Logo
×

Follow Us

শিল্প-সাহিত্য

আমার বইমেলা

Icon

রাশিদা সুলতানা

প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১০:২২

আমার বইমেলা

কথাসাহিত্যিক রাশিদা সুলতানা।

আমি লেখক হয়ে ওঠার আগে বইমেলায় যেতাম, বই কেনার জন্য। কী কী বই কিনবো, পরিকল্পনা করে নিতাম। বই কিনে, জনপ্রিয় লেখকদের চারপাশে মানুষজনের ভিড় দেখে বাসায় ফিরে আসতাম। তখন কোনো কবি, লেখক, শিল্পী কারো সঙ্গে ব্যক্তিগত পরিচয় ছিলো না। ফলে সেভাবে আড্ডাও দেয়া হতো না। বইমেলার অভিজ্ঞতা পুরোপুরি বদলে যায় আমি লেখক হওয়ার পর।

আমার লেখালেখির শুরুর দিকে দৈনিক প্রথম আলোর সাহিত্য পাতায় বছরে তিন-চারটা গল্প প্রকাশিত হওয়ার কারণে অল্প সময়ের মধ্যে- কবি, লেখক, ফিল্মমেকার, বুদ্ধিজীবী পাঠকদের মধ্যে সমাদৃত হয়ে উঠি। 

২০০১-এর জানুয়ারি মাস থেকে দৈনিক প্রথম আলোয় আমার গল্প ছাপা হতে থাকে। ২০০২ থেকে বইমেলায় যাওয়া ছিলো আমার জন্য দারুণ অভিজ্ঞতা। কবি, লেখক, পাঠকদের সঙ্গে আড্ডা, উৎসবে ডুবে থাকতাম। কবি, লেখক অথবা একেবারেই নীরব পাঠকদের অনেকেই জানাচ্ছে- প্রথম আলোয় প্রকাশিত আপনার অমুক গল্পটা ভালো লেগেছে। আমার কোনো প্রিয় লেখক হয়তো বলছেন, ‘তোমায় অনেক লিখতে হবে’- এ ধরনের অনেক অনুপ্রেরণা আর উপচে পড়া ভালোবাসায় আপ্লুত হতাম।

‘আমৃত্যু লিখে যাবো’- নিজের কাছে এমন প্রতিজ্ঞা করে বইমেলা শেষে বাসায় ফিরতাম। সে সময় প্রায় প্রতিদিনই মেলায় যেতাম। ২০০২-১৩ সাল অবধি বইমেলা আমাকে উপচেপড়া অনেক মধুর স্মৃতি দিয়েছে।

 ২০০২-এর ফেব্রুয়ারির ২২ বা ২৩ তারিখে বইমেলায় যাওয়ার স্মৃতি বহুদিন মনে থাকবে। সে সময় আমি গর্ভবতী। একেবারে অ্যাডভান্স স্টেজে। প্রায় ৭-৮ দিন পর আমার ছোট ছেলের জন্ম হয়। সেদিন অফিস শেষ করে দৈনিক প্রথম আলোর অফিসে যাই। ওখানে কিছু সময় আড্ডা দিয়ে কবি বন্ধু ব্রাত্য রাইসু ও সাখাওয়াত টিপুসহ বইমেলায় যাই। সেদিন সন্ধ্যায় মুস্তফা জামান, শিকোয়া নাজনীনসহ বহু কবি, লেখক, শিল্পীর সঙ্গে আড্ডা দিই। আনন্দ, হাসি, আড্ডায় মেতে থাকা সেই সন্ধ্যায় আমার বন্ধুরা আমাকে ভিড় বাঁচিয়ে বইমেলায় ঘুরে বেড়িয়েছে। বই মেলার প্রতি কতটা তীব্র টান থাকলে এমন অ্যাডভান্স প্রেগন্যান্সির সময় সন্তান জন্ম দেয়ার সাত-আট দিন আগে কেউ বইমেলায় ভিড়ের মধ্যে বেড়াতে পারে। 

বইমেলায় আমার সবচেয়ে ভালো লাগতো কবি, লেখক, পাঠক আর বন্ধুদের কাছ থেকে আমার লেখা নিয়ে সরাসরি তাদের কথা শোনা, তাদের সঙ্গ আর উষ্ণতা। লেখক-পাঠকের চোখ মুখ ঠিকরেপড়া আনন্দ, আন্তরিকতা আর ভালোবাসার এই উৎসবে যাওয়া হয় না বহুদিন। চাকরি এবং আরো নানা কারণে যেতে পারি না।

কিন্তু বইমেলার উৎসব, উদযাপন, নতুন বইয়ের প্রকাশ নিয়ে লেখকদের উত্তেজনা কল্পনার চোখে দেখি আর পুরনো স্মৃতির জাবর কাটি। লিটলম্যাগ আন্দোলনের কবি লেখকদের অনেকের সঙ্গে পরিচয় হয় বইমেলাতে, প্রতিষ্ঠানবিরোধী এইসব লেখক সম্পাদকরা যখন আন্তরিকভাবে আমার গল্প, উপন্যাস সম্পর্কে তাদের ভালো লাগার কথা বলতো, আমাকে অনিঃশেষ অনুপ্রেরণা দিতো এসব ছিল আমার জন্য পরম পাওয়া। 

লেখক: কথাসাহিত্যিক

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫