প্রতিহিংসার রাজনীতি ছাড়ুন, মোদি সরকারকে মনমোহন

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৬:০৩

ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। ছবি: সংগৃহীত
ভারত জুড়ে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। জিডিপি বৃদ্ধির হার নেমে এসেছে ৫ শতাংশে। তা নিয়ে এবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। আর এমন পরিস্থিতির জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকারকেই দোষারোপ করেছেন। তাঁর মতে, সব ক্ষেত্রে চূড়ান্ত অব্যবস্থাপনার জন্যই আজ এমন পরিস্থিতি।
সরকারি তথ্যের বরাত দিয়ে এনডিটিভির খবরে জানানো হয়, ৩০ জুন পর্যন্ত শেষ ছয় বছরেরও বেশি সময় ধরে ভারতের অর্থনীতি ধীরতম গতিতে প্রসারিত হয়েছে। দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি চলতি অর্থবছরের (২০১৯-২০২০) প্রথম প্রান্তিকে ৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে; যা আগের প্রান্তিকে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ এবং ২০১৮ সালের ৩০ জুনের শেষ প্রান্তিকে ৮ শতাংশ ছিল।
টুইটারে আজ রবিবার মনমোহনের একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেছে কংগ্রেস। তাতে মনমোহন বলেছেন, ‘‘প্রথম ত্রৈমাসিকের জিডিপি বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে। এটা দীর্ঘস্থায়ী মন্দারই ইঙ্গিত। অথচ দ্রুত গতিতে উন্নতির সবরকম সম্ভাবনাই রয়েছে ভারতের। সব ক্ষেত্রে মোদি সরকারের চূড়ান্ত অব্যবস্থাপনাই আজ মন্দা ডেকে এনেছে।’
এভাবে চললে খুব শিগগিরই বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে বলেও সতর্ক করেন মনমোহন। তিনি বলেন, ‘এভাবে চলতে পারে না। তাই কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে অনুরোধ, প্রতিহিংসার রাজনীতি ছেড়ে সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষের পরামর্শ নেওয়া হোক। মনুষ্যসৃষ্ট এই সংকট কাটিয়ে ওঠার উপায় খুঁজে বের করা হোক বিচার বিবেচনার মাধ্যমে।’
গাড়ি শিল্পসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্প্রতি চাকরি হারিয়েছেন কয়েক লাখ মানুষ। তা নিয়েও মোদি সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘মোদি সরকারের ভুল নীতির জন্যই এই ব্যাপক বেকারত্ব। শুধুমাত্র গাড়ি শিল্পেই সাড়ে ৩ লাখ মানুষ কাজ হারিয়েছেন। অন্যান্য ক্ষেত্রেও একই পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে, যাতে সাধারণ কর্মীরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই মুহূর্তে দেশের পরিস্থিতি ভয়ংকর। ফসলের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না কৃষক। গ্রামাঞ্চলে আয় কমেছে সাধারণ মানুষের। যে মূল্যবৃদ্ধির হার কমা নিয়ে বড়াই করে বেড়ায় মোদি সরকার, কৃষিজীবী মানুষকে তার চরম মূল্য চোকাতে হচ্ছে। দেশের ৫০ শতাংশ মানুষের উপর দারিদ্র চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
দীর্ঘ টানাপোড়নের পর সম্প্রতি বাড়তি সঞ্চয় থেকে কেন্দ্রকে ১ দশমিক ৭৬ লাখ কোটি রুপি দিতে রাজি হয়েছে রিজার্ভ ব্যাংক। কিন্তু বড় ধরনের বিপর্যয়ের সামাল দিতে যে অর্থ গচ্ছিত রাখা হয়, তাতে ভাগ বসানোয় ইতোমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। এ দিন একই সুর ধরা পড়ে মনমোহনের কণ্ঠেও। দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বায়ত্তশাসনের উপর আঘাত হানা হচ্ছে বলেও অভিযোগ তোলেন তিনি।
ড. মনমোহন সিং ১৯৯১ সালে নরসিংহ রাও সরকারের অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন যে অর্থনৈতিক সংস্কারের ঘোষণা করেছিলেন, তার জন্য তিনি সর্বজনস্বীকৃত।