Logo
×

Follow Us

শিল্প-সাহিত্য

পাখির পরিযায়ন

Icon

কাজী সানজীদ

প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:৫৯

পাখির পরিযায়ন

খয়রা-লাটোরা। ছবি : কাজী সানজীদ

শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে পাখিরা পরিযায়ন করে আসছে বিশেষ কারণেই। অকারণে কোনো প্রাণীই নিজস্ব আবাসস্থল ত্যাগ করে না। পৃথিবীর প্রায় সব স্থানের পাখির কিছু অংশ পরিযায়ন করে।

তবে উত্তর গোলার্ধের বেশিরভাগ পাখি পরিযায়ন করতে বাধ্য হয়। আমাদের দেশে অনেকগুলো প্রজাতির পাখি পরিযায়ী হয়ে আসে। তারা অতিথি পাখি নয়।

কেননা দীর্ঘ পাঁচ মাস তাদের এখানে অবস্থান করতে হয়। কোনো অতিথির অবস্থান এতটা লম্বা সময়ের জন্য হয় না। তাই এটি তাদের আরেকটি বাড়ি। বরিশাল নিবাসী কোনো মানুষ যদি বছরে ছয় মাস কাজের জন্য রংপুর অবস্থান করে তাহলে সেখানে সে অতিথি নয়। বরং সেটি তার আরেকটি নিবাস। 

সংখ্যাগরিষ্ঠ পাখিদের পরিযায়ন ঘটে শীতকালে। এই ঋতুতে উত্তর গোলার্ধে তাদের খাবারের উৎসগুলো বরফে ঢাকা পড়ে যেতে থাকে। তাদের মূল খাদ্য বিভিন্ন পোকা ও উদ্ভিদ শীতের আগমনে চাপা পড়ে গেলে, বাধ্য হয়ে তাদের সেসব স্থানে যেতে হয় যেখানে খাবারের প্রাপ্যতা আছে।

ঠান্ডার কারণে তারা পরিযায়ন করে না। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, অতি ক্ষুদ্র পাখি হামিং বার্ডও হিমাংকের নিচের তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে যদি খাবারের ব্যবস্থা থাকে। 

আমাদের দেশে পরিযায়ী হয়ে আসে মূলত বিভিন্ন প্রজাতির হাঁস, গাঙচিল, জৌরালি, মাঝারি ও খুদে সৈকত পাখি এবং কিছু শিকারি পাখি। হাঁসই সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাদের মধ্যে আছে পিয়ং-হাঁস, ইউরেশীয়-সিঁথিহাঁস, উত্তুরে-ল্যাঞ্জাহাঁস, উত্তুরে-খুন্তেহাঁস, মরচেরঙ-ভুতিহাঁস, পাতি-ভুতিহাঁস, লালঝুঁটি-ভুতিহাঁস, টিকি-হাঁস, গিরিয়া-হাঁস, খয়রা-চখাচখি, পাতি-চখাচখি, দাগি-রাজহাঁস এবং মেটে-রাজহাঁস।

এ ছাড়াও অনেক বনের পাখিও পরিযায়ী হয়ে আসে। পরিযায়ী পাখিদের মধ্যে দুটো প্রজাতির কথা উল্লেখ না করলেই নয়। একটি হচ্ছে দাগি-রাজহাঁস। এরা অস্বাভাবিক উঁচু দিয়ে উড়ে আসে। সাত হাজার দুশ মিটার উচ্চতায় হিমালয় পার হয়ে এরা এদেশে আসে। এভারেস্টজয়ী পর্বতারোহীরা জানিয়েছেন, তারা এভারেস্টের আশপাশ দিয়েও এই পাখিকে উড়ে যেতে দেখেছেন।

অর্থাৎ পরিযায়নের সময় আট হাজার মিটারের বেশি উচ্চতায়ও এরা উঠে থাকে। বছরে দুবার তারা এ কাজ করে থাকে। আমাদের দেশে সাধারণত উপকূলে এদের দেখা যায়। আর একটি পাখি হচ্ছে খয়রা-লাটোরা। সাত ইঞ্চি লম্বার দেশে শীতকালে সর্বত্র দৃশ্যমান এই কমন পাখিটি আসে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে। অতটুকু শরীর নিয়ে কীভাবে এই লম্বা পথ পাড়ি দেয় তা আসলেই ভেবে দেখার বিষয়। 

তবে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে দাগিলেজ-জৌরালি। মাঝারি আকৃতির এই পাখিটি সেপ্টেম্বর মাসে আলাস্কা থেকে ঝাঁক বেঁধে দক্ষিণমুখী উড়াল দেয়। এই উড্ডয়নটি বিরতিহীন এবং একটানা চলে ৮ থেকে ১২ দিন পর্যন্ত। পাড়ি দেয় ক্ষেত্রবিশেষে তেরো হাজার কিলোমিটারের বেশি। সম্প্রতি শরীরে সেটলাইট ট্র্যান্সমিটার বসানো এই প্রজাতির একটি তরুণ পাখি আলাস্কা থেকে একটানা এগারো দিন উড়ে তেরো হাজার পাঁচশ কিলোমিটার পথ পার হয়ে এসে অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়ায় অবতরণ করেছে।

আবার গ্রীষ্ম এবং বর্ষাকালেও কিছু পাখি এদেশে পরিযায়ী হয়ে আসে। তাদের মধ্যে দেশি-শুমচা উল্লেখযোগ্য। তারা এদেশে আসে প্রজনন করতে। ঐ ঋতুতে আমাদের বনতল ভিজে স্যাঁতসেঁতে থাকে। পাখিগুলো ঝরে পড়া পাতার নিচের পোকা খেয়ে থাকে এবং বাচ্চাদের খাওয়ায়।

তাদের অন্য আবাসে সে সময়ে এই উপযুক্ত পরিবেশ অনুপস্থিত থাকে। গাজীপুরে জুন-জুলাই মাসে এদের দেখতে পাওয়া যায়। কিছু পাখি আছে যাদের আমরা বলি পথিক-পরিযায়ী। বড় উদাহরণ হচ্ছে আমুর-শাহিন। রাশিয়া এবং চীন থেকে এই শিকারি পাখি আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলে পরিযায়ন করে। পথে কিছু পাখি ভারত ও বাংলাদেশে কিছুদিন বিশ্রামের জন্য অবস্থান করে।

পাখির পরিযায়নের কারণ সম্বন্ধে মানুষ অবগত হলেও কীভাবে পথ চিনে দীর্ঘ পরিযায়ন সম্ভব তা নিয়ে কৌত‚হল ছিল। এখন তাও জানা যাচ্ছে। কিছু কিছু পাখি এই উদ্দেশ্যে অস্বাভাবিক ভক্ষণ করে শরীরে ব্যাপক চর্বি জমিয়ে ফেলে। লম্বা উড্ডয়নে এটিই হয় ইন্ধন। সমুদ্রতট বা দ্বীপের সীমারেখা খেয়াল রেখে এরা উড়ে চলে। সে কারণে অভিজ্ঞরা ঝাঁকের সামনে থাকে, বাকিরা পেছনে। আবার খুদে পাখিরা পথে জিরিয়ে জিরিয়ে আসে। 

প্রকৃতির এই অদ্ভুত খেয়াল থেকে চাইলে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি। মানুষ পাখিদের কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য বিভিন্ন কাজে লাগাতে পারছে এবং আরও চেষ্টা চলছে। 

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫