
আরাভ খান। ছবি: সংগৃহীত
ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেপ্তার হয়ে টানা একমাস ৭ দিন কারাগারে ছিলেন বলে দাবি করেছেন পুলিশ পরিদর্শক হত্যা মামলার আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান। সেখানে তার সঙ্গে ‘বড় বড়’ আসামিরাও জেল খাটেন বলে দাবি দুবাইয়ের এই স্বর্ণ ব্যবসায়ীর।
আজ বৃহস্পতিবার (৪ মে) রাতে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লাইভে এসে তিনি এসব কথা বলেন।
আরাভ খান বলেন, ‘যারা ফোন করেছেন এবং জানতে চেয়েছেন আমি এতদিন কোথায় ছিলাম, তাদের জন্য আমার এই লাইভে আসা। অনেক সাংবাদিক ভাইরা আমাকে ফোন করেছে। আমি নিজের মুখেই বলতে চাই আমি কোথায় ছিলাম।
‘মিডিয়া বলেছে, আমি দুবাই ছেড়ে চলে গিয়েছি, পালিয়েছি। আসলে আমি পালানোর মতো লোক না। কারণ হলো, আমি তো চুরি করি নাই। আমি কেন পালাব। আমাকে যখন ইন্টারপোল রেড অ্যালার্ট জারি করে, আমাকে উনারা ফোন করেন। আমাকে বলে, আপনার নামে একটা ফাইল এসেছে আপনি আসুন। আপনাকে অ্যারেস্ট করব। তো অ্যারেস্ট করার থেকে আপনি আসা সর্বোত্তম। আমি দেখলাম আমি যদি পালিয়ে বেড়াই তাহলে আমাকে তো অ্যারেস্ট করবে। আর পালিয়ে বেড়ানোর কোনো ছেলেই না আমি।’
আরাভা খান বলেন, ‘আমাকে ইন্টারপোলে নিয়ে গেল। ইন্টারপোলে রাখলো, এক মাস সাত দিন। আমার জীবন থেকে এক মাস সাত দিন চলে গেছে ইন্টারপোলের জেলে। ইন্টারপোলে আমি বড় বড় আসামিদের সাথে জেল খেটেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাংবাদিকরা রটিয়েছেন, আমি পালিয়েছি। সবাই ভেবেছে, ইন্টারপোল ধরেছে মানে ও শেষ। বাংলাদেশের মানুষ বোকা না। আমার জন্য দোয়া করেছে। ৯৫ ভাগ সাংবাদিক ভাইদের বলতে চাই, আপনারা যতই আমার পা ধরে টানেন। ২০ কোটি মানুষ আমার হাত ধরে উপরে টেনেছে। সাংবাদিকরা যেভাবে মার্কেটিং করছেন। আপনারা আমারে বিনা পয়সায় পরিচিত দিছেন।’
এর আগে, বৃহস্পতিবার এক ফেসবুক পোস্টে আরাভ খান দুবাইয়ে তার গয়নার দোকান ‘আরাভ জুয়েলার্স’ ফের চালুর ঘোষণা দেন।
তিনি লিখেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ আজ থেকে আরাব জুয়েলার্স ওপেন করলাম। আপনারা সবাই আমন্ত্রিত। আপনারা যে ভালোবাসা দিয়েছেন, দোয়া করেছেন, আপনাদের জন্য সর্বদা নামাজ পড়ে দোয়া করব।’
গত ১৫ মার্চ দুবাইয়ে জমকালো এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ‘আরাভ জুয়েলার্সের’ উদ্বোধন হয়। বাংলাদেশ থেকে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, বগুড়ার আলোচিত আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও উপস্থাপক দেবাশীষ বিশ্বাস, শিল্পী বেলাল খানসহ অনেকেই দুবাইয়ে গিয়ে ওই অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
তখন বেরিয়ে আসে আরাভ জুয়েলার্সের মালিক আরাভ খানের আসল নাম রবিউল ইসলাম। চার বছর আগে ঢাকায় একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যার আসামি হয়ে দেশ ছেড়েছিলেন তিনি। তার গ্রামের বাড়ি বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায়।
সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ২০১৮ সালে পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক মামুন এমরান খান হত্যাকাণ্ডের পর পালিয়ে ভারতে চলে যান ৩০ বছর বয়সী রবিউল ইসলাম। সেখানে বিয়ে করেন।
পরে ভুয়া নাম-পরিচয় ব্যবহার করে ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি করেন। সেই পাসপোর্ট দিয়েই পাড়ি জমান দুবাইয়ে। এ বিষয়টি নতুন করে সামনে এলে ২০ মার্চ দুবাইয়ে ‘আরাভ জুয়েলার্স’ বন্ধ করে দেওয়া হয়। দোকান থেকে সব স্বর্ণালংকারও সরিয়ে নেওয়া হয়।
পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোলের মাধ্যমে আরাভ খানকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।