‘১৪-১৫ লাখ লোক ফেরত নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলব’

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৯:৪৫

আসামের অর্থমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। ছবি: সংগৃহীত
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) থেকে বাদ পড়াদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলা হবে বলে জানিয়েছেন রাজ্যটির অর্থমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ এইটিনকে গতকাল রবিবার দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বিজেপি নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন জোটের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সম্বয়ক হিমন্ত শর্মা এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘বাদ পড়া ১৯ লাখ মানুষের মধ্যে ১৪-১৫ লাখ ‘‘অবৈধ অভিবাসীকে’’ ফিরিয়ে নিতে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলবো। কিন্তু যতদিন ফিরিয়ে না নেওয়া হচ্ছে, ততদিন আমরা তাদের ভোটাধিকার দেবো না; তবে বিশেষ কিছু সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার ভারতের বন্ধু। তারা আমাদের সহযোগিতা করছে। অবৈধ অভিবাসীদের বিষয় তুলে ধরা হলে তারা নিয়মিতই তাদের ফেরত নিচ্ছে। কিন্তু এই সংখ্যা খুব বেশি না। কিন্তু এখন তাদের চিহ্নিত করার একটি প্রক্রিয়া আমাদের রয়েছে।’
বিজেপির এই নেতা বলেন, ‘এনআরসি তালিকায় নাম নেই মানে এটা নয় যে, তাঁদের বিদেশি আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে। তাঁদের ব্যাপারে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে। কিন্তু ততদিন পর্যন্ত ভারতের কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রমে তাদের অংশ নিতে দেওয়া হবে না।’
এনআরসি প্রক্রিয়া নিরর্থক নয় উল্লেখ করে হিমন্ত শর্মা বলেন, ‘১৯৭১ সালের পরবর্তী সময়ে শরণার্থী হিসেবে যারা এসেছেন, তারা সমস্যায় পড়বেন। আমরা তাঁদের প্রতি সহানুভূতিশীল। কিন্তু তালিকায় স্থান পেতে অনেকেই এনআরসি প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করেছেন। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’
এ জন্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর অন্তত ২০ শতাংশ এবং বাকি আসামের ১০ শতাংশ নাগরিকদের পুনঃযাচাইয়ের অনুমতি দিতে সুপ্রিম কোর্টের কাছে দাবি জানান আসামের অর্থমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমরা কিছু অবৈধ অভিবাসী পেয়েছি এবং আমরা এ অনুসন্ধান চালাতে থাকব। আসামের প্রত্যেকটি আদিবাসী তাঁদের জায়গা খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত এ প্রক্রিয়া চলবে।... আমরা ১৪ থেকে ১৫ লাখ বিদেশি শনাক্ত করেছি... এটা প্রমাণিত হয়েছে। মমতা ব্যানার্জি যাই বলুক না কেন, তা আমরা আমলে নিচ্ছি না। কারণ অবৈধ বিদেশিরা তাঁর ভোট ব্যাংক।’
মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে সিনিয়র এই বিজেপি নেতা নিশ্চয়তা দিয়ে বলেন, ‘এমন কিছু ঘটবে না এবং কাউকে আটক করা হবে না। আমাদের কাছে অনেক মানুষের আধার তথ্য রয়েছে। কোনো মানবাধিকার লঙ্ঘন হবে না। আমরা বাংলাদেশকে তাঁদের মানুষদের ফিরিয়ে নিতে বলবো। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে তাদের ভোট দেওয়ার অনুমতি ও নির্দিষ্ট কিছু সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে না।’
এদিকে ইন্ডিয়া টুডেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আসামের অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘বিজেপি বৈধ হিন্দু অভিবাসীদের পাশে থাকবে এবং আমরা তাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করব; যাতে পরবর্তী সময়ে অবৈধ অভিবাসীদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে পারি।’
এর আগে রবিবার এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ‘আসামের এনআরসি নিয়ে বাংলাদেশে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে ভারত অঙ্গীকার করেছে। বাংলাদেশ ভারতের অঙ্গীকার বিশ্বাস করতে চায়। আমরা এখন শুধুই পর্যবেক্ষণ করছি।’
এনআরসি থেকে বাদপড়া নাগরিকরা বাংলাদেশি নয় বলেও জানান তিনি।
গত ৩১ আগস্ট (শনিবার) চূড়ান্ত এনআরসি প্রকাশ করে আসাম সরকার। ওই তালিকায় চূড়ান্তভাবে ঠাঁই হয়েছে ৩ কোটি ১১ লাখ লোকের। আর তালিকা থেকে বাদ পড়েছে ১৯ লাখ ৬ হাজার মানুষ। এই তালিকা নিয়েও ভারতে তীব্র রাজনৈতিক বাদানুবাদ শুরু হয়েছে। তবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যাদের নাম চূড়ান্ত তালিকায় ওঠেনি, তাদের ‘স্টেটলেস’ বলা যাবে না, আইনত ‘বিদেশি’ও বলা যাবে না। যে যে সুবিধা সে ভোগ করে আসছে, তাতে কোনো রকম হেরফের ঘটানো হবে না।
তালিকায় যাদের নাম নেই, তাঁদের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে আবেদন করতে বলা হয়েছে ১২০ দিনের মধ্যে। এ বিষয়ে শুনানির জন্য রাজ্যজুড়ে ১ হাজার ট্রাইব্যুনাল গড়ে তোলা হবে বলে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যেই ১০০ ট্রাইব্যুনাল খোলা হয়েছে। আরো ২০০টি ট্রাইব্যুনাল সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই খোলার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনালে মামলায় হেরে গেলে হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার সুযোগও রয়েছে।