নূর চৌধুরীর তথ্য প্রকাশ
বাংলাদেশের আবেদনে কানাডার আদালতের সাড়া

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১২:৩৭

এস এইচ বি এম নূর চৌধুরী। ছবি: গুগল
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অন্যতম আত্মস্বীকৃত ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত খুনি এস এইচ বি এম নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরানোর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের আবেদনে সাড়া দিয়েছেন কানাডার আদালত।
সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা কীভাবে কানাডায় বসবাস করছেন, সেই অভিবাসন সংক্রান্ত তথ্য দেশটির সরকারের কাছে চেয়েছিল বাংলাদেশ।
কিন্তু কানাডার আইনে মৃতুদণ্ডপ্রাপ্ত কাউকে প্রত্যর্পণে বাধা থাকায় সে দেশের সরকার ‘জনস্বার্থ রক্ষার’ যুক্তি দিয়ে তথ্য প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল। এ নিয়ে এক মামলায় কানাডার ফেডারেল আদালত মঙ্গলবার বাংলাদেশের পক্ষে রায় দিয়েছে বলে খবর দিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলো।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার কানাডার ফেডারেল কোর্টের বিচারক জেমস ডব্লিউ ওরেইলি সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য দেশটির প্রশাসনকে এই নির্দেশ দেন। আর এর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি নূর চৌধুরীকে দেশে ফেরানোর চেষ্টায় এক ধাপ অগ্রগতি হয়েছে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রায়ে আদালতের বিচারক বলেছেন, নূর চৌধুরীর অভিবাসন সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশে জনস্বার্থের ব্যাঘাত ঘটবে না। সুতরাং তার বিষয়ে বাংলাদেশকে তথ্য না দেওয়ার সিদ্ধান্ত কানাডা সরকারকে পুনর্বিবেচনা করতে হবে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে আইন করে এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথও রুদ্ধ করে দেয় পঁচাত্তর পরবর্তী সরকার।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এলে বন্ধ হয়ে যায় এ মামলার বিচার কাজ। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ২০০৯ সালে পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর মামলার বিচার কাজ ফের শুরু হয়। এরপর মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করে দণ্ডিত পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, মহিউদ্দিন আহমদ (ল্যান্সার), এ কে বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিনকে (আর্টিলারি) ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়।
কিন্তু মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত খন্দকার আবদুর রশিদ, এ এম রাশেদ চৌধুরী, শরিফুল হক ডালিম, এসএইচএমবি নূর চৌধুরী, আবদুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিন খান বিদেশে পলাতক রয়ে যান। এর মধ্যে জানা যায়, নূর চৌধুরী কানাডায় এবং রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। তবে এখনো শনাক্ত হয়নি বাকিদের অবস্থান। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের দেশে ফেরানোর চেষ্টায় ইন্টারপোল থেকে রেড অ্যালার্ট জারি করা হলেও তাতে কোনো সুফল পাওয়া যায়নি।
কানাডার সংবামমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ১৯৯৬ সালে সে দেশে যাওয়ার পর উদ্বাস্তু হিসেবে আশ্রয়ের আবেদন করেন নূর চৌধুরী ও তার স্ত্রী। তার দুই বছরের মাথায় নিম্ন আদালতে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায়ে নূর চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হয়। গুরুতর অপরাধে সংশ্লিষ্টতার তথ্য থাকায় ২০০২ সালে কানাডা নূর চৌধুরী দম্পতির আশ্রয়ের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে। আপিল করেও ২০০৬ সালে তারা হেরে যান। কিন্তু তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়নি।
এর আগে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই কানাডা থেকে বহিষ্কার এড়াতে নূর চৌধুরী সে দেশের অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তরে ‘প্রি-রিমুভাল রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট ’ আবেদন করেন।
আবেদনে নূর চৌধুরী বলেছিলেন, তাকে কানাডা থেকে বাংলাদেশে পাঠানো হলে ফাঁসি দেওয়া হবে। কানাডার অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তর প্রায় ১০ বছর ধরে ওই আবেদন ঝুলিয়ে রাখায় নূর চৌধুরীর বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা চেয়ে গত বছরের জুন মাসে এই মামলাটি করে বাংলাদেশ সরকার।