
ইরানের ভূগর্ভস্থ ক্ষেপণাস্ত্র শহর। সংগৃহীত
ইরানে নতুন কোনো হামলা মধ্যপ্রাচ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধ নিয়ে আসতে পারে। এমনটিই বলে ইসরায়েলকে সতর্ক করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি।
চীনের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন সিসিটিভিতে প্রকাশিত আব্বাস আরাগচির সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে এমনটাই জানিয়েছে লন্ডনভিত্তিক ফার্সি সংবাদমাধ্যম ইরান ইন্টারন্যাশনাল। যদিও সাক্ষাৎকারটি ধারণ করা হয়- গত বছরের ডিসেম্বরে। তবে এটি গত শনিবার প্রকাশ করা হয়।
আর এমন সময়ই এটি প্রকাশিত হলো যখন ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আইডিএফের প্রধান হারজি হালেভি তার বাহিনীকে উচ্চ সতর্কতাবস্থায় থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। লেবাননের ইরানপন্থী সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি চলছে। একই সঙ্গে গাজায় দীর্ঘ সামরিক অভিযানে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস ও ইসলামিক জিহাদ কাঠামোগতভাবে দূর্বল হয়ে পড়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে আইডিএফ প্রধানের এই উচ্চ সতর্কতার নির্দেশ- ইরানে সম্ভাব্য হামলা চালানোর দিকেই ইঙ্গিত করে। যদিও ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়ালা এক প্রতিবেদনে বলেছে, আইডিএফ আশঙ্কা করছে- ইসরায়েলের ওপর বড়ধরণের হামলা চালাতে পারে ইরান।
হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকবার পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়েছে আইআরজিসি ও আইডিএফ। তেহরানের মাটিতে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াকে হত্যা করা হয়েছে। এরপরেও দুই পক্ষের থেকেই হামলার মাত্রা ছিল সীমিত। কারণ তারা বড় ধরনের সংঘাত এড়াতে চেয়েছে।
যদিও সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ইরানি শাসক গোষ্ঠীর প্রতিকূলে চলে যাচ্ছে। চলতি মাসে ইসরায়েলি সংবাদপত্রগুলো প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল যে, ইরান যদি পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা অব্যাহত রাখে- তবে দেশটির পারমাণবিক স্থাপণায় হামলা চালানোর বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। হামলার সম্ভাব্য পরিকল্পনা সম্পর্কেও তিনি অবগত।
এমনকি দায়িত্ব ছাড়ার আগে ইরানে হামলার নির্দেশ দিয়েও যেতে পারেন বাইডেন, এমনটাই বলা হয়েছে জেরুজালেম পোস্টসহ একাধিক ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে। উল্লেখ্য চলতি মাসেই রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে তার ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেন।
তেহরান বরাবরই বলে আসছে, পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার চেষ্টা কোনো ভাবেই সহ্য করা হবে না। এ ধরনের চেষ্টা যথাযথ জবাব দেওয়া হবে। সাম্প্রতিক পাল্টাপাল্টি হামলাতেও পরমাণু স্থাপনায় হামলা করা থেকে নিজেদের বিরত রেখেছে ইসরায়েল।
তবে এখন পরিস্থিতি অনেক বদলে গেছে। হিজবুল্লাহ যথেষ্ট দূর্বল হয়ে গেছে। সিরিয়ায় ইরান সমর্থিত আসাদ সরকারের পতন হয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনী অভিযান চালিয়ে আইআরজিসির তৈরি করা প্রায় সব স্থাপনাই গুড়িয়ে দিয়েছে। ফলে ইসরায়েলের সম্ভাব্য হামলার পাল্টা জবাব দেওয়া ইরানের জন্য কঠিন হয়ে গেছে।
যদিও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরাগচি এসব প্রতিবন্ধকতা মানতে নারাজ। তিনি সিসিটিভিকে বলেছেন, ‘আমি আশা করি ইরানে হামলা চালানোর মতো বেপোরোয়া পদক্ষেপ নেবে না ইসরায়েল, কারণ এটি বড় আকারের যুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে পারে।’