শ্রীলঙ্কার পলাতক প্রেসিডেন্টকে আশ্রয় দিচ্ছে না মালদ্বীপ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২২, ২১:০৩

গোতাবায়া রাজাপাকসে, ফাইল ছবি
শ্রীলঙ্কার
পলাতক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসেকে আশ্রয় দিচ্ছে না মালদ্বীপ। দেশটির সরকার অনতিবিলম্বে
গোতাবায়াকে মালদ্বীপ ছাড়ার আহ্বান জানিয়েছে। খবর টিভি৯ ও ডেইলি মিরর।
কলম্বোভিত্তিক
ডেইলি মিরর জানায়, দেশের বিক্ষুব্ধ জনতার হাত থেকে প্রাণে বাঁচতে মঙ্গলবার (১২ জুলাই)
সপরিবারে সামরিক বিমানে করে মালদ্বীপে আশ্রয় নেন গোতাবায়া। এতে তাকে সহায়তা করেন মালদ্বীপের
সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ।
এখবর প্রকাশের
পর মালদ্বীপে প্রবাসী লঙ্কানরা বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা গোতাবায়াকে শ্রীলঙ্কায় ফেরত
দেয়ার দাবি জানাচ্ছেন। গোতাবায়াকে আশ্রয় দেয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মালদ্বীপের বিরোধী
দলও। বিরোধীদলীয় নেতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট মামুন আবদুল গাইয়ুমের কন্যা দুনিয়া মামুন
বলেন, এখানে শ্রীলঙ্কার পলাতক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার উপস্থিতি নিয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন।
রাজধানী মালে
থেকে আল-জাজিরাকে এক সাক্ষাৎকারে দুনিয়া মামুন আরো বলেন, ‘আমি মনে করি, রাজাপাকসেকে
তার নিজ দেশে ফিরে গিয়ে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা উচিত।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি বলছি না, শ্রীলঙ্কার চলমান পরিস্থিতির সবকিছুর জন্য তিনিই দায়ী।
কিন্তু এই অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টিতে তার বড় ভূমিকা রয়েছে।’
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম
টিভি৯-এর খবরে বলা হয়েছে, বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় গোতাবায়াকে আশ্রয় দিতে চাচ্ছে না
মালদ্বীপ সরকার। আর তাই সরকারের পক্ষ থেকে তাকে যত দ্রুত সম্ভব দেশ ছাড়ার আহ্বান জানানো
হয়েছে। মালদ্বীপের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, গোতাবায়া মালদ্বীপকে ‘শুধু ট্রানজিট’
হিসেবে ব্যবহার করছেন। তিনি এখন সিঙ্গাপুর অথবা দুবাই যেতে পারেন বলে জানাচ্ছে সূত্রগুলো।
স্বাধীনতার
পর স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ আর্থিক সংকটে শ্রীলঙ্কা। বর্তমানে দেশটিতে বিদেশি মুদ্রার
রিজার্ভ বলতে কিছুই অবশিষ্ট নেই। ফলে ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ অধ্যুষিত শ্রীলঙ্কা খাবার,
ওষুধ, জ্বালানির মতো অতি জরুরি আমদানিও করতে পারছে না।
বর্তমান এই
দুরবস্থার জন্য দেশটির অধিকাংশ জনগণ প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে ও তার বড় ভাই সাবেক
প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে দায়ী করে তাদের পদত্যাগের দাবিতে
শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে সাধারণ জনগণ।
প্রায় চার মাস
মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে চললেও কয়েক দিন ধরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। শনিবার
(৯ জুলাই) পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার সরকারি বাসভবনে ঢুকে পড়ে
হাজার হাজার বিক্ষোভকারী।
গোতাবায়া অবশ্য
আগেই বাসভবন ত্যাগ করে রাজধানীর কাছেই একটি সামরিক ঘাঁটিতে গা ঢাকা দেন। প্রেসিডেন্টের
বাসভবনে অবস্থান নেয়া বিক্ষোভকারীরা ঘোষণা দেন, গোতাবায়া পদত্যাগের আগপর্যন্ত তারা
প্রাসাদ থেকে নড়বেন না।
বাসভবন থেকে
পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা শুরু করেন গোতাবায়া। দ্য হিন্দুর এক
প্রতিবেদন মতে, প্রথমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করেছিলেন। এজন্য তিনি
ভিসার আবেদনও করেছিলেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তাকে ভিসা দেয়নি।
এরপর দুবাই
যাওয়ার উদ্দেশ্যে সোমবার পরিবার নিয়ে কলম্বোর বন্দরনায়েকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে
যান। কিন্তু অভিবাসন কর্মকর্তাদের বাঁধার মুখে তার চেষ্টা মাঠে মারা যায়। এরপর মঙ্গলবার
(১২ জুলাই) পদত্যাগপত্র স্বাক্ষরের পর মধ্যরাতে সামরিক বাহিনীর বিমানে করে মালদ্বীপে
পালিয়ে যেতে সক্ষম হন তিনি।
গোতাবায়ার দেশ
ত্যাগের পর নিজেকে শ্রীলঙ্কার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী
রনিল বিক্রমাসিংহে। সেই সাথে দেশজুড়ে জারি করেন জরুরি অবস্থা। কিন্তু তার পরই রনিলের
পদত্যাগের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি কার্যালয়ে হামলা করে তা তছনছ করে একদল বিক্ষোভকারী।
তাদের দাবি, গোতাবায়ার সহযোগী বিক্রমাসিংহেকেও পদত্যাগ করতে হবে।
টেলিভিশনে সম্প্রচারিত
ভাষণে এই হামলার নিন্দা জানিয়ে বিক্রমাসিংহে বলেন, ‘আমরা সংবিধানকে পদদলিত করতে পারি
না। কোনো ফ্যাসিবাদী শক্তি দেশের ক্ষমতা নিয়ে নেবে, তা আমরা হতে দিতে পারি না। গণতন্ত্রের
জন্য হুমকি হয়ে ওঠা প্রতিটি ফ্যাসিবাদী তৎপরতা অবশ্যই দমন করা হবে।’