
ছোটগল্প। প্রতীকী ছবি
অতি সন্তর্পণে খাটের তলা থেকে হারমোনিয়ামটা টেনে বের করলেন তিনি। কীভাবে কীভাবে যেন টের পেয়ে গেল মুনিয়া। চাপা স্বরে তার ধমক শোনা গেল, ‘বাবা, আবারও! তোমাকে না বারণ করেছি!’
রমাপদবাবু মিইয়ে যান। মেয়েকে খুব ভয় পান তিনি। অথচ কিছুদিন আগেও, মানে যুদ্ধটা শুরুর আগে তিনি ছিলেন ছোট্ট এই পরিবারের বাঘ। সবাই কাঁপত তার কথায়। ধমক দিতে হতো না, এমনিতেই গুটিয়ে থাকত। এখন সময় পাল্টে গেছে। সব সময় তিনিই কেমন গুটিয়ে থাকেন। স্ত্রী-মেয়ে পর্যন্ত তাকে ধমকের ওপরে রাখে।
প্রায় বিশ বছরের গলা সাধা অভ্যাস রমাপদবাবুর। গত আট মাস ধরে পারছেন না। একধরনের বন্দিজীবন কাটাতে হচ্ছে। সারাক্ষণ সবাইকে ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়। কথা পর্যন্ত বলতে হয় ফিসফিস করে।
কদিন ধরে বুকের ব্যথাটা খুব বাড়ছে তার। রমাপদবাবুর ধারণা, গান না গাওয়াই এর একমাত্র কারণ। গান ছাড়া তার পক্ষে বেঁচে থাকা অসম্ভব।...
বের করা হারমোনিয়ামটা আবার খাটের তলায় ঠেলে দেন রমাপদবাবু।
দুই.
‘বাবা, বাবা, কই, তোমার হারমোনিয়াম বের করো। এখন যত খুশি গান গাইবে তুমি।’
ঘরে ঢুকে মুনিয়া দেখে, রমাপদবাবু চিত হয়ে শুয়ে আছেন খাটে। তার মুখ হাঁ করা। বুক শান্ত। শ্বাসপ্রশ্বাস নেই।
খাটের তলা থেকে হারমোনিয়ামটা টেনে বের করল সে। তারপর গান শুরু করল: অন্তর মম বিকশিত করো অন্তরতর হে...