Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের

Icon

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২০, ১২:১০

এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের

দেশে করোনাভাইরাস আতঙ্কের মধ্যেই এবার আরেক বিপজ্জনক রোগ ডেঙ্গুর প্রকোপ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

গত বছরও ডেঙ্গুর প্রকোপে নাজেহাল হয়ে উঠেছিল নগরবাসী।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে জানিয়েছেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। কারণ বসন্তের প্রথম দিক থেকেই মশার উপদ্রব খুব বেশি।

স্বাস্থ্য অধিদফতর (ডিজিএইচএস) ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষক দলের আলাদা দুটি জরিপে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) বিভিন্ন ওয়ার্ডে আশঙ্কাজনকহারে এডিস মশার লার্ভা পাওয়ার তথ্য উঠে এসছে।

গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্ত তিনজনকে শনাক্ত করা হয়। এরপর শনিবার (১৪ মার্চ) ভাইরাসটিতে আক্রান্ত আরো দুইজনকে শনাক্ত করা হয়।

গত বছর ভয়াবহ ডেঙ্গুর প্রকোপে প্রাণহানি হয় ১৭৯ জনের ও ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে শনিবার (১৪ মার্চ) সকাল ৮টা পর্যন্ত দেশে কমপক্ষে ২৬২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন।

এডিস মশার বিস্তার নিয়ে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে এক সমীক্ষার সময় গবেষণায় নেতৃত্ব দেয়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পতঙ্গবিজ্ঞানী অধ্যাপক কবিরুল বাশার জানান, গত বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে ৫৬ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং চলতি বছরের একই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১৩৯ জন, যা রাজধানীতে এডিস মশার ঘনত্ব বাড়ার ইঙ্গিত দেয়।

তিনি বলেন, যেহেতু এ মাসের শুরু থেকেই হালকা বৃষ্টি শুরু হয়েছে, এখনই সঠিক পদক্ষেপ না নিলে গত বছরের তুলনায় এ বছর ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পেতে পারে। এডিস মশার ঘনত্ব হ্রাস করতে এর প্রজনন ক্ষেত্রগুলো এই মাসের মধ্যেই ধ্বংস করার উদ্যোগ নিতে হবে দুই সিটি কর্পোরেশনকে।

তিনি আরো বলেন, জুন থেকেই পুরোদমে বৃষ্টিপাত শুরু হয়ে যাবে এবং এ সময়েই ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে থাকবে, যদি এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্রগুলো ধ্বংস না করা হয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বলেন, বিভিন্ন নির্মাণস্থল, বাস টার্মিনাল, থানা (যেখানে জব্দ করা অনেক যানবাহন খোলা জায়গায় রাখা হয়েছে), বিভিন্ন হাসপাতালের সামনের ও পেছনের অংশ এবং বিভিন্ন সরকারি স্থাপনাগুলোই হলো এডিস মশার মূল প্রজনন উৎস।

গত তিন মাসে এ বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো অভিযান নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, মশা নিধনে দুই সিটি কর্পোরেশনের এখনই সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন। ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের উচিত জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি ও এডিস মশার প্রজনন উৎস চিহ্নিতকরণ ও ধ্বংস করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করা।

তিনি আরো বলেন, এডিস মশা নিধন ও তাদের প্রজনন ক্ষেত্রগুলো তাৎক্ষণিকভাবে ধ্বংস করার জন্য বৈজ্ঞানিক উপায়ে কীটনাশক স্প্রে করার জন্য শহর কর্তৃপক্ষের উচিত ক্রাশ প্রকল্প গ্রহণ করা।

এর আগে করা সমীক্ষার ফলাফল সম্পর্কে কবিরুল জানান, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের কয়েকটি এলাকায় মশা পরিমাপের সূচক ব্রুটো ইনডেক্সে ২৫ শতাংশেরও বেশি এবং ৫০০ মিলিলিটার পানিতে ২শ’রও বেশি এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে, যা এডিস মশার বিশাল ঘনত্বই প্রকাশ করে।

অন্যদিকে সম্প্রতি করা নিজেদের এক সমীক্ষায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১২ শতাংশ ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১০ শতাংশ ওয়ার্ডে এডিস মশার অবস্থা ঝূঁকিপূর্ণ পর্যায়ে পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ।

তিনি বলেন, এডিস ব্রুটো সূচকে ডিএনসিসির ১, ১২, ১৬, ২৮, ৩১ নম্বর ওয়ার্ড এবং ডিএসসিসির ৫, ৬, ১১, ১৭, ৩৭ ও ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে এডিস ব্রুটো সূচক ২০ পয়েন্টেরও বেশি। আর ডিএনসিসির ১২নং ওয়ার্ডে এই সূচক ৩০ এর কাছাকাছি।

জরিপের ফলাফল পর্যালোচনা করে আবুল কালাম বলেন, এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্রগুলো এখনই ধ্বংস করা না হলে, এ বছর ভয়াবহ আকারে ডেঙ্গুর প্রকোপ ছড়িয়ে পড়তে পারে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে নগরবাসীকে তাদের ঘরবাড়ি ও আশেপাশের জায়গাগুলো পরিস্কার রাখতে হবে, যাতে সেখানে পানি না জমতে পারে।

ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান মামুন জানান, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে মশা নিধন ও সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। জানুয়ারি থেকেই বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে বর্ষাকালে এডিস মশার প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে কাজ অব্যহত রাখা হয়েছে।

তিনি বলে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের জরিপে ডিএনসিসির ৫ ওয়ার্ডকে সবচেয়ে ঝূঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এডিস মশার প্রজনন উৎস ধ্বংস করতে ওইসব এলাকায় বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এডিস মশার অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে নগরবাসীর সহযোগিতাও প্রয়োজন।

সাধারণ মানুষকে নিজেদের বাড়িঘর, ভবন ও সংলগ্ন এলাকা পরিস্কার রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরো বলেন, যেখানে সেখানে বর্জ্য ফেলবেন না ও কোথাও পানি জমতে দেবেন না। ডাবের খোসা, খোলা বোতল, প্লাস্টিকের হাঁড়ি, ভাঙা পাত্র ও পরিত্যক্ত ফুলের টবগুলো যত্রতত্র ফেলে রাখবেন না। মশাবাহিত রোগ ছাড়াও অন্যান্য রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা অত্যন্ত জরুরি।

ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরিফ আহমেদ বলেন, তাদের ৫, ৬, ১১, ১৭, ৩৭ ও ৪২ নং ওয়ার্ডকে ঝূঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। এডিস মশার প্রজনন উৎস ধ্বংস করতে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ডিএসসিসি একটি বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। -ইউএনবি

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫