Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

সুষ্ঠু বিচার পেলে দেশে ফিরতে রাজি আরাভ খান

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২৩, ২০:২৪

সুষ্ঠু বিচার পেলে দেশে ফিরতে রাজি আরাভ খান

পুলিশ হত্যা মামলার আসামি আরাভ খান। ছবি: সংগৃহীত

পুলিশ পরিদর্শক মামুন হত্যাকাণ্ডে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে দুবাইয়ের স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খান জানিয়েছেন, সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস পেলে দেশে ফিরতে রাজি আছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) বেলা ১২টার দিকে ফেসবুক লাইভে এসে তিনি এ কথা বলেন।

আরাভ খান বলেন, দেশের বাহিরে আসার সময় কোনো পুলিশ সদস্য আমাকে সহায়তা করেননি। আমি একজন ব্যবসায়ী। আমার সঙ্গে সবার সম্পর্ক থাকবে এটাই স্বাভাবিক।

তিনি বলেন, আমি জীবনে কাউকে একটা চড় মারিনি। আমার বিরুদ্ধে একটি মামলা চলমান রয়েছে সেটি মিথ্যা নয়। কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সাথে আমি জড়িত নই। আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম না। যে অফিসে হত্যাকাণ্ডটি হয়েছে সেই অফিসের মালিক আমি। তাই আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আমি এটা মোকাবিলা করতে রাজি আছি।

দুবাইয়ের এই স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরও বলেন, ডিসকাউন্টে গ্রাহকদের কাছে স্বর্ণ পৌঁছে দেব— এমন ঘোষণা দেওয়াই আমার কাল হয়েছে। স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশ আমার বিপরীতে রয়েছে।

ফেসবুক লাইভে আরাভ খান আরও বলেন, আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আমি অপরাধী কিনা সেটা যাচাই করবে আদালত। মামলা চলমান রয়েছে, রায়ের জন্য অপেক্ষা করুন। আমি যদি অপরাধী হই, বিচারে যদি দোষী হই—সেই সাজা মাথা পেতে নেব।

এদিকে, আরাভ খানকে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাইবে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। ডিএমপির ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ  আজ বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) বলেন, আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলাম পুলিশ কর্মকর্তা মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার পলাতক আসামি। আমরা ইন্টারপোলের সহায়তায় তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে আইনগত ব্যবস্থা নেব।

মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আমরা দেখেছি, বাংলাদেশের সাকিব আল হাসানসহ অন্যান্য, যাদের স্টার বলা হয়; তারা সেখানে (দুবাই) হাজির হয়েছেন। আরাভ খান একজন মার্ডারার, তিনি একজন খুনি। তিনি একজন পুলিশ ইন্সপেক্টরকে খুন করেছেন। তাদের অবগত করার পরও দুবাইয়ে গিয়ে আরাভ খানের স্বর্ণের দোকানের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। এটা আসলে দুঃখজনক। তারা কেন করেছেন, আমি জানি না। তবে, আরাভ খান কীভাবে দেশত্যাগ করলেন, সেটি খতিয়ে দেখা হবে।’

হারুন অর রশীদ আরও বলেন, আমাদের পুলিশের একজন মেধাবী কর্মকর্তা ছিলেন পরিদর্শক মামুন। তাকে শুধু হত্যাই করেনি, তার লাশ যেন না পাওয়া যায় সেজন্য কালীগঞ্জের জঙ্গলে ফেলে দিয়েছিল। এ ঘটনার পর মামলা হয়, যার তদন্ত করেছে ডিবি। হত্যা মামলায় আসামি আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলাম পালিয়ে গেলেও নকল একজন আসামি জেলখানায় দেয় সে। পরে ডিবির তদন্তে নকল আসামির ঘটনা সামনে আসে। এরমধ্যে মূল আসামি দুবাইয়ে স্বর্ণের দোকানের মালিক রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান ভারতে পালিয়ে যায়। সেখান থেকে ভারতীয় পাসপোর্টে দুবাই যায়।

এদিকে গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, রবিউল ইসলামের একটি বাংলাদেশি পাসপোর্ট রয়েছে। সেখানে তার নাম ব্যবহার করা হয়েছে হৃদি খান। ওই পাসপোর্টের নম্বর ০৩৮৫১৮৮। হত্যা মামলার পর ভারতে গিয়ে আরাভ খান নাম দিয়ে ২০২০ সালের ২৮ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের নরেন্দ্রপুর উদয় সংঘ ক্লাব এলাকার বাসিন্দা হিসেবে একটি ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি করেন। জালিয়াতি করে বানানো ওই পাসপোর্টে তাঁর বাবার নাম লেখেন জাকির খান, মায়ের নাম দেন রেহানা বিবি খান এবং স্ত্রীর নাম সাজিমা নাসরিন। তাঁর ভারতীয় পাসপোর্ট নম্বর ইউ ৪৯৮৫৩৮৯। রবিউল ভারতীয় পাসপোর্ট সংগ্রহ করে আপন আরাভ নাম নিয়ে দুবাই যাতায়াত শুরু করেন। ওই পাসপোর্ট দিয়ে ইউরোপেও ভ্রমণ করেন।

ডিবি পুলিশ সূত্র জানায়, নিজেকে বাঁচাতে প্রতারণার মাধ্যমে আবু ইউসুফ নামের আরেক যুবককে রবিউল সাজিয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করানো হয়। রবিউলের নাম–ঠিকানা ব্যবহার করে আবু ইউসুফ ২০২০ সালে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। আদালত তাঁকে জেলে পাঠান। প্রায় ৯ মাস জেলে থাকার পর সেই তরুণ একপর্যায়ে সত্য প্রকাশ করে দেন।

দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর সম্প্রতি আলোচনায় আসেন আরাভ। বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে দিয়ে দুবাইয়ে তার শোরুম উদ্বোধন করা হবে- এই ঘোষণার মাধ্যমে আলোচনায় আসেন। চলচ্চিত্র পরিচালক-উপস্থাপক দেবাশীষ বিশ্বাস, চিত্রনায়িকা দিঘী ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিরো আলমকেও দুবাইয়ে নেওয়ার আমন্ত্রণ জানান তিনি। দুবাইয়ে তারকাদের আমন্ত্রণ নিয়ে কয়েক দিন ধরেই চলছে নানা গুঞ্জন। ‘আরাভ জুয়েলার্স’ নামের ওই প্রতিষ্ঠানের মালিকের নাম আরাভ খান।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘোষণাটি ছড়িয়ে পড়ার পর নড়েচড়ে বসে গোয়েন্দারা। দীর্ঘদিন ধরে যাকে খোঁজা হচ্ছিল তিনি দুবাইয়ে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ‘আরাভ জুয়েলার্স’ নামে সোনার দোকান দিতে যাচ্ছেন। কিনেছেন বাড়ি-গাড়ি। দুবাইয়ে রয়েছে তার কোটি কোটি টাকার ব্যবসা।

দুবাইয়ের নিউ গোল্ড সুকে উদ্বোধন করা হয়েছে আরাভ জুয়েলার্স। কয়েক দিন আগে এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের খ্যাতিমান তারকাদের সম্ভাব্য উপস্থিতির কথা উল্লেখ করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন রবিউল ওরফে আরাভ। সেখানে তিনি লিখেছিলেন, দুবাইয়ের বুর্জ খলিফা টাওয়ারের ৬৫তলায় ফ্ল্যাট কিনেছেন। যার নম্বর ৬৫১০। আরও ৪-৫টি ফ্ল্যাটের মালিক তিনি। পাশাপাশি রয়েছে একটি সুইমিংপুল ও বাগানসহ বড় ডুপ্লেক্স বাড়িও।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫