Logo
×

Follow Us

অ্যাথলেটিক্স

এসএ গেমসে স্বর্ণ জয়ের রেকর্ড বাংলাদেশের

Icon

মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল, নেপাল থেকে ফিরে

প্রকাশ: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯, ১০:৩০

এসএ গেমসে স্বর্ণ জয়ের রেকর্ড বাংলাদেশের

এক আর্চারি থেকেই ১০ স্বর্ণ! ফাইল ছবি

বাংলাদেশের জন্য দক্ষিণ এশিয়ান (এসএ) গেমস অনেক বড় ক্রীড়া আসর হিসেবে বিবেচিত। কারণ এখান থেকেই স্বর্ণ নামক পদকের দেখা মেলে। আঞ্চলিক কিংবা বৈশ্বিক আসরে বাংলাদেশের পদকের সংখ্যাটা যে একেবারেই নগন্য। 

অলিম্পিক, এশিয়ান কিংবা কমনওয়েলথ গেমসে পদকের সংখ্যাটা যে একেবারেই কম। সে কারণে এসএ গেমসই বাংলাদেশের জন্য আনন্দের উপলক্ষ বয়ে নিয়ে আসে। তাই প্রতিটি আসরের জন্য অপেক্ষাটা একটু বেশিই করতে হয়। 

২০১৬ সালের শিলং-গৌহাটি আসরে মাত্র চারটি স্বর্ণ পদক জিতে চরমভাবে হতাশ করে লাল-সবুজ অ্যাথলেটরা। এবার যখন আরেকটি আসর সামনে চলে এসেছিল, তখনো আশাবাদী হতে পারেনি কেউ। বিশেষ করে নেপালের কাঠমান্ডু-পোখারায় অংশ নিতে যাওয়ার আগে দলের শেখ দ্য মিশন আসাদুজ্জামান কোহিনুর কোনো প্রত্যাশার কথা শোনাতে পারেননি। ২০১০ সালে ঘরের মাঠে ১৮ স্বর্ণ রেকর্ডটি ভাঙা সম্ভব নয়, এমন চিন্তা করাটাও ঠিক হবে না বলে মন্তব্য করেছিলেন হ্যান্ডবল ফেডারেশনের এই সাধারণ সম্পাদক। 

তবে তার কথাকে ভুল প্রমাণ করে এসএ গেমসের ইতিহাসে ১৯ স্বর্ণ জয়ের দারুণ এক রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ। যা কিনা দেশ-বিদেশ মিলিয়ে বাংলাদেশের সেরা অর্জন। 

বিশেষ করে এ আর্চারি থেকেই এসেছে ১০টি স্বর্ণ! এছাড়া কারাতে, ভারোত্তোলন, ক্রিকেট ও ফেন্সিং থেকে এসেছে স্বর্ণ। তবে নিয়মিতভাবে পদক জেতা শুটিং ও সাঁতার চরমভাবে হতাশ করেছে। প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি অ্যাথলেটিক্স। ফুটবল বরাবরের মতো কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে আছড়ে পড়েছে। সবমিলিয়ে ভালো-মন্দের মিশেলে শেষ হয়েছে এবারের আসর। 

এক আর্চারি থেকেই ১০ স্বর্ণ!

বৈশ্বিক কিংবা আঞ্চলিক কোনো আসরে সবগুলো ডিসিপ্লিনে অংশ নিয়ে স্বর্ণ জেতার রেকর্ড তেমন একটা নেই। যে রেকর্ডটি এবার করেছে বাংলাদেশ। ১৩তম এসএ গেমসের আর্চারি থেকেই এসেছে ১০টি স্বর্ণ পদক। সমানসংখ্যক ডিসিপ্লিনে অংশ নিয়েছিল লাল-সবুজের দল। 

কম্পাউন্ড নারী এককে সুমা বিশ্বাস, কম্পাউন্ড পুরুষ এককে সোহেল রানা, কম্পাউন্ড রিকার্ভে মেয়েদের এককে ইতি খাতুন, ছেলেদের রিকার্ভ এককে রোমান সানা, কম্পাউন্ড ছেলেদের দলগততে সোহেল রানা, অসীম কুমার দাস ও মোহাম্মদ আশিকুজ্জামান, কম্পাউন্ড মেয়েদের দলগততে সুস্মিতা বণিক, সুমা বিশ্বাস ও শ্যামলী রায়, কম্পাউন্ড মিশ্র দ্বৈতে জুয়েল রানা ও রোকসানা আক্তার, ছেলেদের রিকার্ভ দলগত ইভেন্টে রোমান সানা, তামিমুল ইসলাম ও হাকিম মোহাম্মদ রুবেল, মেয়েদের রিকার্ভ দলগত ইভেন্টে ইতি খাতুন, মেহনাজ আক্তার ও বিউটি রায়, রিকার্ভ মিশ্র ইভেন্টে রোমান সানা ও ইতি খাতুন স্বর্ণ জয় করেন। যাতে রচিত হয় নতুন ইতিহাস।

ভারোত্তোলনে ধারাবাহিক মাবিয়া, ফেন্সিংয়ে ফাতেমার ইতিহাস

২০১৬ সালের শিলং-গৌহাটি এসএ গেমসে ভারোত্তোলন থেকে স্বর্ণ পদক জিতে পুরস্কার মঞ্চে জাতীয় সংগীত বাজানোর সময় কেঁদে দিয়েছিলেন, যা সারাদেশের মানুষের মধ্যে আলোড়ন তুলেছিল। প্রায় চারবছর পর আরেকটি আসরে ঠিকই স্বর্ণ জিতেছেন। ভারোত্তোলনে মাবিয়া আক্তার সীমান্তর পাশাপাশি স্বর্ণ জিতেছেন জিয়ারুল ইসলাম। 

গতবারের সাফল্যের কারণে এবার মাবিয়াকে ঘিরেই প্রত্যাশাটা ছিল বেশি। ফেডারেশনের কর্মকর্তা ও কোচও বলে যান তার সাফল্যের সম্ভাবনার কথা। মাবিয়া অবশ্য ততটা নির্ভার ছিলেন না। ৬৩ কেজি ওজনের বদলে ৭৬ কেজি ক্যাটাগরি বেছে নেন। চার সোনা জেতার পর গেমসে যখন বাংলাদেশ থমকে দাঁড়িয়ে ছিল। তখন দৃষ্টি ছিল মাবিয়ার দিকে। এবারও বিজয়ের মঞ্চে উড়ালেন লাল-সবুজের পতাকা। আর এ থেকেই গেমস ইতিহাসে নতুন এক ইতিহাস গড়ে ফেললেন মাবিয়া। 

১৯৮৪ সালে এসএ গেমস শুরু হওয়ার পর অ্যাথলেট শাহ আলম ১৯৮৫ ও ১৯৮৭ সালে টানা দুবার ব্যক্তিগত ইভেন্টে স্বর্ণ জেতেন। এবার তা স্পর্শ করলেন মাবিয়া। 

এছাড়া প্রথমবারের মতো অন্তর্ভুক্ত হওয়া ফেন্সিংয়ে মেয়েদের সাবের এককে সেরা হন ফাতেমা মুজিব। ২০০৭ সাল প্রথম বাংলাদেশে এই খেলার প্রচলন শুরু হয়। ২০১৩ সালে বড় ভাই সাদ্দাম মুজিবের উৎসাহে ফেন্সিংয়ে আসেন ফাতেমা। এসএ গেমসের আগে চারবার জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। 

পাঁচ ডিসিপ্লিনের শূন্য হাতে ফেরা

বর্তমান সময়ে এসে কোনো পদক জিততে না পারা ডিসিপ্লিনও বৈশ্বিক কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে থাকে। বাংলাদেশও নিয়েছে। ১৩তম এসএ গেমসে নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ১৯ স্বর্ণ জিতলেও মুদ্রার উল্টাপিঠও দেখতে হয়েছে।

পাঁচটি ডিসিপ্লিন কোনো পদক না জিতেই দেশে ফিরে এসেছে। ভলিবল, বাস্কেটবল, সাইক্লিং, টেনিস ও স্কোয়াশ র‌্যাকেটস বাংলাদেশকে লজ্জায় ডুবিয়েছে। আলোচিত এই ডিসিপ্লিনের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা আবার বিওএর সঙ্গেও জড়িত। তাই অংশগ্রহণের জন্য প্রতি বছর এভাবে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার দিন যে ফুরিয়েছে সেটি এখন বলাই যায়। আর যেসব ডিসিপ্লিন কোনো পদকই জিততে পারবে না তাদের নিয়ে ভবিষ্যতে ভাবনা ভাবতেই হবে।

স্বর্ণে আলোকিত ক্রিকেট, কারাতে, তায়কোয়ানদো 

 ছেলে ও মেয়ে উভয় ক্রিকেটেই এবার স্বর্ণ জেতে বাংলাদেশ। ছেলেদের আসরের ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে ৭ উইকেটে হারিয়ে সেরা সাফল্য এনেছে নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২৩ দল। লঙ্কানদের ১২২ রানের জবাব ১১ বল আর ৭ উইকেট হাতে রেখেই টপকে যায় বাংলাদেশ। 

মেয়েদের ক্রিকেটের ফাইনালে একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে ২ রানের জয়ে স্বর্ণ জেতে বাংলাদেশ। 

তায়কোয়ানদো থেকে আসরে স্বর্ণ জয়ের শুরুটা করেছিলেন দিপু চাকমা। ২৯ প্লাস বয়স শ্রেণির ইভেন্ট স্বর্ণ জেতেন ৮.২৮ ও ৭.৯৬ স্কোর গড়ে। কারাতে থেকে আসে তিন সাফল্য। ছেলেদের একক কুমিতের অনূর্ধ্ব-৬০ কেজির ইভেন্টে আল আমিন, মেয়েদের কুস্তিতে অনূর্ধ্ব-৫৫ কেজির ইভেন্টে মারজান আক্তার প্রিয়া এবং অনূর্ধ্ব-৬১ কেজি ওজন শ্রেণিতে হোমায়রা আক্তার অন্তরা স্বর্ণ জেতেন। 

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫