ছুটির দিনে ডেঙ্গু রোগীর তথ্য দেয় না বেশিরভাগ হাসপাতাল

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২৩, ০৫:৩৪

ছবি: সংগৃহীত
শুক্রবার দেশের বেশিরভাগ হাসপাতাল ডেঙ্গু রিপোর্ট প্রদান করেনি। ফলে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা অস্বাবাবিকভাবে কমে এসেছে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের প্রতিবেদনে।
গত তিন দিন ধরে দৈনিক হাজারের বেশি ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছিল হাসপাতালে। সেই সংখ্যা শুক্রবার হঠাৎ নেমে এসেছে অর্ধেকেরও নিচে, ৪৪৫ জন।
অথচ মঙ্গলবারে এই সংখ্যা ছিল ১০৫৪ জন, বুধবার ভর্তি হন ১২৪৬ রোগী, আর বৃহস্পতিবার ১২৩৯ জন।
সপ্তাহান্তে রোগী ভর্তি যে আসলেই কমেছে তা কিন্তু নয়। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, “বিঃ দ্রঃ আজ ১৪-০৭-২০২৩ ইং তারিখ, শুক্রবার সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় বেশিরভাগ হাসপাতাল ডেঙ্গু রিপোর্ট প্রদান করেনি। আগামীকালের রিপোর্টের সাথে তা সমন্বয় করা করা হবে।”
তার মানে শনিবারের প্রতিবেদনে ভর্তি রোগীর সংখ্যা লাফিয়ে বাড়বে, আগের সপ্তাহের প্রতিবেদনও তাই বলছে।
গত ৭ জুলাই শুক্রবার ১৮২ জন রোগী ভর্তির কথা জানানো হলেও পরদিন সেই সংখ্যা হয় ৮২০। সেই শুক্রবারও বেশিরভাগ হাসপাতাল থেকে তথ্য না পাওয়ার কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অবশ্য কোন কোন হাসপাতাল প্রতিবেদন দেয়নি, তা স্পষ্ট করা হয়নি।
অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম ঢাকা মহানগরের ২০টি সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালের এবং বেসরকারি ৩৩টি হাসপাতালের তথ্য সংগ্রহ করে পরিসংখ্যান দেয় প্রতিদিনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত অন্তত ১০টি হাসপাতালে বৃহস্পতিবার রোগী ভর্তির তথ্য থাকলেও শুক্রবার লেখা হয়েছে শূন্য।
এর মধ্যে রয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মিটফোর্ড হাসপাতাল, শিশু হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল, পুলিশ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল, কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল, সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল, সরকারী হাসপাতাল ও ঢাকা মহানগর জেনারেল হাসপাতাল।
এসব হাসপাতালে কোনো রোগীই ভর্তি হয়নি নাকি তারা তথ্য পাঠায়নি, তা স্পষ্ট করা হয়নি প্রতিবেদনে। তবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বা মুগদা হাসপাতালে নতুন রোগী নেই, তা হওয়ার কথা নয়, কারণ এ দুটি হাসপাতালেই সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয় প্রতিদিন।
শুক্রবারের বুলেটিনে দেখা যাচ্ছে, ঢাকা মহানগরের সরকারি হাসপাতালগুলোতে সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৭৫ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন, আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ৪৪৫।
কেবল সরকারি হাসপাতালেই যে ‘ছুটি’ চলছে- এমন নয়, ঢাকা মহানগরের বেসরকারি হাসপাতালে শুক্রবার ১০৯ রোগী ভর্তির তথ্য এসেছে, যেখানে আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ৩১১ জন।
আর ঢাকার বাইরে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে শুক্রবার মোট ২৬৫ জনের ভর্তির তথ্য এসেছে, যেখানে আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ৪৮৩ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এম আই এস শাখার পরিচালক ডাক্তার শাহাদাত হোসেন অবশ্য শুক্রবারের এই তথ্য ঘাটতিতে কোনো সমস্যা দেখছেন না।
জানতে চাইলে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, রোগী ভর্তি সংক্রান্ত তথ্যগুলো হাসপাতাল থেকে আমাদের বিভাগীয় অফিসে আসে। সেখান থেকে কম্পাইল করে তথ্যগুলো আমাদের কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু সরকারি ছুটির দিন থাকায় সব জায়গায় এ কাজটিই করা যায় না। এ কারণে আমরা শুক্রবারের তথ্য শনিবার সমন্বয় করে দিই। এতে খুব একটা সমস্যা হওয়ার কথা না, কারণ শনিবারে সমন্বয় করা হলেও রোগীদের তথ্য বাদ পড়ে না।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শুক্রবারের প্রতিবেদনে যে ‘আংশিক চিত্র’ উঠে এসেছে, তাতে দেখা যায়- সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় কোনো ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়নি। অথচ আগের তিন দিনই অন্তত ৫ জনের প্রাণহানির খবর মিলেছিল।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৪৪৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৮৩১ জন। আর নতুন কোনো মৃত্যুর খবর না আসায় এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে প্রাণহানির সংখ্যা ৯৩ জনই রয়েছে।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৪২২০ জন রোগী। এদের মধ্যে ঢাকায় ২৭৫৫ জন এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ১৪৬৫ জন।
এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ দ্রুত বাড়ছে। জুন মাসে ৫ হাজার ৯৫৬ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, মৃত্যু হয়েছিল ৩৪ জনের।
সেখানে জুলাইয়ের প্রথম ১৪ দিনেই ৯৮৫৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তির পাশাপাশি মৃত্যু হয়েছে ৪৬ জনের।
মাসের হিসাবে জানুয়ারিতে ৫৬৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬ জন, মার্চে ১১১ জন, এপ্রিলে ১৪৩ জন, মে মাসে ১০৩৬ জন এবং জুন মাসে ৫৯৫৬ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
তাদের মধ্যে জানুয়ারিতে ছয়জন, ফেব্রুয়ারিতে তিনজন, এপ্রিলে দুজন, মে মাসে দুজন এবং জুন মাসে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এ বছর এডিস মশা শনাক্তে চালানো জরিপে ঢাকায় মশার যে উপস্থিতি দেখা গেছে, তাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এ অবস্থায় সামনে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়ার আশঙ্কা করেছেন তারা।
বর্ষা পূববর্তী জরিপের বরাতে সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঢাকার ১২৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৫৫টিতে ডেঙ্গু রোগের জীবানুবাহী এডিস মশার ঝুকিপূর্ণ উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় ঢাকায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার ঝুকি অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এ বছর যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের প্রায় সবাই ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে ভুগছিলেন এবং শক সিনড্রোমে মারা গেছেন।
এডিস মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে গত বছর ৬২ হাজার ৩৮২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের মধ্যে রেকর্ড ২৮১ জনের মৃত্যু হয়।