সাড়ে ১৪ বছরে দেশের কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি অর্জন করেছি: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৩, ১৪:৪৪

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
আওয়ামী লীগ সরকার গত সাড়ে ১৪ বছরে দেশের প্রতিটি সেক্টরে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি অর্জন করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ইতোমধ্যে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে। আমাদের মাথাপিছু আয় ২০০৬ সালের ৫৪৩ মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার হয়েছে। আমরা দারিদ্র্যের হার ৪১.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৮.৭ শতাংশ এবং অতিদারিদ্র্যের হার ৫.৬ শতাংশে নামিয়ে এনেছি।’
আজ বুধবার (৫ জুলাই) প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের (পিজিআর) ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা সেনানিবাসে পিজিআর সদর দপ্তরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ৫ জুলাই প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট প্রতিষ্ঠা করেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কালের আবর্তে ‘প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট’ আজ একটি সুসংহত বাহিনী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।’
দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধানের নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রাচার অনুষ্ঠানে পিজিআর সদস্যদের ভূমিকা আজ সর্বজন প্রশংসিত বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘কর্তব্যপরায়ণ, দক্ষ, বিশ্বস্ত, সর্বোপরি একটি সুশৃঙ্খল প্রতিষ্ঠান হিসেবে সমগ্র জাতির কাছে আপনারা সমাদৃত। বিশেষ করে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে আপনারা আদর্শ নিরাপত্তা ও রাষ্ট্রাচার পালনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।’
পিজিআরকে উচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে নিয়মিত অফিসার, জেসিও এবং অন্যান্য পদবীর সৈনিক প্রেরণ করার জন্য তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানান।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তাঁর প্রিয় মাতৃভূমির সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য একটি পেশাদার, প্রশিক্ষিত ও শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনি ১৯৭৪ সালের ১১ই জানুয়ারি কুমিল্লা সেনানিবাসে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি গড়ে তোলেন। তিনি কম্বাইন্ড আর্মস স্কুল এবং সেনাবাহিনীর প্রতিটি কোরের জন্য স্বতন্ত্র ট্রেনিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ঘাঁটি স্থাপন করেন এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে ভারত ও যুগোশ্লাভিয়া থেকে নৌবাহিনীর জন্য যুদ্ধ জাহাজ সংগ্রহ করেন।
শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, ‘জাতির পিতা ১৯৭৩ সালে সে সময়ের অত্যাধুনিক সুপারসনিক মিগ-২১ যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার, পরিবহন বিমান, এয়ার ডিফেন্স রাডার ইত্যাদি বিমান বাহিনীতে যুক্ত করেন। তিনি ১৯৭৪ সালেই একটি প্রতিরক্ষানীতি প্রণয়ন করেন।’
‘দুর্ভাগ্য, জাতির পিতাকে সপরিবারে নিষ্ঠুরভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে ’৭১-এর পরাজিত শক্তির এদেশীয় দোসররা আমাদের গৌরবোজ্জ্বল স্বাধীনতার ইতিহাসকে কলঙ্কিত করে এবং দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করে।’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আমরা সরকার গঠন করি। নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরি। সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়নে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করি। ১৯৯৮ সালে ‘ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ’ এবং ‘মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’, ১৯৯৯ সালে ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং’ এবং ‘আর্মড ফোর্সেস মেডিক্যাল কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করি।’
আওয়ামী লীগ সরকারই প্রথম ২০০০ সালে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীতে নারী অফিসার নিয়োগ করে বলেও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
২০০৯ সালে পুনরায় সরকার গঠনের পর প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন যুগোপযোগী সামরিক বাহিনী গঠনের লক্ষ্যে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ফোর্সেস গোল-২০৩০ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর আধুনিকায়ন, সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন করছি। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ পিস বিল্ডিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিগত ৪ বছরে আমরা বিভিন্ন ফরমেশনের অধীনে ৩টি ব্রিগেড এবং ছোট-বড় ৫৮টি ইউনিট প্রতিষ্ঠা করেছি। একই সঙ্গে ২৭টি ছোট-বড় ইউনিটকে এডহক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছি এবং ৯টি সংস্থাকে পুনর্গঠন করেছি।’
এসময় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে আর্মি এভিয়েশনের ফরোয়ার্ড বেস এবং লালমনিরহাটে এভিয়েশন স্কুল নির্মাণের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আধুনিকায়নের ধারায় সেনাবাহিনীতে সংযোজিত হয়েছে আধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত বিভিন্ন সমরাস্ত্র যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে একটি বিশ্বমানের আধুনিক ও স্মার্ট বাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।’
দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছি। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের দিকে ধাবিত হচ্ছি। সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আমাদের নিজেদের অর্থে বহুল আকাক্সিক্ষত পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি। ফলে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের সক্ষমতা ও মর্যাদা বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আমরা যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আধুনিক ও উন্নত করেছি।’
এসময় একদিনে ১০০ সেতু ও একদিনে ১০০ সড়ক উদ্বোধনের কথা উল্লেখ করেন সরকার প্রধান। একে ‘বিশ্বে বিরল উদাহরণ’ বলে উল্লেখ করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা দেশের সব ভূমিহীন-গৃহহীনকে বাড়ি নির্মাণ করে দিচ্ছি। আমরা জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও মাদক নির্মূলে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে কাজ করে যাচ্ছি।’
প্রেসিডেন্ট গার্ডস রেজিমেন্টের সদস্যরা ‘নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাই গার্ডস এর লক্ষ্য’ এই মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত সাহস, আন্তরিকতা, পেশাগত দক্ষতা, সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা এবং দেশপ্রেমের শপথে বলীয়ান হয়ে সর্বদা দায়িত্ব পালন করে আসছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘কর্তব্য পালনের ক্ষেত্রে নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার, নিয়মিত প্রশিক্ষণ এবং পেশাগত অনুশীলনের মাধ্যমেই এই রেজিমেন্ট আগামীতে আরও সমৃদ্ধ হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সেনাবাহিনী আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিয়োজিত আছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শান্তি প্রতিষ্ঠায় দক্ষতা ও নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব ইতোমধ্যেই আমরা প্রমাণ করেছি।’
সেনাবাহিহীর সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি আশা করব ভবিষ্যতেও আপনারা চেইন অব কমান্ড মেনে আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করবেন। আপনারা যুগপোযোগী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবেন, ব্যক্তি শৃংখলা বজায় রাখবেন, আত্ম উন্নয়নে মনোযোগী হবেন, নিজ পরিবারের সদস্যদের প্রতি যত্নশীল হবেন। সর্বোপরি সেনাবাহিনী তথা সমগ্র জাতির উন্নয়নে অংশীদার হবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।’
পিজিআর-এর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই মাহেন্দ্রক্ষণে প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করেন পূর্বসুরীদের, যাঁরা কর্তব্য পালনকালে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের মাধ্যমে এ রেজিমেন্টের ইতিহাসকে গৌরবোজ্জ্বল করেছেন। দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধানের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে একাগ্রতা ও আত্মোৎসর্গের মনোভাব যেন চিরদিন বজায় থাকে’ সেই আশা ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।