এবং হারকিউল পোয়রোটের স্রষ্টা আগাথা ক্রিস্টি সর্বমোট ৬৬টি গোয়েন্দা উপন্যাস লিখেছিলেন। এজন্যে তাকে ‘কুইন অব ক্রাইম’ নামেও ডাকা হতো। বিবিসির ইতিহাসবিদ লুসি ওয়ার্সলির বিশ্বাস, তিনি আগাথা ক্রিস্টির এই ব্যাখ্যাতীত অন্তর্ধানের কারণ খুঁজে পেয়েছেন। তার মতে, ক্রিস্টি আসলে বিরল ধরনের এক মনস্তাত্ত্বিক জটিলতায় ভুগছিলেন। মাত্র ৩৬ বছর বয়সেই ক্রিস্টির মানসিক অবস্থা ‘fugue state' -এ এসে দাঁড়ায়। এ সময় তিনি মাঝে মধ্যেই নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারাতেন। অ্যামনেশিয়ায় আক্রান্ত ক্রিস্টির নিজের বাড়ি থেকে দূরে কোথাও চলে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দিয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে দুটো ঘটনায় ভয়ংকর রকম মানসিক আঘাত পাওয়াতেই ক্রিস্টির এমন অবস্থা হয়েছিল।    

এক. ১৯২৬ সালের এপ্রিলে, তার নিখোঁজ হওয়ার আট মাস আগে, ক্রিস্টি তার মাকে হারান। মাকে অসম্ভব রকম ভালোবাসতেন তিনি। মায়ের মৃত্যুর পর ক্রিস্টি  বিষণ্ন হয়ে পড়েন। দুই. ১৯২৬ সালেরই আগস্টে, আগাথা ক্রিস্টির স্বামী কর্নেল আর্চি ক্রিস্টি- প্রথম বিশ্বযুদ্ধের একজন পাইলট- বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেন। কারণ কর্নেল আর্চি ন্যান্সি নিল নামের এক তরুণীর প্রেমে পড়েছিলেন। আগাথা ক্রিস্টির বায়োগ্রাফি লেখার জন্যে লুসি ওয়ার্সলি অনেক দিন ধরেই ক্রিস্টির এই রহস্যজনক অন্তর্ধান নিয়ে গবেষণা করছেন। বিবিসি হিস্টোরি ম্যাগাজিনকে তিনি বলেন, ‘এই সময়ই আগাথা ক্রিস্টির মানসিক অবস্থার অবনতি হয়।’ 

লুসির ভাষ্যমতে, ‘ক্রিস্টি নিজেই তার বিষণ্নতা, স্মৃতিভ্রষ্টতা, নিদ্রাহীনতা ইত্যাদির কথা বলতেন। তিনি কোনোভাবেই স্বাভাবিক জীবনের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছিলেন না। ক্রিস্টির মানসিক অবস্থা তখন এতটাই খারাপ ছিল যে, তিনি আত্মহত্যার কথাও ভেবেছিলেন।’ সেই বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই ক্রিস্টি মানসিকভাবে ‘fugue state' -এ এসে পড়েন। ওয়ার্সলি বলেন, ‘এই বিরল অসুখে পড়লে মানুষ নিজের স্বাভাবিক সত্তাকে অস্বীকার করে অন্য একটি সত্তাকে নিজের মধ্যে ধারণ করতে চায়, যাতে সে তার বর্তমান সময়ের মানসিক জটিলতাগুলো ভুলে থাকতে পারে।’ 

১৯২৬ সালের ডিসেম্বরের ৩ তারিখে বার্কশায়ারের বাড়িতে স্বামীর সঙ্গে ক্রিস্টির প্রচণ্ড রকম ঝগড়া হয়। ঝগড়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই ক্রিস্টি তার সাত বছর বয়সী মেয়েকে চুমু খেয়ে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যান। পরদিন সকালে সারে’র নিউল্যান্ড কর্নারে এক চকের খনির পাশেই ক্রিস্টির গাড়িটি পাওয়া যায়। গাড়িতে কিছু কাপড় আর একটি মেয়াদোত্তীর্ণ ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া আর কিছুই ছিল না।

ক্রিস্টির এই নিখোঁজ সংবাদে মিডিয়ায় তোলপাড় শুরু হয়। দেশব্যাপী শুরু হয় অনুসন্ধান। ১০০০-এর বেশি পুলিশ এবং ১৫০০০-এর বেশি স্বেচ্ছাসেবক এই অনুসন্ধানে অংশ নেন। বেশ কয়েকটি বিমানও এতে ব্যবহৃত হয়। ক্রিস্টিকে খুঁজে পাওয়ার জন্যে আত্মা খুঁজে বেড়ায় এমন একজনকে ক্রিস্টির ব্যবহৃত হাতমোজা দেওয়ার খবর চাউর হলে শার্লক হোমসের স্রষ্টা, স্যার আর্থার কোনান ডয়েলও এই অনুসন্ধান-কর্মে যুক্ত হন।

অবশেষে ১১ দিন পর, ১৪ ডিসেম্বর, ইয়র্কশায়ারের হ্যারোগেটের একটি হোটেলে পাওয়া যায় আগাথা ক্রিস্টিকে। হোটেলের রেজিস্টারে তিনি নিজের নাম লিখেছিলেন, মিসেস ত্রেসা নিল। এই নিল উপাধিটি ছিল তার স্বামী কর্নেল আর্চির উপপত্নীর। 

ক্রিস্টি দাবি করেন, এই ১১ দিনে কী কী ঘটেছে, সেসবের কিছুই তার মনে নেই। এই ঘটনা নিয়ে তিনি পরবর্তীকালে আর তেমন কিছু বলতেও চাইতেন না। অনেকে মনে করেন, ক্রিস্টি এই কাজটি করেছিলেন তার প্রতারক স্বামীকে অপমান করার জন্য। আবার অনেকে মনে করেন, ক্রিস্টি তার স্বামীকে তার নিজের খুনি হিসেবে সাব্যস্ত করতেই এই কাজটি করেছেন। লুসি ওয়ার্সলি এসব অভিযোগের সঙ্গে একমত পোষণ করেন না।

তিনি বলেন, ‘প্রতারক স্বামীকে খুনি হিসেবে সাব্যস্ত করতে নয়, বরং ক্রিস্টি এমনটা করেছেন গুরুতর মানসিক অসুস্থতার জন্যেই।’ আগাথা ক্রিস্টি ১৯২৮ সালে তার স্বামীকে তালাক দেন এবং ১৯৩০ সালে ম্যাক্স মালনকে বিয়ে করেন। ১৯৭১ সালে ক্রিস্টিকে ডেম উপাধিতে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৬ সালে ৮৫ বছর বয়সে আগাথা ক্রিস্টি মারা যান। এখন পর্যন্ত আগাথা ক্রিস্টির বই দুইশো কোটির বেশি বিক্রি হয়েছে। আর তার মঞ্চ নাটক দ্য মাউসট্র্যাপ চলছে রেকর্ড সত্তর বছরেরও বেশি সময় ধরে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫