
প্রতীকী ছবি
বাংলাদেশে কর স্বচ্ছতার ক্ষেত্রে বড় রকমের ঘাটতি রয়েছে। কর ফাঁকি এবং কর এড়ানো বা অব্যাহতির কারণে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
বাংলাদেশে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের আকার প্রায় ৩০ শতাংশ। দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে এই খাত দিন দিন বড় হচ্ছে। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে সরকার প্রতিবছর ৮৪ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে বলে জানিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)। দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে এই খাত দিন দিন বড় হচ্ছে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
আজ সোমবার (৩ এপ্রিল) গবেষণা প্রতিষ্ঠান করপোরেট খাতে কর স্বচ্ছতা : বাজেটে সরকারি আয়ের অভিঘাত শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য উঠে এসেছে। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।
গবেষণাপত্রটি উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, সিপিডির গবেষণায় দেখা গেছে ৬৮ শতাংশ মানুষ করযোগ্য আয় করার পরও আয়কর দেন না। অর্থাৎ দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ কর দেওয়ার যোগ্য হওয়ার পরও কর দেন না। কর জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধি না হওয়ার বড় কারণ এটি। অন্যদিকে জয়েন্টস্টক কম্পানিতে ২ লাখ ১৩ হাজার কোম্পানি রেজিস্টার্ড হলেও রিটার্ন দাখিল করে মাত্র ৪৫ হাজার কোম্পানি।
তিনি জানান, বাংলাদেশে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের আকার ৩০ শতাংশ। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে করের পরিমাণ ছিল ২০১০ সালে ২২ হাজার কোটি টাকা যা ২০২১ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৪ হাজার কোটি টাকা। ছায়া অর্থনীতিতে ৮৪ হাজার কোটি টাকা কর ক্ষতি হচ্ছে। যা জিডিপির প্রায় ৩০ শতাংশ।
তিনি আরও জানান, এই টাকা যদি পাওয়া যেত তাহলে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয় তিনগুণ বৃদ্ধি করা যেত। অর্থাৎ করনেট বৃদ্ধির প্রধান প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত। বড় অংশই করের বাইরে থেকে যাচ্ছে। ফলে কর লস দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তিনি বলেন, কর অব্যাহতি নির্দিষ্ট সময় ও লক্ষ্যভিত্তিক হওয়া উচিত। আর্থিক খাতের সব লেনদেন সমন্বিত হওয়া দরকার। এ সম্পর্কিত রিপোর্ট ইন্টিগ্রেট হওয়া উচিত। এর অংশ হিসেবে ডিজিটালাইজেশন ও ইন্টারনেটভিত্তিক ট্রানজেকশন হওয়া উচিত। কর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাধ্যতামূলক সাস্টেইনেবল রিপোর্টিংয়ে যাওয়া দরকার।
করপোরেট খাতে কর স্বচ্ছতা সম্পর্কিত গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করে তিনি বলেন, গবেষণাটি যৌথভাবে সম্পন্ন করেছেন সিপিডি ও খ্রিষ্টান এইড। ১২ জন অডিটরস ও রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এ গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, কর অসচ্ছতাকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। কর ফাঁকি ও কর এড়ানো। কর ফাঁকি দিতে গিয়ে কোম্পানি তার প্রকৃত আয় কম দেখিয়ে থাকে। অন্যদিকে কর এড়ানোর বিষয়টি হলো লিগ্যাল ফ্রেমের আওতায় সরকারের দেওয়া সুবিধা গ্রহণ করে থাকে। আমাদের দৃষ্টিতে এটাও কর অস্বচ্ছতা।