
বুড়িগঙ্গা নদী। ছবি: গুগল
বিশ্ব নদী দিবস আজ, ২২ সেপ্টেম্বর। নদী রক্ষায় সচেতনতা বাড়তে প্রতি বছর সেপ্টেম্বরের চতুর্থ রবিবার বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। এবারে দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো- ‘নদী একটি জীবন্ত সত্তা, এর আইনি অধিকার নিশ্চিত করুন।’
পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো প্রতিবারের মতো এবারও নদীর দিকে পদযাত্রা কর্মসূচির আয়োজন করেছে। ঢাকাসহ দেশের বেশিরভাগ নদ-নদী এখন দখলদারদের কবলে। ভয়ানক দূষণের শিকার প্রতিটি নদী। নানা কারণে মরতে বসেছে দেশের নদ-নদী। পাথর ও বালু উত্তোলনের কারণে অনেক নদী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সরকারি হিসাবে নদী দখলের সঙ্গে প্রায় ৪৭ হাজার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান জড়িত। যদিও বাস্তবে এ সংখ্যা লক্ষাধিক।
১৯৮০ সালে কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া রাজ্যে শিক্ষক ও নদীপ্রেমিক মার্ক অ্যাঞ্জেলোর উদ্যোগে সেপ্টেম্বর মাসের চতুর্থ রবিবার দিবসটি পালনের সূচনা হয়। পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ায় তা ছড়িয়ে পড়ে। ২০০৫ সালে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে দিবসটি সমর্থন করা হয়। বাংলাদেশে ২০১০ সাল থেকে নদী দিবস পালন শুরু করা হয়।
বাংলাদেশ পরিবেশবাদী আন্দোলন (বাপা) জানায়, দিবসটি উদযাপনের অংশ হিসেবে রাজধানী ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের পাশ থেকে বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা পদযাত্রা শুরু করবেন। বুড়িগঙ্গা নদীর পাড় সদরঘাট টার্মিনালে গিয়ে এই পদযাত্রা শেষ হবে। আয়োজকরা জানান ‘নদীর জন্য পদযাত্রা’ অনুষ্ঠানটি হবে ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার, বেলুন, ফুল প্রভৃতি দিয়ে বর্ণিল ও উৎসবমুখর। সঙ্গে থাকবে তারুণ্য নির্ভর গান ও বাদ্যযন্ত্রী দল।
তুরাগ নদী
এর আগে গত ১ জুলাই নদীকে ‘জীবন্ত সত্তা’ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। রায়ে আদালত বলেন, মানুষের জীবন-জীবিকা নদীর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মানবজাতি টিকে থাকার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে নদী। নাব্য সংকট ও বেদখলের হাত থেকে নদী রক্ষা করা না গেলে বাংলাদেশ তথা মানবজাতি সংকটে পড়তে বাধ্য। নদী রক্ষায় আন্তর্জাতিকভাবে জাগরণ শুরু হয়েছে। এখন সবারই ভাবনা- পরিবেশের জন্য নদী রক্ষা করতে হবে।’
বিশ্ব নদী দিবস উদযাপন পরিষদ বাংলাদেশের সদস্য সচিব শেখ রোকন বলেন, নদী দখল, দূষণ, বিনষ্টকারী যেই হোক না কেন, তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে। মনে রাখতে হবে নদ-নদী জীবন্ত সত্তা ঘোষিত হওয়ার পর নদী হত্যা ফৌজদারি অপরাধ ছাড়া আর কিছু হতে পারে না। আমরা দেখছি, ইতোমধ্যে ঢাকার চারপাশে নদ-নদীর দখল উচ্ছেদে অভিযান চলেছে। দখলের শিকার সব নদীর ক্ষেত্রেই এ ধরনের অভিযান চালাতে হবে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন কর্তৃক প্রকাশিত দখলদারের তালিকার একজনকেও রেহাই দেওয়া চলবে না।
১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের হালনাগাদ করা তথ্য অনুযায়ী, ৬২ জেলায় নদী দখলবাজের সংখ্যা ৪৬ হাজার ৮৩৯ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দখলবাজ কুমিল্লা জেলায়। এর সংখ্যা ৫৯০৬ জন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছে নোয়াখালী ও কুষ্টিয়া। এর সংখ্যা যথাক্রমে ৪৪৯৯ ও ৩১৩৪ জন। ঢাকায় এ সংখ্যা ৯৫৯ জন।
কুমার নদ
নদী দিবস সামনে রেখে শনিবার রাজধানীতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর নদী রক্ষায় পদক্ষেপ নেয়। কিন্তু বিভিন্ন কারণে সেই উদ্যোগ ব্যাহত হয়। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর অবস্থানের কারণে নদী রক্ষাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয়া হয়েছে। সেই চ্যালেঞ্জ প্রতিহত করতে দখলদাররা নানাভাবে চেষ্টা করছে। আইনিভাবে কেউ যাতে এ কাজে বাধা দিতে না পারে, সেই লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। নদী আন্দোলনের সঙ্গে সরকার নিজেই সম্পৃক্ত। সুতরাং এ আন্দোলন সফল হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নদীর সংকটে পড়ার আরেকটি বড় কারণ দূষণ। ঢাকার চারপাশের চার নদী, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন নদ-নদীর দূষণ সীমাহীন। মাত্রাতিরিক্ত দূষণে সদরঘাটের বুড়িগঙ্গার পানি কুচকুচে কালো, হাজারীবাগের পানি রক্তের মতো লাল। তুরাগের পানি কোথাও কালো, কোথাও গাঢ় নীল। বালু নদের পানি ধূসর বর্ণ ধারণ করেছে।