সমাবেশ আতঙ্কে রাজধানীবাসী, ঢাকা যেন নিষ্প্রাণ নগরী

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৩, ১৬:২০

আজকের ঢাকা যেন অচেনা নিষ্প্রাণ কোন এক নগর। ছবি: সংগৃহীত
সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঢাকা যেন অচেনা নিষ্প্রাণ কোন এক নগর। নেই চেনা যান ও জনজট, তীব্র কান ঝালাপালা করা গাড়ির হর্ন
শোনা যায় না, নেই ট্রাফিক পুলিশের বাঁশিও।
আজ বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) বিএনপির মহাসমাবেশ
ও আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের শান্তি সমাবেশ
করার কথা ছিল। তবে নির্ধারিত স্থান না পাওয়ায় উভয় দলই আজকের সমাবেশ স্থগিত করে আগামীকাল
শুক্রবার (২৮ জুলাই) করার সিদ্ধান্ত নেয়।
এদিকে, অনেকেই সমাবেশের কথা চিন্তা করে
ব্যক্তিগত গাড়িসহ অন্যান্য যানবাহন বের করেননি রাজপথে। অনেকে আবার ভয়ে-আতঙ্কে ঝামেলা
এড়িয়ে যেতে বের হননি রাস্তায়। অথচ সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে আজ দিনভর শহরজুড়ে যানবাহন
ও মানুষের ভীড় লেগে থাকারই কথা।
অন্যান্য বৃহস্পতিবারের চেনা চেহারা
নিয়ে আজ ফেরেনি ঢাকা। সকাল থেকে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ঢাকার কোথাও দেখা যায়নি
যানজট কিংবা ঘণ্টার পর ঘণ্টা এক জায়গায় আটকে বসে থাকা।
আজ প্রধান সড়ক থেকে উপসড়ক বা গলি কোথাও
যানজট লক্ষ্য করা যায়নি। সিগন্যাল ছাড়া দেখা যায়নি কোথাও গাড়ির জটলা। ট্রাফিক সদস্যদেরও
ব্যস্ততাহীন সময় পার করতে দেখা যায়।
রাজধানীর শ্যামলী, কলেজগেট, ফার্মগেট,
কারওয়ানবাজার, শাহবাগ, পল্টন, গুলিস্তান, তেজগাঁও, বাড্ডা, মহাখালী, বনানী, গুলশান
ও উত্তরাসহ রাজধানীর একাধিক এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে কোথাও কোনো যানজট তৈরি হয়নি।
সকাল থেকে কিছুটা গাড়ির চাপ থাকলেও দুপুর গড়িয়ে গেলে চাপ শূন্যের কোঠায় নেমে আসে।
যাত্রাবাড়ী থেকে বাসে চড়ে আসাদগেট এসেছেন
মরিচ ব্যবসায়ী লোকমান হাওলাদার। তিনি বলেন, আজ ঢাকা ফাঁকা। অন্য দিন তিন-সাড়ে তিন ঘণ্টা
লাগলেও আজ রাস্তায় মানুষ কম, গুলিস্তান থেকে ২০ মিনিটে আসাদগেট পৌঁছে গিয়েছি। অথচ গতকালও
লেগেছিল দুই ঘন্টা।
অন্যান্য দিনের তুলনায় বাসের সংখ্যাও
অনেক কম আজ। এ জন্য মোটরসাইকেল, সিএনজি ও রিকশা দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে ঢাকা শহর।
বাইক নিয়ে আসা বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষার্থী মীর ইফতেখার উদ্দীন ফাহাদ বলেন, অন্যদিন বাসা থেকে ক্যাম্পাসে আসতে সময়
লাগত কম করে হলেও ৪৫ মিনিট্। আজ আমি ১৫ মিনিটে অনায়াসে পৌঁছে গেছি।
এদিকে, রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয়
কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছেন শতাধিক পুলিশ। পাশাপাশি সকাল থেকে কার্যালয়ের সামনে
অবস্থান করছেন কয়েকশ নেতাকর্মী।
যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে দলটির নেতাকর্মীদের
সরিয়ে দিয়েছেন পুলিশ সদস্যরা।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) সকাল পৌনে ১২টার
দিকে প্রায় শতাধিক পুলিশ সদস্যকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিতে
দেখা যায়৷ এ সময় তারা দলটির নেতাকর্মীদের সেখান থেকে সরিয়ে দেন।
এর আগে সকাল থেকে নয়াপল্টনে বিএনপির
কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পাশে প্রধান সড়কের ওপর শতাধিক পুলিশ সদস্যকে সতর্ক অবস্থান নিতে
দেখা যায়। প্রধান সড়কের পাশাপাশি সেখানকার একটি গলিতেও অসংখ্য পুলিশ সদস্যদের অবস্থান
করতে দেখা যায়। এছাড়া একটি সাঁজোয়া রায়ট কার (এপিসি), জলকামান ও প্রিজন ভ্যানও বিএনপি
অফিসের সামনে দেখা যায়।
পুলিশের পাশাপাশি বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মী
দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সকাল থেকে অবস্থান নেন। এ সময় তারা সরকার বিরোধী
বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন। পরে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়।
এ বিষয়ে মতিঝিল জোনের এডিসি মো. রওশনুল
হক সৈকত গণমাধ্যমকে বলেন, যেকোনো বড় সমাবেশের আগে আমরা নিয়মিত যেভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করি, আজকেও
তাই করা হচ্ছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের কারণে রাস্তায় যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছিল। তাই তাদের
সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
এদিকে, বেলা ১২টার দিকে নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয়
কার্যালয়ে আসেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি গাড়ি থেকে নামার
পর নেতাকর্মীদের সেখান থেকে চলে যেতে বলেন।
তিনি বলেন, মহাসমাবেশের অনুমতির আগে
কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে যেন কেউ জড়ো না হন এবং স্লোগান না দেন।