Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

বিবিসি বাংলা

এনআইডি সেবা স্বরাষ্ট্রে গেলে কী পরিবর্তন আসবে?

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২৩, ১৯:২৩

এনআইডি সেবা স্বরাষ্ট্রে গেলে কী পরিবর্তন আসবে?

প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশে জন্মগ্রহন করা সকল নাগরিকের জন্ম থেকেই একটি ইউনিক নাম্বার দেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার। আর নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে জাতীয় পরিচয় পত্র বা এনআইডির দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হস্তান্তরের পর এ কার্যক্রম শুরু করা হবে।

এদিকে সোমবার জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন-২০২৩ নামের একটি নতুন আইনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশের মন্ত্রিসভা।

এতদিন জাতীয় পরিচয়পত্র সেবাটি নির্বাচন কমিশনের হাতে থাকলেও এখন সেটি যাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের নিয়ন্ত্রণে। এজন্য একটি নিবন্ধনের কার্যালয়ও স্থাপন করা হবে।

খসড়া প্রস্তাবটি চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ায় এখন সেটি সংসদে গিয়ে যাচাই বাছাইয়ের পর অনুমোদন দেওয়া হলে চূড়ান্ত আইনে পরিণত হবে।

তবে এ স্থানান্তরের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের তরফ হতে আপত্তি থাকলেও সরকার অবশেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এটির দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আর এ নিয়ে কিছুদিন আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এক মন্তব্যে বলেছিলেন, তার মন্ত্রণালয়ের অধীনে এলে সেবা নিয়ে কোন জটিলতা বা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কোন সমন্বয়হীনতার আশংকা থাকবে না।

তিনি বলেন, সঙ্গত কারণেই এটা সরকার যথাস্থানে আনার নির্দেশনা দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের কাজ সাধারণত ভোটার তালিকা তৈরি করা। সেটা তৈরির যত ধরণের সহযোগিতা এখান থেকে পাওয়ার - সেটা তারা পাবেন। কাজেই এ নিয়ে সমন্বয়হীনতার প্রশ্নও আসে না।

তবে প্রশ্ন হলো- এর ফলে জাতীয় পরিচয় পত্রের সেবায় কি পরিবর্তন হবে?

এক নাম্বারেই সব সেবা

আইনে বলা হয়েছে, জন্ম নেয়ার পর থেকেই সবার জন্য একটি ইউনিক নাম্বার দেয়া হবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোঃ মাহবুব হোসেন বলেন, যেকোনো নাগরিকের জন্মের পরপরই নাগরিক সনদ বা একটি নম্বর পাবেন। আর এ আইডিটি হবে ব্যক্তির পরিচিত নম্বর। নম্বরটি সারাজীবন তার সঙ্গে থাকবে,যা অপরিবর্তনীয়।

বর্তমানে প্রতিটি ব্যক্তির জন্ম নিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট ইত্যাদি আলাদা আলাদা নম্বর রয়েছে। কিন্তু নতুন আইনের ফলে তাকে আর এতগুলো নাম্বার ব্যবহার করতে হবে না। তার এই একটি ইউনিক নাম্বার দিয়েই সকল তথ্য পাওয়া যাবে।

পাসপোর্ট, ব্যাংক বা ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে এই নম্বরটি থাকবে। ফলে এটি ব্যবহার করে একজন ব্যক্তির সম্পর্কে সকল তথ্যও জানা যাবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোঃ মাহবুব হোসেন বলেছেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য সব নাগরিকের একটি ইউনিক নম্বর থাকা দরকার। এতদিন হয়ত বিভিন্ন ধাপে নম্বরগুলো দিয়েছি। যেটা নিয়ে কনফিউশন তৈরি হয়েছে। এখন প্রত্যেক নাগরিকের একটি নম্বর থাকবে, যেটি তার আইডেন্টিটি হবে। সেটার ভিত্তিতে তার সমগ্র জীবনে, আমাদের যেমন সিআরভিএস তথ্য আছে, সেগুলো আপডেট করবে। এটা আস্তে আস্তে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করব।

বাড়তি কোন সুবিধা পাওয়া যাবে?

জাতীয় পরিচয়পত্র প্রকল্পের সাবেক পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত বিগ্রেডিয়ার জেনারেল সাইদুল ইসলাম বলছেন, অনেক দেশে নাগরিকদের এরকম নম্বর থাকে। সেটা দিয়ে তার সকল তথ্য জানা যায়। তিনিও একটি নম্বর ব্যবহার করে সব সেবা পেতে পারেন।

কিন্তু আমাদের দেশে স্কুল কলেজে ব্যবহার করা জন্ম নিবন্ধনে একটি নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্রে আরেকটি, পাসপোর্টে আরেকটি নাম্বার ব্যবহৃত হয়। ফলে একজন ব্যক্তিকে অনেকগুলো নাম্বার ব্যবহার করতে হচ্ছে। এ ইউনিক নাম্বার হলে তা দিয়েই তিনি সব সেবা নিতে পারবেন।

কবে চালু হবে?

এরইমধ্যে মন্ত্রিপরিষদে খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন হয়ে গিয়েছে। আর এরপর খসড়াটি জাতীয় সংসদে যাবে। সেখানে পাস হলেই আইনে পরিণত হবে।

তবে আইনে পাস হলেই কার্যকর হবে না। কারণ এখানে একটা বিধান রাখা হয়েছে যে, সরকারের নির্ধারিত তারিখ থেকে সেটি কার্যকর হবে।

অর্থাৎ সরকার যেদিন থেকে এই আইন কার্যকরের ঘোষণা দেবে, সেদিন থেকে তা কার্যকর বলে গণ্য করা হবে।

তবে আইন কার্যকর করার আগে বিধিমালা তৈরি, নিবন্ধকের অফিস স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। 

এদিকে নির্বাচনের আগে আইনটি পাস হবে কিনা, তা নিয়ে অবশ্য পরিষ্কার কোন তথ্য জানাতে পারেননি কর্মকর্তারা।

আপাতত এনআইডি সংক্রান্ত সেবা কার আওতায়?

বাংলাদেশের সরকার জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন-২০২৩ যতদিন পর্যন্ত কার্যকর হচ্ছে না ততদিন এনআইডি সংক্রান্ত সেবা এখনকার মতো নির্বাচন কমিশন দিয়ে যাবে।

ফলে ওই ঘোষণা না আসা পর্যন্ত, পরিবর্তন, পুনর্মুদ্রণ বা যেকোনো সেবার জন্য এখনকার মতো নির্বাচন কমিশন বা নির্বাচন কর্মকর্তার দপ্তরে যোগাযোগ করতে হবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, যতদিন পর্যন্ত নিবন্ধকের অফিস এবং জনবল প্রস্তুত না হবে,ততদিন এই সেবা এখনকার মতো নির্বাচন কমিশনের কাছেই থাকবে।

যাদের বর্তমানে এনআইডি রয়েছে, তাদের কী হবে?

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোঃ মাহবুব হোসেন বলেন, যাদের বর্তমানে এনআইডি নম্বর রয়েছে, সেগুলো চালু থাকবে। এটি বর্তমানে তার ইউনিক নাম্বার হিসাবে ব্যবহার করা হবে।

তাদের জন্য নতুন কোন নাম্বার দেওয়ার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

তবে ভবিষ্যতে শিশু জন্মের সঙ্গে সঙ্গে তাকে ইউনিক আইডি নম্বর দিয়ে দেয়া হবে। তখন আর আলাদা করে জন্ম নিবন্ধন নম্বর রাখতে হবে না। 

জন্মের পর ৪৫ দিনের মধ্যে ১০ ডিজিটের ইউনিক নাম্বার নিতে হবে। মৃত্যু পর্যন্ত এই নাম্বার দিয়েই একজন নাগরিককে চিহ্নিত করা হবে।

তবে যারা এখনো জন্মনিবন্ধন বা এনআইডি হয়নি তারা এ নতুন নম্বরটি ব্যবহার করবেন।

কর্তৃপক্ষ বলেছে, স্কুল কলেজে ভর্তি এবং হাসপাতালে চিকিৎসা সেবাসহ বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা নিতে গেলে এই নাম্বারটি বাধ্যতামূলক হিসেবে গণ্য করা হবে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫