Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

জমে উঠেছে ঈদ বাজার

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:৪৪

জমে উঠেছে ঈদ বাজার

এক বিপণী দোকান থেকে তোলা ছবি। ছবি: সংগৃহীত

সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের কর্তা ফিরোজ হোসাইন। ভরদুপুরের কড়া রোদে প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে গুলিস্তানের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছেন তিনি। কিন্তু মনের মতো পোশাক মিলছে না কিছুতেই। স্বামীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে হাঁফিয়ে উঠেছেন স্ত্রী দিপালী আক্তার ও দুই সন্তান সাহেল ও অশ্রান্ত। ঈদ বলে কথা। তাই দুই সন্তানের জন্য শেষ মুহূর্তে কেনাকাটায় এসেছে এই পরিবার। 

গুলিস্তানের ঢাকা ট্রেড সেন্টারের সামনের সড়কে কথা তাদের সঙ্গে। ফিরোজ জানান, অনেক ঘুরাঘুরি করে গোলাপ শাহ মাজারের সামনে ফুটপাথ থেকে মেয়ের জন্য ৩০০ টাকা দিয়ে একটি ফ্রক ও ২০০ টাকা এক জোড়া জুতা কিনেছি। এখন ছেলের জন্য প্যান্ট-শার্ট কিনব। যেগুলো পছন্দ হয় দাম খুব বেশি চাচ্ছে। কিন্তু এত দামে তো কেনার সামর্থ্য আমাদের নেই, তাই ঘুরছি। 

এই পরিবারের মতো অনেককেই ঈদের আগমুহূর্তে কেনাকাটায় বের হওয়া মানুষকে গরমে নাকাল হতে দেখা গেছে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলিস্তান মোড়ের চারপাশ, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ হকার্স সমিতি মার্কেট, বায়তুল মোকাররম মার্কেটের চারপাশ, দৈনিক বাংলা মোড়, মতিঝিল, ফকিরাপুল এলাকা, নয়াপল্টন, শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেট, নিউমার্কেট, গাউছিয়া, চাঁদনিচক, বসুন্ধরা শপিং মল, ফার্মগেটসহ বিভিন্ন মার্কেটে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকে সরগরম প্রতিটি জামা-কাপড়ের দোকান। 

দুপুরের পর থেকে ক্রেতার উপস্থিতি বাড়তে থাকে। ফুটপাথ থেকে শুরু করে মূল দোকানের ভেতরে কোথাও যেন পা ফেলার জায়গা নেই। সবখানেই মানুষ আর মানুষ। দেশি-বিদেশি নানা রঙের বাহারি রং ও ডিজাইনের পোশাক সাজিয়ে রেখেছেন বিক্রেতারা। শিশুদের নজর ঝলমলে পোশাকের দিকে। বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও নন-ব্র্যান্ডের দোকান ঘুরে ঘুরে দেখছেন ক্রেতারা। 

জুতা ও কাপড়সহ কিনছেন নানা ধরনের পণ্য। ক্রেতাদের মনোযোগ আকর্ষণে কোনো কমতি নেই পছন্দের বিক্রেতাদের। কেউ এসেছেন পরিবার নিয়ে আবার কেউ এসেছেন বন্ধুবান্ধবসহ। 

শপিং মলগুলোর বিভিন্ন ফ্লোরে থাকা দোকানগুলো ঘুরে ঘুরে কেনাকাটা করছেন ক্রেতারা। প্রতিটি ফ্লোরে বিভিন্ন বয়সি মানুষের জটলা। দোকানেও ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে বিক্রেতারা। তবে ইফতারের পর ক্রেতাদের ভিড় আরও বাড়বে বলে মনে করছেন দোকান মালিকরা।

দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, শিশুদের বাহারি ডিজাইন ও নানা রঙের ভালো মানের পোশাক সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। ছেলেদের শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবি, গেঞ্জি, জুতা, প্যান্টের বেল্ট, ঘড়ি, চশমা, টুপি থেকে শুরু করে সব কিছুই পাওয়া যাচ্ছে। একই সঙ্গে মেয়েদের থ্রি পিস, টু পিস, স্কার্ট, লেহেঙ্গা, ছোট-বড় ফ্রক, নানা ধরনের কসমেটিকসও বিক্রি করতে দেখা গেছে। সারি সারি এসব দোকান থেকে পছন্দমতো জামা-কাপড়সহ পছন্দমতো কেনাকাটা করছেন অল্প আয়ের মানুষ। আর সাধ্যের মধ্যে পণ্য কিনতে পেরে যেমন খুশি, তেমনি পণ্য বিক্রি করে খুশি দোকানিরাও। গ্রীষ্মের তাপদাহের হাত থেকে রেহাই পেতে সুতির পোশাকই ক্রেতাদের আকর্ষণ বেশি বলে জানা গেছে। কেউ কেউ দাম বেশি রাখার অভিযোগ করেছেন।

রাজধানীর বায়তুল মোকাররম এলাকায় দেখা গেছে, দোকানে দোকানে নানা ডিজাইনের পাঞ্জাবি, পায়জামা, জায়নামাজ, টুপি সারি করে সাজানো রয়েছে। এসব দোকানে সুগন্ধির সঙ্গে পাওয়া যাচ্ছে টুপি, তসবিহ, সুরমা ও জায়নামাজ।

বায়তুল মোকাররমে কেনাকাটা করতে আসা বেসকারি চাকরিজীবী আসাদুল ইসলাম বলেন, বাবা,  ছেলে ও আমার জন্য ৩টা পাঞ্জাবি কিনেছি ২ হাজার ১০০ টাকা দিয়ে। কাপড়গুলো ভালো এবং দামেও সস্তা। তাই খুব খুশি লাগছে। এখন টুপি কেনা হলেই ঈদের বাজার এক প্রকার শেষ বলতে পারি।

ফয়সাল হোসেন নামের এক টুপি বিক্রেতা বলেন, ঈদের সময় ছাড়া টুপি তেমন বিক্রি হয় না। আমরা সারা বছর এই সময়ের জন্যই অপেক্ষা করি। তবে এবার বিক্রি মোটামোটি। খুব বেশি না আবার একেবারে কমও না।

শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে শাড়ির দোকানগুলোতে ভিড় দেখা গেছে। সাদা-কালো, লাল-সবুজ বাহারি রঙের বুটিক্স, প্রিন্ট, তোসর সিল্ক, ঢাকাই জামদানি, লেহেঙ্গা, তাঁতের শাড়ি ও কাতানসহ বিভিন্ন রকমারি শাড়ি শোভা পাচ্ছে এখানকার শাড়ির দোকানগুলোতে। ক্রেতারাও আসছেন রকমারি এসব শাড়ির হাতছানিতে। দর-দাম পরখ করে দেখছেন। কিনছেনও কেউ কেউ।

পুরান ঢাকার আগামাসিহ লেনের বাসিন্দা জান্নাতুল মাওয়া বলেন, এখানে কাপড়ের মাপ, মান এবং রং ও ভালো। তবে এবার দাম খুব বেশি বলে মনে হচ্ছে।

শাহবাগের বিসর্গ হাউসের কর্মচারী হুমায়ন কবির বলেন, গত এক বছরে কয়েক দফায় সুতা, রংসহ তাঁত কাপড়ের কাঁচামালের দামসহ উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এ ছাড়াও দেশে নিত্যপণ্যসহ সবকিছুর দামও বেড়েছে। কাপড়েও দামেও তার একটা প্রভাব পড়েছে। তাই বেচাকেনা তুলনামূলক কম হচ্ছে।

নিউমার্কেট, চন্দ্রিমা মার্কেট ছাড়া গাউছিয়া, নূরজাহান মার্কেটসহ আশপাশের অন্যান্য মার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের সরগরম উপস্থিত দেখা গেছে।

নিউমার্কেট এলাকায় ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছেন দুই বোন। তাদের একজন জেবা আক্তার বলেন, আজকেই নিজের ও আত্মীয়স্বজনের জন্য শপিং শেষ করতে চাই। সকালে এসেছি বাচ্চাদের কেনাকাটা করেছি এখন বাকি আমার। তিনি বলেন, মার্কেটের মধ্যে বড় দোকানগুলোতে অনেক দাম। এত টাকা দিয়ে আমার পক্ষে জামা কেনা সম্ভব না। বড় মেয়ের জন্য একটি ১ হাজার টাকা দিয়ে জামা কিনেছি। এখন ছেলের জন্য পাঞ্জাবি পায়জামা দেখছি। তবে বাচ্চাদের পোশাকের দাম কিছুটা বাড়তি।

জেসমিন নামের আরেক ক্রেতা বলেন, পরিবারের সবার জন্য কেনাকাটা করেছি। এখন কিছু কসমেটিকস কিনতে এসেছি। ঈদের আগের দিন গ্রামের বাড়ি বরিশাল যাব। সবকিছুর দাম অনেক বাড়ছে। না কিনে উপায় নেই। তবে দামটা একটু সহনশীল হলে ভালো হয়।

নিউমার্কেটে ফুটপাথের দোকানদার মুকছেদ হোসেন বলেন, রমজানের প্রথম দিকে তেমন বেচা-বিক্রি ভালো ছিল, কিন্তু মাঝখানে আগুনের ঘটনায় কিছুটা হয়েছিল। তবে এখন বেচাকেনা আশানুরূপ হচ্ছে। সবমিলিয়ে গত দুই বছরের চেয়ে বেচাকেনা মোটামুটি ভালো হচ্ছে। গাউসিয়া মাকের্টের পায়েল ফ্যাশনের প্রোপ্রাইটর সিমা আকতার সময়ের আলোকে বলেন, স্বাভাবিকভাবেই অন্যান্য সময়ের তুলনায় ঈদে বেচাকেনা বেড়ে যায়। আমরাও ক্রেতাদের চাহিদামতো পোশাক আনার চেষ্টা করি। তবে বেচাকেনা একেবারে খারাপ না। আশা করছি সামনে যে সময়টুকু আছে আরও ভালো বিক্রি হবে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫