ড. ইউনূসকে নিয়ে খোলা চিঠির প্রতিবাদে ১৭১ বিশিষ্ট নাগরিকের বিবৃতি

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২২:০৩

ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ফাইল ছবি
সম্প্রতি নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে বর্তমান বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত এবং সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি লিখেছেন ১০০ জনের বেশি নোবেল বিজয়ীসহ ১৬০ জনের বেশি বিশ্বনেতা। ওই চিঠির প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ১৭১ জন বিশিষ্ট নাগরিক, বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবী।
গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতি তারা জানান, খোলাচিঠিটি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। উক্ত খোলাচিঠির বক্তব্য বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব এবং স্বাধীন বিচার বিভাগের ওপর স্পষ্ট হুমকি হিসেবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। চিঠিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে আদালতে দায়েরকৃত চলমান মামলাসমূহের বিচার প্রক্রিয়া বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে। দেশের বিবেকবান নাগরিক হিসেবে আমরা বাংলাদেশের বিচার প্রক্রিয়ার ওপর এ-ধরনের অযাচিত হস্তক্ষেপের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।
উল্লিখিত খোলাচিঠির প্রেক্ষিতে বেশ কিছু আইনি ও নৈতিক প্রশ্ন সামনে চলে আসে। বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৪(৪) অনুযায়ী বিচারকগণ তাদের বিচারিক কাজে সম্পূর্ণভাবে স্বাধীন। সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীসহ রাষ্ট্রপরিচালনায় যুক্ত কারোরই বিচার প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করার কোনো এখতিয়ার নেই। উল্লিখিত চিঠির বক্তব্য বাংলাদেশের সংবিধান ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO) স্বীকৃত শ্রমিকদের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি। এই চিঠিতে 'নিরপেক্ষ' বিচারকের মাধ্যমে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ বিচারের যে আহ্বান জানানো হয়েছে, তা বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থাকে হেয় প্রতিপন্ন করার সামিল বলে আমরা মনে করি।
মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী সকল নাগরিকই আইনের দৃষ্টিতে সমান। লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত এই সংবিধানে সকলেরই আইনি সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। উল্লেখ্য যে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিচারকার্য বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুসারে ও স্বাধীনভাবে সম্পন্ন হচ্ছে।
সেই প্রেক্ষাপটে 'বিচারিক হেনস্তার অভিযোগ অমূলক ও অনভিপ্রেত। পাশাপাশি ড. ইউনূস বাংলাদেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে সবসময়ই দেশে ও বিদেশে ব্যক্তিগত এবং প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে সকল কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছেন। প্রেরিত খোলাচিঠিতে স্বাক্ষরকারী ব্যক্তিবর্গের নিজ নিজ দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। আমরা প্রত্যাশা করি, বিবৃতিদাতাগণ তাদের নিজ নিজ দেশের মতো বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থাকেও নিজস্ব আইন অনুযায়ী চলার সুযোগ দেবেন এবং সম্মান করবেন ।
বিবৃতি প্রদানকারী বিশিষ্ট নাগরিক, বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবীদের পক্ষে স্বাক্ষর করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিসার হোসেন।
১৭১জন বিশিষ্ট নাগরিকের মধ্যে রয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান, এমিরিটাস অধ্যাপক, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, আইনজীবী, অভিনেতা, চিকিৎসক, মানবাধিকার কর্মী, নাট্য ব্যক্তিত্ব, বিজ্ঞানীসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্টজন।