
শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত
পঁচাশি বছর বয়সে অপরলোকে চলে গেলেন বাংলাদেশের বরেণ্যশিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী। গত ৯ অক্টোবর, ২০২২ রোববার দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর প্রয়াণের মধ্য দিয়ে সাঙ্গ হলো আমাদের চারুশিল্পের প্রথম প্রজন্মের শেষতম যোগসূত্রটির।
১০ অক্টোবর সকালে তাঁর মরদেহ দীর্ঘকালের কর্মক্ষেত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের চারুকলা অনুষদে ও পরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আকতারুজ্জামান, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব আবুল মনসুর, শিল্পী হাশেম খান, রফিকুন নবী, রামেন্দু মজ্মুদার, কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, লুভা নাহিদ চৌধুরী, শিল্পী আবদুল মান্নান, বীরেন সোম, আবুল বারক আলভী, শহিদ কবির, ফরিদা জামান, গোলাম কুদ্দুছ, মোস্তাফিজুল হক, রোকেয়া সুলতানা, নিসার হোসেন, জি এম খলিলুর রহমান, মনিরুজ্জামান, রশীদ আমিন, সনজীব দাস অপু, কিরীটী বিশ্বাস, সামছুল আলম আজাদ, কামাল পাশা চৌধুরীসহ অনেক শিল্পী, সংস্কৃতিজন ও প্রতিষ্ঠান তাঁর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান। চারুকলা প্রাঙ্গণে গিয়ে আমিও শ্রদ্ধা নিবেদন করেছি। বিকেলে সবুজবাগ শ্মশানে সম্পন্ন হয় তাঁর শেষকৃত্য।
তাঁর প্রয়াণে অবসান হলো- বাংলাদেশের গ্রাফিক ডিজাইনের ভিত্তি নির্মাণকারী শিক্ষককুলের শেষ সেতুবন্ধের। হাতেলেখা বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম নকশাবিদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান লোগোর প্রণেতা তিনি। চারুকলার নিচুশ্রেণিতে পড়াকালে আমরা যে টাইপোগ্রাফি শিখেছিলাম, সেটি তিনি আমাদের হাতে-কলমে দেখিয়ে দিয়েছিলেন। দীর্ঘ পাঁচ দশকের শিক্ষকজীবনের সফল ব্যক্তিত্ব, ছিলেন সর্বজনশ্রদ্ধেয়, নিরহংকার, বিনয়ী ও আপাদমস্তক নিপাট একজন ভদ্রলোক। এতো ছাত্রবান্ধব শিক্ষক গোটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই বলব বিরল! এমন একজন গুণী শিক্ষককে আমাদের জ্ঞানার্জনের আলোকবর্তিকা হিসেবে পেয়েছিলাম বলে আমরা নিজেদের সৌভাগ্যবান মনে করি।
১৯৩৭ সালে শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরীর জন্ম কুমিল্লার দাউদকান্দিতে। ১৯৪৬ সালে দেশ ভাগের আগে কুমিল্লায় চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হন। চতুর্থ শ্রেণি থেকে ম্যাট্রিক পর্যন্ত পড়েছেন কুমিল্লার ঈশ্বর পাঠশালা নামের হাইস্কুলে। ছবি আঁকা শুরু করেছিলেন ছোটবেলায়, হাতে-কলমে শেখা শুরু হয় ঈশ্বর পাঠশালায় ভর্তি হওয়ার পর। ওইখানে ড্রয়িং আবশ্যক ছিল ক্লাস এইট পর্যন্ত।
শিল্পী সমরজিৎ রায়ের মামা ছবি আঁকতেন। ওই মামা তাঁর মাকে ডিজাইন করে দিতেন, মা ওইগুলো এমব্রয়ডারি করতেন। সেই এমব্রয়ডারি দেখে দেখে আঁকার প্রতি একপ্রকার উৎসাহ জাগে তাঁর মধ্যে। এভাবেই আঁকাআঁকির শুরু। ঈশ্বর পাঠশালারই দুই ছাত্র পরে শিল্পী হিসেবে ভারতে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলেন। একজন ছিলেন অজিত চক্রবর্তী। তিনি শান্তিনিকেতনের কলাভবনের প্রধান ছিলেন। তার পর বিশ্বভারতীরও ভাইস চ্যান্সেলর হয়েছিলেন। অজিত চক্রবর্তী সমরজিতের পাঁচ-ছয় বছর আগে পাস করেছিলেন। সমরজিৎ রায়ের তিনবছর আগে পাস করেন বিমল কর। তাঁরা দুজনেই পড়তে কলকাতা চলে যান।
কলকাতায় ভর্তি হলেও তাঁরা ছুটিছাটায় চলে আসতেন কুমিল্লায়। অজিত ও বিমল এই দুজনের ছবি আঁকা দেখেও সমরজিৎ রায় ছবি আঁকায় উৎসাহিত হয়েছেন। আর তিনি যখন মেট্রিক পাস করলেন, ততোদিনে ঢাকা আর্ট কলেজ হয়ে গেছে। সমরজিৎ যখন নাইন-টেনে পড়েন তখন মোটামুটি আঁকতে পারতেন। ড্রয়িং টিচারকে ছবি এঁকে দেখাতেন। তিনি বলতেন- তুই আর্ট কলেজে ভর্তি হয়ে যাবি। মেট্রিক পাস করার পর সমরজিৎ রায়ের বাবা ছেলের তুমুল আগ্রহে ঢাকায় এনে তাঁকে ভর্তি করিয়ে দিলেন।
সমরজিৎ রায় যখন আর্ট কলেজে ভর্তি হন তখন এর পরিবেশ ছিল দারুণ। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ছিলেন অধ্যক্ষ। ওনার সঙ্গে আর যাঁরা ছিলেন, সবাই কলকাতা আর্ট কলেজ থেকে পাস করা। শিক্ষক ছিলেন আনোয়ারুল হক, কামরুল হাসান, সফিউদ্দীন আহমেদ।
সমরজিৎ চারুকলায় ’৫৫-তে ঢুকেছেন আর পাস করেছেন ১৯৬০-এ। জুলাই-আগস্ট মাসে পরীক্ষা হলো, অক্টোবরে ফল বের হলো। তখন আবেদিন স্যার নিজের হাতে লেখা সার্টিফিকেট দিতেন। ১ নভেম্বর চারুকলায় শিক্ষক পদে যোগ দিলেন সমরজিৎ রায় চৌধুরী। আবেদিন স্যারই তাঁকে ডেকে এনে চাকরিটা দিয়েছেন। কামরুল হাসান ওই সময় ডিজাইন সেন্টারে যোগ দিয়েছেন, সঙ্গে নিয়ে গেছেন সদ্য প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় স্থান পাওয়া আবদুল মুকতাদিরকে। প্রথম হওয়া সমরজিৎ রায়কে ওখানে যোগ দিতে বললেও, তাঁর পছন্দ ছিল আবেদিন স্যারের সঙ্গে থাকা। বেতন বেশ কম হলেও তিনি শিক্ষকতার চাকরিতেই থিতু হন।
চারুকলা শিক্ষার নানা উত্থান পতনের সাক্ষী এই শিক্ষক-শিল্পী। একে একে তিনি দেখেছেন- ছাত্রদের আন্দোলনের ফলে আর্টস্কুল পাকিস্তান আমলে কলেজ হলো। এই আন্দোলন করে রাসটিকিট পেয়েছিলেন আনোয়ার হোসেন, কেরামত মাওলা, হাসান আহমেদসহ আট শিক্ষার্থীশিল্পী। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের এক দশক পর ১৯৮২ সালে আন্দোলন শুরু হলো চারুকলাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত করার।
সামরিক শাসক জেনারেল এরশাদের রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণের পর চারুকলার ছাত্রদের সেই আন্দোলনের নেতৃত্বে অন্য অনেকের সঙ্গে আমিও যুক্ত ছিলাম। ১৯৮৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের অধীনে এর নতুন নাম হলো ইনস্টিটিউট অব ফাইন আর্টস। ২০০৪ সালে এটি হলো ফ্যাকাল্টি অব ফাইন আর্টস। চারুকলা অনুষদের চাকরি থেকে অবসর নেয়ার পর উত্তরার শান্ত মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন নিযুক্ত হন। চারুকলা অনুষদের সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক হিসেবে আরও কিছুকাল নিয়োজিত ছিলেন তিনি।
আমি ১৯৭৯ সালে চারুকলায় ভর্তি হয়ে ঢাকা নিউমার্কেটের পেছনে শহীদ শাহনেওয়াজ ভবন অর্থাৎ আর্টকলেজ হোস্টেলে এসে উঠি। সমরজিৎ স্যার ছিলেন হোস্টেলসুপার। স্যার রুম পরিদর্শনে এলে আমরা অবৈধ বসবাসকারী শিক্ষার্থীরা পালাতাম, আবার পরিদর্শন শেষে চলে আসতাম। ক্লাসে বেশ কড়া নিয়মকানুনের শিক্ষক ছিলেন বলে তাঁর ক্লাসে ফাঁকি দেয়ার সুযোগ ছিল না। তারকা শিক্ষক কাইয়ুম চৌধুরীকে তিনি পেয়েছিলেন অগ্রজ সহকর্মী হিসেবে। ডিপার্টমেন্টের সব দেখভাল তিনি করতেন অগ্রজের পরামর্শে। ওই সময় চারুকলায় অসাধারণ দুটি শিক্ষক জুটি ছিল- প্রথমটি ছাপচিত্র বিভাগের সফিউদ্দীন আহমেদ-মোহাম্মদ কিবরিয়া, অন্যটি গ্রাফিক ডিজাইনের কাইয়ুম চৌধুরী-সমরজিৎ রায় চৌধুরী জুটি! এই দুই জুটির তিনজন আগেই চলে গেছেন, শেষোক্তজনকেও আমরা হারালাম।
সমরজিৎ রায় চৌধুরী ছবি আঁকতেন আমাদের দেশের রূপবৈচিত্র্যকে বিষয়বস্তু করে। রেখা তাঁর ছবির প্রাণ। তিনি নিজের কাজে রেখার প্রয়োগ সম্পর্কে বলেন, গাছের মধ্যে কত লাইন। শুকিয়ে গেছে, গাছের ডালপালাগুলো শুকিয়ে যায়। আমার হাতের মধ্যে দেখো, আমি যে ছবি আঁকি, রেখা-টেখা ঠিক ওই রকমই। আমার ছবির মধ্যে কিন্তু এগুলো রয়েছে। ওই লাইনটাই আসলে প্রাণ। লাইন গান গাইতে পারে। লাইন ছোটাছুটি করে। লাইন খেলে।
আলঙ্কারিক রূপকে তিনি এ দেশীয় বৈশিষ্ট্য হিসেবে কবুল করে একে নিয়ে প্রচুর খেলা করেছেন নিজ চিত্রপটে। বাংলার কর্মিষ্ঠ নারী-পুরুষের অবয়ব জায়গা নিয়েছে তাঁর ছবিতে। সমরজিৎ রায় চৌধুরী স্বাধীনতাযুদ্ধ নিয়েও কিছু ছবি এঁকেছেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নানাভাবে ছবি এঁকেছেন। তাঁর ছবিতেও আস্তে আস্তে পরিবর্তন হয়েছে, ছবিতে বাংলাদেশকেই রেখেছেন। আসলে ছবির পরিবর্তনটা আসে আঙ্গিকে, বিষয়বস্তুটা কিছু না। ছবি দেখেই ভালো লাগা, মন্দ লাগা হয় শিল্পরসিকদের কাছে।
শিক্ষকশিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ পাই ১৯৯৩ সালের জুলাই মাসে আর্টিজান ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যলয়ের ইংরেজি বিভাগের আয়োজনে একটি আর্টক্যাম্পে অংশগ্রহণের সুযোগে। জাবির টিএসসিতে সমরজিৎ স্যার, প্রয়াত শিল্পী আবু তাহের- এই দুই অগ্রজশিল্পীর সঙ্গে এককক্ষে রাত্রিবাসেরসূত্রে অনেক গল্প করা ও আড্ডা হয়েছে। উপাচার্য আমীরুল ইসলাম, নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন, ইংরেজি বিভাগের প্রধান আহমদ রেজা, শিল্পী কালিদাস কর্মকার, প্রয়াত ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী, অলোকেশ ঘোষ, শফিকুল কবির চন্দন, মাহমুদুর রহমান দীপন, শেখ মনিরউদ্দিন, কারু তিতাস ও ইংরেজি বিভাগের কয়েক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে দারুণ জমে উঠেছিল আড্ডা, আলোচনা ও ছবি আঁকা। ২০১৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর সহপাঠী নাসিমা কুইনির উদ্যোগে গাজীপুরে বিপাশা-তৌকীর দম্পতির রিসোর্টে আয়োজিত আর্টক্যাম্পে সমরজিৎ স্যার গেছেন, আমিও তাতে অংশ নিয়েছি। ওখানে গাছে গাছে সোনারং সোনালু ফুল দেখে আনন্দে শিশুর মতো উচ্ছ্বসিত হলেন, বললেন- দেখো রঙ আর রেখার কি অপূর্ব সমাহার!
আমি বিটিভিতে চাকরিরত অবস্থায় কয়েকটি অনুষ্ঠানে সমরজিৎ স্যারের বক্তব্য ধারণ করেছি। শিশু একাডেমির পরিচালক (এখন মহাপরিচালক) বন্ধু আনজীর লিটনের অনুরোধে শিশু একাডেমিতে স্যারকে নিয়ে গিয়েছি অতিথি শিল্পী হিসেবে। তিনি একজন শিশুশিল্পীর সঙ্গে এক ক্যানভাসে ছবি আঁকা ভাবনাটিকে দারুণ উপভোগ করেছেন।
এ ছাড়াও বিটিভিতে আমার সহকর্মী শিল্পী মীর আহসানের যাত্রাবাড়ীর আর্ট একাডেমিতে আমিও স্যারের সঙ্গে অতিথি হয়ে গিয়েছি। আবার শিল্পকলা একাডেমির নানা সভা, বিশেষ করে জাপানের মিতসুবিশি আয়োজিত এশীয় শিশুদের দিনলিপি অর্থাৎ এনেক্কা ফেস্টার এখানকার আয়োজনে স্যারের সঙ্গে একাধিকবার কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। নানা জায়গায় চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় স্যারের সঙ্গে বিচারকাজে অংশগ্রহণ করেছি।
শান্ত মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানের পর নৈশভোজ সেরে ফেরার সময় স্যারের গাড়িতে সওয়ার হই, আমার লক্ষ্য ফার্মগেটে নামলে মোহাম্মদপুরের বাসায় ফেরা সহজ, তাই ওখানেই নেমে যাব। সমরজিৎ স্যার তাঁর গাড়িচালককে নির্দেশ দিলেন- জাহিদকে মোহাম্মদপুরে নামাবে। তখন রাত কম হয়নি। স্যার তাঁর ছাত্রের নিরাপত্তার কথা ভেবেছেন! তাঁর অভিভাবকসুলভ বদান্যতা কোনোদিন ভোলার নয়!
আরেকটি স্মৃতি মনে পড়ছে- ২০১০ সালের দিকে স্যারের পৈতৃক জমি-জমার কাজে কুমিল্লা যেতে হবে। ডিসি অফিসে তাঁর কাজ। স্যার আমাকে ফোন করলেন, বললেন- তুমি তো সরকারি অফিসার, কুমিল্লার ডিসিকে চেন কিনা? আমি জানি টাঙ্গাইলের বড়ভাই জামাল হোসাইন ওখানকার ডিসি। আমি তাঁকে ফোন করি। ওপার থেকে আওয়াজ এলো- তিনি গত সপ্তাহে বদলি হয়েছেন। শুনে আমি হতাশ হলেও হাল ছাড়লাম না, নতুন ডিসি সাহেবকে সব খুলে বললাম। তিনি জানালেন- আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র। পরে স্যারের কাছে নতুন ডিসিমহোদয়ের সুমিষ্ট ব্যবহারের গল্প শুনে আমার মন ভরে গেছে। আমার অনুরোধটি রেখে সশ্রদ্ধায় স্যারের কাজ করে দিয়েছেন তিনি। এসবই এখন অমূল্য স্মৃতি!
দেরিতে হলেও ২০১৪ সালে সরকার সমরজিৎ রায় চৌধুরীকে চারুশিল্পে তাঁর বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ একুশে পদক প্রদান করে। ওই বছর নাটকে অবদান রাখায় তাঁর ছাত্র শিল্পী কেরামত মওলাও একুশে পদক পান। একুশে পদক পেয়ে শিল্পী সমরজিৎ রায় তাঁর প্রতিক্রিয়ায় সবিনয়ে বলেছেন- আমি ছবি আঁকি, সারাজীবন ছবি আঁকার শিক্ষকতা করেছি, পুরস্কারের কথা ভাবিনি। অনেকেই বলেছেন, আরও আগে পাওয়া উচিত ছিল। আমি বলেছি- পেয়েছি তো, এতেই আমি খুশি। আমি যদি আরও পাঁচ-দশ বছর আগে পেতাম, তা হলে হয়তো আমার আনন্দটা আরও বেশি হতো।
ব্যক্তিগত জীবনে সমরজিৎ রায় চৌধুরী তাঁর স্ত্রী, পুত্র সুরজিৎ রায় চৌধুরী, কন্যা শিল্পী শর্বরী রায় চৌধুরী, পুত্রবধূ ও দুই নাতি-নাতনি রেখে গেছেন।
স্যারের সঙ্গে আমার শেষবার দেখা হয় শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে বঙ্গবন্ধু স্মরণে চারুকলা প্রদর্শনীর উদ্বোধনীতে গত ১ আগস্ট। স্যারের ছেলে সুরজিৎ স্যারকে হুইল চেয়ারে করে নিয়ে এসেছিলেন। শরীরটা ঠিক নেই, তবু হাসিখুশি মুখে কথা বললেন, অনেকের অনুরোধে হাসিমুখে ছবি তুললেন।
নানা প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে কাঁটাবনে তাঁর বাসায় গেছি। সর্বশেষবার স্যারের বাসায় যাই গত জানুয়ারি মাসে। চলে আসার সময় বলতাম- ভালো থাকবেন স্যার। স্বভাবতই তিনি বলতেন- তুমিও ভালো থেকো। কীভাবে ভালো থাকি? এমন পিতৃসুলভ অভিভাবকদের যে আমরা একে একে হারিয়ে ফেলছি!