Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

বিদ্যুৎ খাতে নজিরবিহীন সমন্বয়হীনতা

Icon

সিফাতুল ইসলাম

প্রকাশ: ০৮ জুন ২০২৩, ০৮:৫৮

বিদ্যুৎ খাতে নজিরবিহীন সমন্বয়হীনতা

প্রতীকী ছবি

হঠাৎ করেই কয়েক গুণ বেড়ে গেছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ জনগণ। ভোর থেকে মধ্যরাত কোনো সময়েই পিছু ছাড়ছে না লোডশেডিং। ক্ষুব্ধ জনগণ বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়ন ও দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চোখ রাখলেই নানা রকম ব্যঙ্গ বিদ্রুপ চোখে পড়ছে। আবার কেউ কেউ ট্রল করতেও ছাড়ছেন না। একজন লিখেছেন, ‘ঠিকমতো লোডশেডিং উপভোগ করতে পারছি না, মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ এসে ডিস্টার্ব দিচ্ছে।’

সুমন নামের একজন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘লোডশেডিংয়েও মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ দিচ্ছে, এ জন্যই সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা উচিত।’ অনেকের প্রশ্ন, আমরা তো বিদ্যুতের বিল বকেয়া রাখিনি। তাহলে কয়লা ও তেলের বিল দিতে পারছে না কেন? এই টাকা কোথায় গেল?

পরিস্থিতি অসহনীয় পর্যায়ে, এ কথা স্বীকার করেছেন খোদ বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও। ৪ জুন এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেছেন, পরিস্থিতি যে অসহনীয় তা জানি। দ্রুত সমাধানের চেষ্টা চলছে। বেশ কিছুদিন যাবৎ লোডশেডিং বেড়ে গেছে। কারণ জ্বালানি জোগান দিতে কষ্ট হচ্ছিল। পাওয়ার প্ল্যান্ট রেডি, জ্বালানি জোগান দিতে পারছি না। জ্বালানি আসার পেছনের বিষয় সব সময় আমাদের হাতে থাকে না। সমন্বয় কোথাও বাধাগ্রস্ত হলেই সমস্যা হয়। এবারও তাই হয়েছে। 

তিনি বলেছেন, পায়রার জন্য কয়লা কত দ্রুত আনা যায় সেই চেষ্টা করছি। আশা করি দশ-পনেরো দিনের মধ্যে এ থেকে বেরিয়ে আসতে পারব। হিটওয়েভ হচ্ছে, ফলে চাহিদা বেড়ে গেছে। শিডিউল লোডশেডিংয়ে যাওয়ার আপাতত চিন্তা নেই। দুই মাস আগে থেকেই চেষ্টা করছিলাম। অর্থনৈতিক বিষয়, এলসি খোলার বিষয় থাকে; সব সমন্বয় করতে হয়। ২৫০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হচ্ছে। ধীরে ধীরে কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। চাহিদার পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে।

বিদ্যুৎ খাতে এখন যে সমন্বয়হীনতা দেখা দিয়েছে তা একেবারেই নজিরবিহীন। বিগত বছরগুলোতে এমন বিশৃঙ্খলা আর কখনো দেখা যায়নি। পিজিসিবির (পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ) ২ জুনের দৈনিক বিদ্যুৎ উৎপাদন রিপোর্টে দেখা গেছে জ্বালানি সংকটের কারণে ৪৪৪৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসে ছিল। একই দিনে যান্ত্রিক সমস্যা ও নিয়মিত মেরামতের জন্য বন্ধ ছিল ৩৪৮৫ মেগাওয়াট। অর্থাৎ প্রায় ৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সিস্টেমের বাইরে।

উৎপাদনে থাকা ১৪৫টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে ১ থেকে ২১ নম্বরে থাকা বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে মাত্র ৩টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র পূর্ণাঙ্গ উৎপাদনে ছিল। অন্যগুলো হয় তেল-গ্যাসের সমস্যা নতুবা যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ কিংবা আংশিক উৎপাদন করেছে। রাজশাহী জোনের ২২টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে ১৬টি ওই তারিখে যথাযথ উৎপাদন দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় যখন দুর্ভোগে মানুষ, সে সময় স্বস্তিতে থাকতে পারছেন না বিতরণ কোম্পানিগুলোও। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, গ্রাহকরা চরম ক্ষুব্ধ, মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে আমাদের লোকজন অনেক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

বিক্রি কমে গেলে আমাদের রাজস্ব কমে যাবে। আমরা সিস্টেম রেডি করে রেখেছি, যত বেশি বিদ্যুৎ বিক্রি করতে পারব তত বেশি রাজস্ব আয় হবে। বিদ্যুতের বিক্রি ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন যদি বিক্রি কমে যায়, তাহলে আরইবির রাজস্ব আহরণ ব্যাহত হবে। লোকসানের শিকার হবে সমিতিগুলো।

ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাওসার আমীর আলীও শঙ্কার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, বিক্রি কমে গেলে আয় কমে যাবে, হিসেব সহজ। বিক্রি যত বেশি হবে ততই রাজস্ব বাড়বে। তবে লোডশেডিং বেড়ে গেলেও সেভাবে ব্যবহার কমেনি।বিদ্যুৎ যখন থাকছে তখন ব্যবহার বাড়ছে। এখন পর্যন্ত রাজস্বে টান পড়েনি। তবে লোডশেডিং দীর্ঘস্থায়ী হলে রাজস্বে ঘাটতি দেখা দেবে।

শুধু বিতরণ কোম্পানি নয়, উৎপাদন না করে দীর্ঘমেয়াদে বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসিয়ে রাখলে চরম সংকটে পড়বে খোদ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডও। কারণ ক্যাপাসিটি চার্জ থেকে রক্ষা নেই তাদের। বছরে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা গুনতে হবে। শুধু ক্যাপাসিটি চার্জ নয়, নিজেদের অপরেশনাল খরচও বিদ্যুৎ বিক্রি থেকে উঠে আসে। সেই বিক্রি বন্ধ হয়ে গেলে সংস্থাটির দেউলিয়া হওয়ার শঙ্কা দেখছেন অনেকেই।

এমনিতেই বিগত কয়েক বছর যাবৎ রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠানটির ঋণের বোঝা প্রায় অর্ধলক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। নতুন করে বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেও ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হলে তাদের এই বোঝা আরও বেড়ে যাবে। যে কারণে লোডশেডিং নিয়ে ভোক্তাদের পাশাপাশি উৎপাদক ও বিতরণ কোম্পানিও সংকটে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫