Logo
×

Follow Us

শিল্প-সাহিত্য

মুক্তিযুদ্ধের অনন্য স্মৃতি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান

Icon

মামুন রশীদ

প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২২, ১৩:০৪

মুক্তিযুদ্ধের অনন্য স্মৃতি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান

প্লাজা চত্বরের দেয়ালে টেরাকোটা ম্যুরাল। ছবি: সংগৃহীত

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ স্বাধীনতার ডাক দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আবার এ উদ্যানেই ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি পাকিস্তানি সেনারা আত্মসমর্পণ করে। এ ছাড়া এ উদ্যানের রয়েছে নানা ঐতিহাসিক গুরুত্ব। তাই এ উদ্যানকে ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে স্বাধীনতা জাদুঘর ও স্বাধীনতা স্তম্ভ কমপ্লেক্স।

লিখেছেন- গাজী মুনছুর আজিজঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সাক্ষী। এ উদ্যানেই ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আবার এ উদ্যানেই ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি পাকিস্তানি সেনারা আত্মসমর্পণ করে।

এ ছাড়া এ উদ্যানের রয়েছে নানা ঐতিহাসিক গুরুত্ব। তাই এ উদ্যানকে ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে স্বাধীনতা জাদুঘর ও স্বাধীনতা স্তম্ভ কমপ্লেক্স। এর মাধ্যম্যে মানুষের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার পাশাপাশি শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি। ১৯৯৭ সালে পাবলিক ওয়ার্ক ডেভেলপমেন্ট (পিডব্লিউডি) স্বাধীনতা জাদুঘর ও স্বাধীনতা স্তম্ভ কমপ্লেক্স তৈরির একটি নকশা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।

প্রতিযোগিতায় প্রথম হয় মেরিনা তাবাসসুম ও কাশেফ মাহবুব চৌধুরী। তাদের নকশায় গড়ে তোলা হয় এ কমপ্লেক্স। ১৯৯৮ সালে শুরু হয় এর কাজ। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এ প্রকল্প গড়ে তোলা হয়েছে। 

স্বাধীনতা জাদুঘর: উদ্যানের স্বাধীনতা স্তম্ভ চত্বরের ভ‚গর্ভে গড়ে তোলা হয়েছে এ জাদুঘর। ২০১৬ সালের ২৬ মার্চ জাদুঘরটি যাত্রা শুরু করে। জাদুঘরটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য এর নান্দনিক স্থাপত্যশৈলী। মূলত আলোকচিত্র দিয়ে সাজানো এ জাদুঘর। প্রতিটি আলোকচিত্রের সঙ্গে দেয়া আছে সংক্ষিপ্ত পরিচিতি। ধারাবাহিকভাবে এসব আলোকচিত্র দেখে দর্শকরা এ দেশের প্রাচীনকালের ভূ-নৃতাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় পর্যন্ত জানতে পারবেন।

এর মধ্যে আছে বাংলাদেশের ইতিহাস, বাংলা ভাষার বিবর্তন, প্রাচীন পুণ্ড্রনগর (মহাস্থান), উয়ারী-বটেশ্বর, ব্রিটিশ আমল, নীল বিদ্রোহ, সাঁওতাল বিদ্রোহ, সিপাহি বিদ্রোহ, বঙ্গভঙ্গ, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ভারতের স্বাধীনতা লাভ, পাকিস্তান আমল, ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, আগরতলা মামলা থেকে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি পাওয়া, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, মুক্তিযুদ্ধ, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরতা, পাকিস্তান সেনাপ্রধান জেনারেল নিয়াজির আত্মসমর্পণ ইত্যাদি তুলে ধরা হয়েছে আলোকচিত্রে।

এ ছাড়া মোগল আমল থেকে রেসকোর্স ও পরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ইতিহাসও তুলে ধরা হয়েছে আলোকচিত্রের মাধ্যমে। জাদুঘরটিতে রয়েছে ডিজিটাল লাইটিং ও সাউন্ড সিস্টেমের মাধ্যমে ভিডিওচিত্র প্রদর্শনীর ব্যবস্থা। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা ও শুক্রবার বেলা আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত খোলা থাকে এ জাদুঘর। প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা। এটি প্রতি বৃহস্পতিবার ও অন্য সরকারি ছুটির দিন বন্ধ থাকে। 

টেরাকোটা ম্যুরাল: প্লাজা চত্বরের দেয়ালে টেরাকোটা ম্যুরালের মাধ্যমেও তুলে ধরা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। ম্যুরালের শুরুতেই আছে ‘ধনধান্য পুষ্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা’ লাইন। পর্যায়ক্রমে এ ম্যুরালে উপস্থাপন করা হয়েছে বাংলাদেশের জন্ম ইতিহাস। রয়েছে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণসহ নানা ইতিহাস। শিল্পী মোহাম্মদ ইউনুস, মুকুল মকসুউদ্দীন, শিশির ভট্টাচার্য্য, ইফতেখারউদ্দিন আহমেদ ও শ্যামল চৌধুরী এ ম্যুরালের রূপকার।

স্বাধীনতা স্তম্ভ: উদ্যান প্লাজা চত্বরে বসানো হয়েছে স্বাধীনতা স্তম্ভ। ইস্পাত ও গ্লাস দিয়ে তৈরি এ টাওয়ার। এর উচ্চতা ১৫০ ফুট। দৈর্ঘ্য ১৬ ফুট ও প্রস্থ ১৬ ফুট। টাওয়ারটির উপরিভাগে রয়েছে স্বচ্ছ কাচ। দিনের বেলায় এতে সূর্যের আলোর প্রতিসরণ ও প্রতিফলন হয়। রাতে আলোকচ্ছটা তৈরির জন্য রয়েছে বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবস্থা।

শিখা চিরন্তন: সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৯৯৭ সালের ২৬ মার্চ শিখা চিরন্তন স্থাপিত হয়। মুক্তিযুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের স্মৃতি জাগ্রত রাখতেই শিখা চিরন্তন স্থাপিত হয়েছে। ১৯৯৭ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিখা চিরন্তন প্রজ্বালন করেন ও দেশব্যাপী মশাল র‌্যালির উদ্বোধন করেন।

এরপর ১৭ মার্চ তার এ প্রজ্বলিত শিখা টুঙ্গীপাড়ার মাটি ছুঁয়ে সারা দেশ ঘুরে ২৬ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পৌঁছায়। ওই দিন দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতি নেলসন ম্যান্ডেলা, ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আরাফাত, তুরস্কের রাষ্ট্রপ্রধান সুলেমান ডেমিরেল ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ শিখা স্থাপন করেন। এ সময় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫