বিদ্রোহী জোটের হামলা

মিয়ানমারে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে জান্তা

মিয়ানমারে সামরিক জান্তাবিরোধী একটি বিদ্রোহী জোট উত্তরাঞ্চলের বেশি কিছু এলাকা দখল করে নিয়েছে। এর মধ্যে আছে চীনের সঙ্গে সীমান্তের কিছু এলাকাও। তিন গোষ্ঠীর বিদ্রোহী এই জোটের সমন্বিত হামলায় বহু এলাকা হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায় গত আড়াই বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে মিয়ানমার জান্তা।

বিদ্রোহী জোট ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’ হামলার নেতৃত্ব দিয়েছে। এই জোট তিনটি গোষ্ঠী নিয়ে গঠিত। এগুলো হলো- ‘তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি’ (টিএনএলএ), ‘আরাকান আর্মি’ (এএ) এবং ‘মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি’ (এমএনডিএএ)।

যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি বিষয়ক গবেষণা ও পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান বলেছে, জান্তা বিরোধী এই যোদ্ধারা  ‘নজিরবিহীন সমন্বিত’ হামলা চালিয়ে ১০০ টি সামরিক ফাঁড়ি দখল করে নিয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ একটি বাণিজ্যিক সীমান্ত ক্রসিংও জান্তা হারাতে বসেছে। ওই ক্রসিং দিয়ে সীমান্তের এপার ওপরে ৪০ শতাংশ বাণিজ্য হয় এবং এটি কর রাজস্ব আয়েরও অন্যতম পথ।

২০২১ সালে সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের এটি সবচেয়ে ‘উল্লেখযোগ্য জয়’ বলেই অভিমত বিদ্রোহী কমান্ডার, কুটনীতিক এবং বিশ্লেষকদেরও।

সীমান্ত পরিস্থিতির অবনতিতে উদ্বিগ্ন চীন মিয়ানমারে সব পক্ষকে অবিলম্বে লড়াই থামানের আহ্বান জানিয়েছে। গত শুক্রবার চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বলেছে, তারা মিয়ানমার সীমান্তে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নেবে।

সম্প্রতি কয়েক সপ্তাহে উত্তরের শান রাজ্যে মিয়ানমারের সঙ্গে চীনের সীমান্তে তুমুল লড়াই হয়েছে। সেখানে তিনটি শক্তিশালী জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী একযোগে হামলায় নেতৃত্বে দিয়ে একাধিক শহর এবং সামরিক ফাঁড়ি দখল করেছে।

চীনের সঙ্গে সীমান্ত অঞ্চলে সহিংসতা দমনে অকার্যকর ব্যবস্থাপনার কারণে দেশ ভেঙে পড়ার ঝুঁকিতে আছে বলে বৃহস্পতিবারেই সতর্ক করেছেন সামরিক জান্তা-শাসিত মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট ইউ মিয়ন্ত সুয়ে।

চলতি সপ্তাহের লড়াইয়ে চীন সীমান্তবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হাতছাড়া হয়েছে। মিয়ানমার-চীন সংযোগরক্ষাকারী সড়কও এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে বলে তিন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর জোট দাবি করেছে।

এই বিদ্রোহী জোট চিন-মিয়ানমার বাণিজ্যের ‘কেন্দ্র’ বলে পরিচিত সীমান্তবর্তী চিনশয়েহাউ শহর দখল করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। সেখানে কয়েকটি চিনা বাণিজ্যিক সংস্থার দপ্তরেও তারা হামলা চালায়।

২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে মিয়ানমারের ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকেই জান্তা সরকার কঠিন সময় পার করছে। জান্তাবিরোধী বিভিন্ন বিদ্রোহী ও সশস্ত্র জাতিগত গোষ্ঠী মিয়ানমারের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিশাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলর শত শত জান্তা ঘাঁটিতে অহরহ হামলা চালাচ্ছে।

বিদ্রোহী হামলা সম্পর্কে জানেন এমন একজন কূটনীতিক বলেছেন, অভ্যুত্থানের পর থেকে তাতমাদো (সেনাবাহিনী) এখনই সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় উপনীত হয়েছে। আরও দুইজন কুটনীতিকও তার সঙ্গে এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন।

সূত্র- রয়টার্স

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2023 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //