
গল্প। প্রতীকী ছবি
এতগুলি লাইট জ্বালিয়ে রেখেছেন কেন?
- ভয় লাগছিল।
- বাসায় আর কেউ নেই?
- না।
- ভূতের ভয়?
- না।
- তাহলে মশার?
- আপনি হঠাৎ এই সময়?
- এমনি। বাইরে তুমুল বৃষ্টি। আশ্রয়েরও দরকার ছিল?
- আশ্রয়?
- কিসের ভয় পাচ্ছিলেন?
- অন্ধকার হয়ে এসেছে তো। তাই।
- তাই এত আলো জ্বালিয়ে রেখেছেন?
- হ্যাঁ।
- ভয় দূর হয়েছে?
- না।
- অন্ধকার মূলত মনে থাকে। এই জন্য ভয় দূর হচ্ছে না?
- জি।
- মনের অন্ধকার কিন্তু রুমের অন্ধকারের মতো দূর করা যায়। আলো জ্বালান।
- আপনি এত কথা জানেন আমি জানতাম না।
- আপনার জানার দৌড়, বুদ্ধির দৌড় দুইটাই কম।
- ও আচ্ছা।
- ভেতরে আসতে বলবেন না?
- বৃষ্টি থেকে আশ্রয় খুঁজছিলেন। সিঁড়িঘরেই তো সেটা পাওয়া যায়।
- তাও ঠিক। আচ্ছা এখানেই থাকি। এক কাপ চা অন্তত খাওয়ান।
- শেষ বার বলেছিলেন আমার বানানো চা জঘন্য।
- জঘন্য বলিনি। বলেছি ‘তেমন সুবিধার না’।
- পাত্রী দেখতে এসে এ জাতীয় কথা বলার অভিজ্ঞতা কি আপনার আরো আছে?
- নাহ! আমি একটাই পাত্রী দেখেছিলাম।
- আর দেখবেন না?
- তা তো দেখাই লাগবে। পাত্রী তো আমাকে বহিষ্কার করে দিল।
- আজকালকার পাত্রীদের প্রেমিক থাকে। আপনি খোঁজখবর না করে এসেছিলেনই বা কেন?
- সম্ভবত আমি আজকালকার লোক না। অনেক পুরনো লোক। যা-ই হোক। নয়ন ভাই কেমন আছেন?
- ভাই ডাকেন নাকি?
- ওমা ডাকব না! প্রথমত সে আমার চেয়ে বয়সে বড়। তার ওপর আমার দেখা একমাত্র পাত্রীর প্রেমিক।
- আচ্ছা ডাকুন। ভাই, দুলাভাই যা খুশি।
- আপনারা বিয়ে কবে করছেন?
- আহির সাহেব! আমি চা এনে দিচ্ছি। আপনি চা খেতে খেতে সিঁড়িঘরে বৃষ্টি থামার অপেক্ষা করুন।
- আপনি কী করবেন? অন্ধকার কমার অপেক্ষা করবেন?
- জি।
- অন্ধকার নিজে নিজে কমে না।
- তাহলে কী করব?
- নিজেকে আলোতে নিয়ে আসুন।
- আমার মধ্যে কোনো আলো নেই। আলোতে যাওয়ার সুযোগও তাই নেই।
- সত্যের মধ্যে আলো আছে। সত্যের কাছাকাছি চলে আসুন।
- সত্যের কাছাকাছি আসব? অর্থাৎ নয়নকে জানিয়ে দিব যে আমি কোনো কালেই ওকে ভালোবাসিনি।
- অনু। আপনার সত্য আপনাকে জানতে হবে। আমার তো জানার কথা না।
- আপনি কিছুই জানেন না?
- না। আমি সরল বা বোকা মানুষদের একজন। আমার মধ্যে এত আলো আঁধারের কারুকাজ নেই।
- এটা মিথ্যা বললেন। আপনি মোটেও সরল নন। যদি হতেন তাহলে বৃষ্টি মাথায় আমার বাড়িতে আসতেন না।
- চলে যাব?
- যান। শুধু যেটা বলতে এসেছিলেন সেটা বলে যান।
- আপনার আর আমার বাবা-মাদের হুট করে আনা এই বিয়ের প্রস্তাব বানচাল করতে আপনি অনেক নাটক করেছেন। সেই নাটক দেখলে যে কেউ ভাববে আপনি নয়ন সাহেবের জন্য মারা যাচ্ছেন। অথচ পুরোটা আপনার নিজের সাথে নিজের করা আরো বড় নাটক। এসব অনর্থক কাজ করার কী প্রয়োজন ছিল অনু?
- বলেছি তো। আমি অন্ধকার ভয় পাই।
- তো আজ তাহলে নয়ন সাহেবকে কাজী অফিস থেকে ফিরিয়ে কেন দিলেন?
- অন্ধকার জয় করার চেষ্টা করছিলাম।
- সবই তামাশা মনে হয় আপনার অনু?
- না। আপনি এত চিৎকার কেন করছেন?
- অনু আমি যাই।
- বৃষ্টি কিন্তু থামেনি।
- আপনার অন্ধকার কমেছে?
- কিছুটা কমেছে। আপনি আরো কিছুক্ষণ বসলে আরেকটু কমবে।
আহির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তারপর বলল, ‘আচ্ছা বসছি। এককাপ জঘন্য চা দিবেন বলছিলেন। এখনও দেননি।’