Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

সুইস ব্যাংক থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা সরাল বাংলাদেশিরা

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৩, ১০:৪০

সুইস ব্যাংক থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা সরাল বাংলাদেশিরা

সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক। ছবি: সংগৃহীত

সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে অবিশ্বাস্য গতিতে কমেছে বাংলাদেশিদের আমানত। মাত্র এক বছরেই সুইস ব্যাংকগুলো থেকে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা সরিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশি নাগরিক এবং এ দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের ডলার সংকট এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে। কেউ কেউ পাচার করা টাকাও হয়তো সরিয়ে নিয়েছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার (২২ জুন) দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) বিশ্বের সব দেশের সঙ্গে ২০২২ সালে তাদের ব্যাংকগুলোর দায় ও সম্পদের পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে।

প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২ সাল শেষে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে বাংলাদেশের পাওনা রয়েছে ৫ কোটি ৫২ লাখ সুইস ফ্রাঁ। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ফ্রাঁ ১২০ টাকা ধরে) যার পরিমাণ মাত্র ৬৬২ কোটি টাকা। ২০২১ সাল শেষে বাংলাদেশের পাওনা ছিল ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঁ, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১০ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। এর মানে এক বছরে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা কমেছে।

মাত্র এক বছরের ব্যবধানে দেশটির বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা বাংলাদেশিদের অর্থ প্রায় ৮২ কোটি সুইস ফ্রাঁ বা ৯৪ শতাংশ কমে গেছে।

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর নামে থাকা বিভিন্ন হিসাবে স্থিতির পরিমাণ ব্যাপক কমলেও ব্যক্তি গ্রাহকদের আমানত বেড়েছে। ২০২২ সাল শেষে আমানতকারীদের জমার পরিমাণ ৩ কোটি ৫৬ লাখ ৪৫ হাজার ফ্রাঁ। স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৪২৮ কোটি টাকা। আগের বছর আমানত ছিল ২ কোটি ৬৩ লাখ ৫০ হাজার ফ্রাঁ বা ৩১৬ কোটি টাকা।

সম্পদ ব্যবস্থাপকের মাধ্যমে বিভিন্ন শেয়ার বা সিকিউরিটিজে বাংলাদেশিদের বিনিয়োগ বেড়েছে। গত বছর এ ধরনের বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৩৬ কোটি টাকার (৩১ লাখ ফ্রাঁ) সমপরিমাণ। আগের বছর ছিল ৬৬ হাজার ফ্রাঁ বা প্রায় ৮ কোটি টাকা। গ্রাহকের আমানত এবং বিনিয়োগের একটি অংশ পাচার হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হয়। সাধারণত নির্বাচনের আগে অর্থ পাচার বেড়ে যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বিদেশে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতি এখন প্রায় ৩৫০ কোটি ডলার। শুধু সুইজারল্যান্ড নয়, সারা বিশ্বেই বাংলাদেশি ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রার হিসাবে (নস্ট্রো) স্থিতি কমে গেছে। কেননা বাংলাদেশ গত এক বছরের বেশি সময় ধরে বৈদেশিক মুদ্রার সংকটে রয়েছে। আমদানি ও ঋণ পরিশোধের চাপ বেড়ে যাওয়ায় সুইস ব্যাংকগুলো থেকে বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতি অনেক কমে গেছে।

সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সে দেশের ব্যাংক ব্যবস্থায় বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর হিসাবে ২০২২ সাল শেষে স্থিতির পরিমাণ মাত্র ১ কোটি ৯৩ লাখ ফ্রাঁ বা ২৩২ কোটি টাকা। আগের বছর যার পরিমাণ ছিল ৮৪ কোটি ৪৪ লাখ ফ্রাঁ বা ১০ হাজার ১৩২ কোটি টাকা।

সুইস ব্যাংকে থাকা অর্থের একটি অংশ পাচার হয়ে থাকে বলে ধারণা করা হয়। তবে পাচার সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না; এমনকি গ্রাহক আমানত হিসাবে কার কত অর্থ আছে তাও জানা যায় না। সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক গোপনীয়তার স্বার্থে সব ডাটা সমন্বিতভাবে প্রকাশ করে। আলাদাভাবে কোনো গ্রাহক বা ব্যাংকের তথ্য এ প্রতিবেদনে নেই।

প্রকাশিত পরিসংখ্যানে বাংলাদেশের কাছে সুইজারল্যান্ডের পাওনার তথ্যও রয়েছে, যা সে দেশের ব্যাংকগুলোর ‘সম্পদ’ হিসেবে দেখানো হয়েছে। বাংলাদেশের কাছে সুইজারল্যান্ডের পাওনা ৩১ কোটি ৯০ লাখ ফ্রাঁ, যার পরিমাণ ৩ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা। ২০২১ সালে যার পরিমাণ ছিল ৫৩ কোটি ৩২ লাখ ফ্রাঁ। এসব অর্থের বেশিরভাগই বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর কাছে ওই সময়কার পাওনা।

সুইস ব্যাংকে ভারত ও পাকিস্তানের নামে থাকা অর্থও আগের বছরের চেয়ে কমেছে। ভারতের নামে রয়েছে ৩৪০ কোটি ফ্রাঁ, যা ২০২১ সালে ছিল ৩৮৩ কোটি ফ্রাঁ। অন্যদিকে পাকিস্তানের কাছে দায় ৩৯ কোটি ফ্রাঁ। আগের বছর যা ছিল ৭১ কোটি ফ্রাঁ।

কয়েক বছর ধরে সুইজারল্যান্ড বার্ষিক ব্যাংকিং পরিসংখ্যান প্রকাশ করছে। বাংলাদেশের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট বা বিএফআইইউ সুইজারল্যান্ডের একই ধরনের এফআইইউর সঙ্গে কয়েক দফা যোগাযোগও করেছিল। ব্যক্তির তালিকাসংবলিত কোনো তথ্য তারা দেয়নি। সুইজারল্যান্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, অবৈধভাবে কেউ অর্থ নিয়ে গেছে এমন প্রমাণ সরবরাহ করলে তারা তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে পারে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) অর্থ পাচার নিয়ে কাজ করে। সংস্থাটি বাণিজ্যের আড়ালে কোন দেশ থেকে কী পরিমাণ অর্থ পাচার হয় তার প্রাক্কলন করে। জিএফআই ২০২০ সালের মার্চে এ বিষয়ে তাদের সর্বশেষ বৈশ্বিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। জিএফআইর প্রাক্কলন অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানি ও রপ্তানির মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে বছরে গড়ে ৬৪ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫