Logo
×

Follow Us

শিল্প-সাহিত্য

মুক্তিযুদ্ধের অণুগল্প

সবুজ-স্বর্গে চলো

Icon

হামীম কামরুল হক

প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০২২, ১৩:০৫

সবুজ-স্বর্গে চলো

সবার মুক্তি না হলে নিজের মুক্তি হয় না। ছবি: সংগৃহীত

ঠিক পাশে এসে গাড়িটা থামে। নাম ধরে কেউ ডাকে। কী মোটাসোটা হয়েছে। বছর তিন পর দেখা। আয়, ওঠ। নাশিদ উঠে পড়ে। কবে এলি? এই তো। পরশুদিন। আছিস কিছু দিন? নারে, কালকেই চলে যাব। এলে তো আর ফোনটোন করিস না।

ওহহো, তোর নম্বরটাই তো নেই। দে তো। নাশিদ নম্বর বলে। এরপর কী কথা বলা যায় বুঝতে পারে না। তারিফ নিজের বাড়িতে না থেকে হোটেলে এসে থাকে। জীর্ণবাড়িটা এখন অসহ্য, মা-বাবা তবু ওখানেই থাকবে। ঢাকায় তার বারিধারায় চব্বিশশো বর্গফুটের অ্যাপার্টমেন্ট। স্ত্রী বিমানবালা। ছেলেমেয়েদের ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা। 

তারিফ একেবারেই ছেলেবেলার বন্ধু। আগে দুজনে মিলে বিচিত্র কাজ-অকাজ অনেক কিছু করেছে। তারিফ আবার প্রেমিক পুরুষ ছিল। নিত্যনতুন মেয়ে জুটাত। বান্ধবী থেকে প্রেমিকা বানিয়ে ফেলার জাদু ছিল। আরও ছিল কীভাবে তাদের সব কিছু নিংড়ে নেওয়া যায়, সেই ক্ষমতা। বলত, সেক্স ভালো যার, সব ভালো তার।- এই একটা জিনিস অপছন্দ করলেও কোনোদিনই কিছু বলতে পারেনি সে। নিজে মোল্লাবংশের ছেলে হয়েছে বলেই কিনা নয়, সব কিছুর একটা সীমা আছে- মনে মনে না মেনে উপায় ছিল না কেন?- তাও কোনো দিন খতিয়ে দেখেনি। 

সে পড়ে রইল মফস্বলে আর তারিফ হিল্লিদিল্লিই শুধু নয়, আজ ইউরোপ, কাল আমেরিকা ছুটে বেড়াচ্ছে। শেষবার দেখা হলে কথায় কথায় বলেছিল, এজেন্সি নিতে হবে। এজেন্ট হওয়া ছাড়া জীবনের কোনো পথ নেই। কারও না কারও এজেন্ট হতেই হয়- এজেন্টের বাংলাটা ভালো না, জানিস তো। হ্যাঁ, জানি, দালাল। ঠিক, কেমন গালির মতো শোনায়, তাই না? অথচ সবাই কিন্তু এজেন্ট: কেউ ভগবানের, কেউ ভোগ্যপণ্যের।

তারিফ একটা ব্যাগ থেকে কিছু কাগজপত্র বের করে নাশিদকে দেয়। নাশিদ নেড়েচেড়ে দেখে: একটি বিদেশি বীমা কোম্পানির পলিসি নেওয়ার কাগজপত্র। বেশ মন দিয়েই দেখে। আজকের দিনটা ষোলোই ডিসেম্বর। এখানে ওখানে লালসবুজের পাতাকা উড়ছে। বিজয়ের মাসে ব্যবসা! ব্যবসার সঙ্গে স্বাধীনতা ও জয়-পরাজয়ের কী সম্পর্ক? গভীর সম্পর্ক।- কীসব কিলবিল করতে থাকে নাশিদের মাথায়।

একটু চমকে ওঠে তারিফের গলা শুনে। আর ইয়্যু ইন্টারেস্টেড? তুই না বাম ছিলি কিছুদিন? আমি ডানে-বামে, সামনে-পেছনে, ওপরে-নিচে, দশদিক থেকে, সব দিকে মারা দিয়ে ও মারা খেয়ে যেটা বুঝেছি দোস্ত : লাইফ ইজ অ্যা লোনলি বিজনেস।- এটাই সত্য।

নাশিদ বলতে চাইছিল, সবার মুক্তি না হলে নিজের মুক্তি হয় না। হয় কি? মনের কথাটা মুখে এলো না। তাকে অবাক করে দিয়ে তারিফ বলে, তুই মুক্তিটুক্তির কথা বলবি তো। সব হলো ধোঁকা। হয় ধোঁকা খাও, না হয় দাও। এছাড়া মাঝমাঝি পথ নেই। শুনে ভীষণ বিরক্ত লাগে। নইলে নাশিদ ওর বৌ-বাচ্চাদের কথা জানতে চাইতে পারত, চাইল না। একবার বলতে চাইল, আমার জন্য একটা কাজ খুঁজে দে না। এটা তো কিছুতেই বলতে পারবে না, জানে। ঠিক কোথায় বাধে? সেটাও আবার স্পষ্ট করে জানে না।

সে নিজে এমন কোনো সাধু/আদর্শবাদী লোকটোক নয়। গাড়ি চলতে থাকে। গাড়িতে নীরবতা নামে। সোনাডাঙ্গা এলেই নাশিদ বলে, আমি নামব। ও হ্যাঁ। নাশিদ একটা কথা না-বলে, কোনো বিদায়টিদায়মূলক কথা না-বলে, গাড়ি থেকে নেমেই হাঁটা দেয়। রাগ করল নাকি? করলে করল। ড্রাইভার জানতে চায়, কোথায় যাব স্যার? মুখে এসে যাচ্ছিল, জাহান্নামে, কিন্তু যেতে হবে তো হোটেল গ্রিন হ্যাভেনে। তাই বলতে হয়, গ্রিন হ্যাভেনে চলো।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫