Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

রয়টার্সের বিশ্লেষণ

একদশকের মধ্যে ভয়াবহ বিদ্যুৎ সংকটে বাংলাদেশ

অন্যতম কারণ- জ্বালানী মজুদ ও রিজার্ভ কমে আসা

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ০৮ জুন ২০২৩, ১৮:১৪

একদশকের মধ্যে ভয়াবহ বিদ্যুৎ সংকটে বাংলাদেশ

ছবি: রয়টার্স

বাংলাদেশ বর্তমানে ভয়াবহ বিদ্যুৎ সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ২০১৩ সালের পর রিজার্ভ সংকটের কারণে জ্বালানী পণ্য আমদানি ভোগান্তি ও বিপর্যস্ত আবহাওয়ার কারণসহ টাকার মান কমে যাওয়ার ফলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে রয়টার্স তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। 

মূলত বাংলাদেশে জুলাই-অক্টোবরে বিদ্যুতের চাহিদা থাকে বেশি। এরই মধ্যে আরও দাবদাহের পূর্বাভাসও রয়েছে। ফলে বাংলাদেশের জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছেন, আগামী দিনেও দেশে লোডশেডিং অব্যাহত থাকতে পারে। এতে করে ১৭০ মিলিয়ন জনগোষ্ঠীর এ দেশটিতে বিদ্যুৎ সংকট কিছুটা বেড়েছে। 

সোমবার চাহিদার তুলনায় সরবরাহের ঘাটতি ছিল ২৫ শতাংশ বলেও রয়টার্সের তথ্যে উঠে আসে। 

বিশ্বের বাণিজ্যিকভাবে শক্তিশালী চীনের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ বাংলাদেশ। ওয়ালমার্ট, এইচঅ্যান্ডএম, জারাসহ বিএএল এর মত খুচরা বিক্রেতারা ২০২৩ সালের প্রথম পাঁচ মাসে ১১৪ দিনের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে বাধ্য হয়েছে যা কিনা ২০২২ সালের ১১৩ দিনের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে বলে রয়টার্স তাদের বিশ্লেষণে বলছে। 

পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের তথ্যে দেখা গেছে, সন্ধ্যা ও ভোরে বিদ্যুৎ না থাকার ঘটনা সবচেয়ে বেশি। 

স্থানীয় বাসিন্দা ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ১০-১২ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের অভিযোগ এনেছেন ।

দেশের সামগ্রিক বিদ্যুৎ সরবরাহ ঘাটতি জুনের প্রথম সপ্তাহে গড়ে ১৫ শতাংশে পৌঁছায়। 

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, যা কিনা মে মাসের গড় ৫.২ শতাংশ ঘাটতির প্রায় তিনগুণ। এদিকে সরকারি তথ্য বলছে, জ্বালানি ঘাটতিই সরবরাহ ঘাটতির প্রধান কারণ।

জাতীয় গ্রিড অপারেটরের ওয়েবসাইটের মতে, জ্বালানির অভাবে গত সোমবার দেশের গ্যাস-চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১১ দশমিক ৫ গিগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার প্রায় এক-চতুর্থাংশ এবং ৩ দশমিক ৪ গিগাওয়াট কয়লা-চালিত কেন্দ্রের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বন্ধ রয়েছিল।

আর অপারেটরের মতে, ডিজেল এবং জ্বালানি তেলে চালিত ৭ দশমিক ৫ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার ৪০ শতাংশের বেশির কার্যক্রমও ছিল বন্ধ।

রয়টার্স বলছে, সিনোপেক, ইন্ডিয়ান অয়েলকে (আইওসি) অর্থ যোগানের বিষয়ে এক সতর্কতা জানিয়ে এপ্রিলের শেষ এবং মে মাসের শুরুতে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় পেট্রোলিয়াম সংস্থা। 

মার্কিন ডলারের ঘাটতির পাশাপাশি জ্বালানি তেলের মজুদও উদ্বেগজনকহারে কমে আসছে দেশটিতে। এদিকে মে মাস পর্যন্ত ১২ মাসে টাকার মূল্য এক ষষ্ঠাংশেরও বেশি হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে এপ্রিলে ডলারের রিজার্ভ এক তৃতীয়াংশ হ্রাস পেয়ে সাত বছরের মধ্যে ঠেকেছে তলানিতে। 

অন্যদিকে গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ বেড়ে যাওয়ায় কয়লা ও তরল জ্বালানিচালিত কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে। ফলে বেড়েছে গড় বিদ্যুতের দাম। 

স্থানীয় মজুদ কমার পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী সরবরাহকারীদের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির অভাবে ২০২২ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহারও হ্রাস পেয়েছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্ববাজারে এলএনজির দামের অসহনীয় বৃদ্ধিও প্রভাব পড়েছে দেশটিতে। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোয় দাম কমে আসায় তার ব্যবহার বেড়েছে। বাংলাদেশ সম্প্রতি কাতারএনার্জির সঙ্গে ১৫ বছরের একটি এলএনজি চুক্তি সম্পাদন করেছে।

তথ্য বলছে, যেসব দেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানীর সঙ্কট রয়েছে সেসব দেশে মোট সরবরাহের ১০ শতাংশ কমে এসেছে।  

ফলে ২০২৩ সালের প্রথম পাঁচ মাসে বিদ্যুতের জন্য কয়লার ওপর নির্ভরতা বেড়ে ১৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে আর যা ২০২২ সালে ছিল ৮ শতাংশ। 

এর আগে ২০২২ সালে জ্বালানি তেল ও ডিজেল ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন এক দশকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ছিল।

সূত্র: রয়টার্স 

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫