Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

অবশেষে মডেল পিএসসি অনুমোদন পেতে যাচ্ছে

Icon

সিফাতুল ইসলাম

প্রকাশ: ০৫ মে ২০২৩, ০৮:৫০

অবশেষে মডেল পিএসসি অনুমোদন পেতে যাচ্ছে

গ্যাসের দাম বৃদ্ধিসহ অনেক ছাড় দিয়ে মডেল পিএসসি-২০১৯ সংশোধন করা হচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত

মডেল পিএসসি-২০২৩ অনুমোদনের জন্য বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মডেল পিএসসি সংক্রান্ত বিস্তারিত উপস্থাপনা দিতে বলেছেন। আমেরিকা সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলেই উপস্থাপনা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।

মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে প্রেজেন্টেশন সংক্রান্ত চিঠি আমরা পেয়েছি। প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি, প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলেই বিস্তারিত উপস্থাপনা দেওয়া হবে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, মে মাসের মধ্যেই মডেল পিএসসি-২০২৩ (উৎপাদন ও বণ্টন চুক্তি) চূড়ান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলে মন্ত্রিসভার বৈঠকে তোলা হবে মডেল পিএসসি-২০২৩। দ্রুততার সঙ্গে অনুমোদন করিয়ে গভীর সমুদ্রে দরপত্র আহ্বান করা হবে। 

পিএসসি সংশোধনীর উপর নির্ভর করছে সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের ভবিষ্যৎ। দেশের ভয়াবহ জ্বালানি সংকটের স্বস্তিকর সমাধান এই বিশাল জলরাশির নিচে লুক্কায়িত বলে ধারণা করা হয়। সেই বিশাল সমুদ্রসীমা এখনো অধরা পেট্রোবাংলার ঢিলেমির কারণে। ২০২০ সালের নভেম্বরে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় মডেল পিএসসি হালনাগাদ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের ওই সিদ্ধান্ত জানুয়ারিতে (২০২১) প্রেরণ করা হয় পেট্রোবাংলায়। রহস্যজনক কারণে প্রায় ১০ মাস সেই ফাইল চাপা দিয়ে রাখেন পেট্রোবাংলার পরিচালক (পিএসসি) শাহীনুর ইসলাম।

দশ মাস পড়ে থাকার পর কাজ শুরু হলেও পেট্রোবাংলার কাছে কখনোই অগ্রাধিকার পায়নি বিষয়টি। কনসালট্যান্ট চ‚ড়ান্ত করতেই সময় নেয় ৮ মাস। ২০২২ সালের মে মাসে সিঙ্গাপুরের উড ম্যাকেঞ্জি এশিয়া প্যাসিফিককে কনসালট্যান্ট নিয়োগ করা হয়। কোম্পানিটি চার মাস পর খসড়া জমা দিলে আবার ফাইল চালাচালি শুরু করে পেট্রোবাংলা। তবে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে নতুন সচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদার যোগদান করলে ফাইলটি গতিতে ফেরে। দ্রুততার সঙ্গে লেজিসলেটিভ বিভাগ ও অন্যান্য বিভাগের মতামত নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে।

তবে এই সরকারের সময়ের মধ্যে আন্তর্জাতিক দরপত্র চূড়ান্ত করার কোনোই আশা দেখছেন না সংশ্লিষ্টরা। তারা মনে করছেন, পিএসসি সংশোধন প্রক্রিয়া আরও দুই মাসের ধাক্কা। অনুমোদনের পর কমপক্ষে ৩ মাস সময় দিয়ে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করতে হবে। সেগুলোর আবার যাচাই-বাছাই করতে লেগে যাবে আরও কয়েক মাস। তত দিনে দেশে নির্বাচনী ডামাডোল শুরু হয়ে যাবে।

পেট্রোবাংলা সূত্র জানিয়েছে, গ্যাসের দাম বৃদ্ধিসহ অনেক ছাড় দিয়ে মডেল পিএসসি-২০১৯ (উৎপাদন ও বণ্টন চুক্তি) সংশোধন করাা হচ্ছে। বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে আগ্রহী করে তোলার জন্যই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। খসড়ায় গ্যাসের দর নির্ধারণ করার কথা বলা হয়নি। ব্রেন্ট ক্রডের আন্তর্জাতিক বাজার দরের সঙ্গে ওঠানামা করবে। প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ধরা হয়েছে ব্রেন্ট ক্রডের ১০ শতাংশ দরের সমান। অর্থাৎ ব্রেন্ট ক্রডের দাম ৮০ ডলার হলে গ্যাসের দাম হবে ৮ ডলার। যা বিদ্যমান পিএসসিতে যথাক্রমে অগভীর ও গভীর সমুদ্রে ৫.৬ ডলার ও ৭.২৫ ডলার স্থির দর ছিল।

দামের পাশাপাশি সরকারের শেয়ারের অনুপাতও নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। মডেল পিএসসি-২০১৯ অনুযায়ী গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে বাংলাদেশের অনুপাত বৃদ্ধি পেতে থাকে। আর কমতে থাকে বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ার। গভীর সমুদ্রে ৫০ থেকে ৭৫ শতাংশ এবং অগভীর সমুদ্রে বাংলাদেশের হিস্যা ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ওঠানামা করবে।

৭৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলিত হলে পেট্রোবাংলার ৫৫ শতাংশ, আইওসির ৪৫ শতাংশ। উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট হলে পেট্রোবাংলা ৬০ শতাংশ ও আইওসি ৪০ শতাংশ, ২৫০ মিলিয়নের ক্ষেত্রে পেট্রোবাংলা ৬৫ ভাগ আইওসি ৩৫ ভাগ গ্যাস পেত। এভাবে ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট উৎপাদন হলে পেট্রোবাংলা ৮০ ভাগ এবং আইওসি ২০ ভাগ গ্যাস পেত। সংশোধিত প্রস্তাবে গভীর সমুদ্রে ৩৫ থেকে ৬০ শতাংশ এবং অগভীর সমুদ্রে ৪০ থেকে ৬৫ ওঠানামা করার কথা বলা হয়েছে।

শুধু দর কম হওয়ার কারণে বিদেশি কোম্পানি আগ্রহ হারাচ্ছে এমন বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছে, দর একটি বড় বিষয় তবে আরও একটি বিষয় রয়েছে তা হচ্ছে তথ্যের ঘাটতি। সাগরের তেল-গ্যাস সম্পর্কে যেসব তথ্য রয়েছে এগুলো এক সময় উন্মুক্ত ছিল। কোনো কোম্পানি চাইলে এসে কিনতে কিংবা দেখতে পারত। তারা সেগুলো যাচাই করে দরপত্রে অংশ নিত। এখন ওই তথ্য বন্ধ করে রাখা হয়েছে। যে কারণে বহুজাতিক কোম্পানি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। তারা তো আগে সম্ভাবনার আলামত দেখতে চাইবেন, তারপর টাকা ঢালবেন।

এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার মহাব্যবস্থাপক (চুক্তি) শাহনেওয়াজ পারভেজ বলেছেন, যে সব কোম্পানি দরপত্র ডকুমেন্ট নেবেন তাদের কাছে তথ্য দেওয়া হবে। কিছু বিষয় আগেও দেওয়া যেতে পারে। আশা করছি এবার সমস্যা হবে না। মূলত দরটাই ছিল বড় ইস্যু। ইতোমধ্যেই অনেক বড় বড় বহুজাতিক কোম্পানি যোগাযোগ শুরু করেছে।

পেট্রোবাংলার ঢিলেমির কারণে বিশাল সমুদ্র জয়ের পর অধরা সম্ভাবনায় সমুদ্রসীমায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান। আন্তর্জাতিক আদালতে ২০১২ সালে মিয়ানমার ও ২০১৪ সালে ভারতের সঙ্গে সাগর সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তির পর সর্বমোট ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের বেশি সমুদ্র অঞ্চলের ওপর মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫