Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত শ্রমজীবী মানুষ

Icon

সাইফুল ইসলাম

প্রকাশ: ৩১ মার্চ ২০২০, ০৮:৫৭

করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত শ্রমজীবী মানুষ

ফাইল ছবি

করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেশের মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন বদলে গেছে। ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করছে মানুষজন। অনেকেই কর্মস্থল ত্যাগ করে গ্রামে পাড়ি জমিয়েছেন। 

এতে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্য শহরগুলো প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট এমন পরিস্থিতি মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে দেশের অর্থনীতিতে। এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নিম্নআয়ের মানুষজন।

করোনাভাইরাস থেকে নিরাপদে থাকতে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে মানুষের চলাফেরা কমে গেছে। নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘরের বাইরে যাচ্ছে না। কেউ কেউ প্রয়োজনে বের হয়ে কাজ সেরেই দ্রুত ঘরে ফিরছে। মানুষের চলাফেরা সীমিত হওয়ায় দৈনিক উপার্জনের ওপর নির্ভরশীল মানুষদের আয় প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এতে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাদের। 

রাজধানী ঢাকার ফুটপাতে অস্থায়ী দোকানপাট খুলে যারা ব্যবসা করতেন, তাদের অনেকেই ব্যবসা বন্ধ করে চলে গেছেন। যে দুই-চারটি দোকান খোলা রয়েছে, সেগুলোতেও বেচা-কেনা নেই।  

রাজধানীর বাংলামোটর মোড়ের দুই পাশের ফুটপাতে চা বিক্রি করতেন অন্তত ১০ জন। তাদের অনেকেই চলে গেছেন বলে জানান চা বিক্রেতা শাহ আলম। তিনি বলেন, ‘বিক্রির আশায় বসে আছি। কিন্তু কেউ চা খায় না, অন্য কিছুও নেয় না। সারাদিন দুইশ টাকাও বিক্রি হয়নি।’

রাজধানীজুড়ে কিছু মানুষ গণপরিবহনে পানি, পেয়ারা, আমড়া, শসা, গাজরসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য বিক্রি করতেন। মানুষের সাথে সাথে গণপরিবহনও কমে যাওয়ায়, তাদের ব্যবসাও বন্ধ হয়ে গেছে। এদিকে, যাত্রী কমে যাওয়ায় রিকশাচালকদের আয় কমেছে সবচেয়ে বেশি। তাদের একটা অংশ গ্রামে চলে গেছে। 

রিকশাচালক সোলাইমান আলী বলেন, ‘আগে প্রতিদিন খরচ বাদে ছয়-সাতশ টাকা নিয়ে ঘরে ফিরতে পারতাম; কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে আয় কম হচ্ছে। দিন যত যাচ্ছে আয়ও তত কমছে। আজকাল দিন শেষে দুইশ টাকাও হাতে থাকে না।’

বাস, ট্যাক্সি, সিএসজি ও অটোরিকশার একই দশা। অধিকসংখ্যক মানুষের সমাগম হয় বলে অনেকেই গণপরিবহন এড়িয়ে চলছে। আবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় বিভিন্ন কোম্পানির ছোট ছোট সরবরাহকারীদের ব্যবসাও কমছে। এদের একটি অংশ বেকার হয়ে যাচ্ছে। বিক্রি কমে যাওয়ায় শপিংমলগুলো বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে দোকান মালিক সমিতি। ফলে এসব মার্কেটে কর্মরত লক্ষাধিক কর্মীও বেকার হয়ে পড়েছেন।

এদিকে নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলো একের পর এক লকডাউন ঘোষণা করছে। বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করছে পোশাকের ব্র্যান্ডগুলো। এ পরিস্থিতিতে ভোক্তা চাহিদায় ব্যাপক প্রভাব পড়েছে; কিন্তু বাজার চাহিদার এ পরিস্থিতিতে নতুন ক্রয়াদেশ দিচ্ছে না ক্রেতারা। এরই মধ্যে দেয়া ক্রয়াদেশগুলোর পরিমাণ কমাচ্ছে। চলমান ক্রয়াদেশগুলোর উৎপাদন থেকে বিরত থাকতে বলছে ক্রেতারা। 

বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) তথ্য মতে, এখন পর্যন্ত ৩৪৭ কারখানায় প্রায় ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ক্রয়াদেশ বাতিল বা স্থগিত হয়েছে। ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত না করতে ৪১ ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানকে অনুরোধ জানিয়ে ই-মেইল করেছে বিজিএমইএ। 

শিল্পমালিকরা জানিয়েছেন, বর্তমানে যে ক্রয়াদেশ আছে তা নিয়ে সর্বোচ্চ দুই সপ্তাহ কারখানা সচল রাখা যাবে। এছাড়া একই ছাদের নিচে অনেক শ্রমিক কাজ করায় রয়েছে সংক্রমণের ঝুঁকিও। এ পরিস্থিতিতে কারখানা চালু থাকবে নাকি বন্ধ করে দেয়া হবে, তা নিয়েও আলোচনা চলছে।

দেশের সার্বিক অর্থনীতি বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। আর চলতি মাসের শুরুর দিকে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে খারাপ হলে প্রায় ৯ লাখ কর্মসংস্থান কমে যেতে পারে। 

এডিবির এই সংখ্যাকে নগণ্য বলে উল্লেখ করে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘বিদ্যমান পরিস্থিতিতেই অভ্যন্তরীণ বাজার প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। নিম্নআয়ের মানুষদের আয় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। অনানুষ্ঠানিক অর্থনৈতিক খাতগুলোও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি আরো খারাপ হলে শুধু গার্মেন্টস খাতেই বেকার হবে ৪৫ লাখ মানুষ। আর সব খাত মিলিয়ে এ সংখ্যা কোটি ছাড়িয়ে যাবে।’ 

তিনি আরো বলেন, ‘বিপর্যয়ের মুখে পড়া নিম্নআয়ের মানুষজনকে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারিভাবে সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে। দল, মত নির্বিশেষে সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকার, এনজিও ও জনপ্রতিনিধিদের একত্রে কাজ করতে হবে। আর এ ব্যাপারে দ্রুতই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের বিভিন্ন রাজ্য সরকার ইতোমধ্যে এ ধরনের সহায়তা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে। আমাদের দেশেও এ পন্থা অবলম্বনের বিকল্প নেই। কারণ সরকারি সহযোগিতা না পেলে ক্রয়োক্ষম নিম্নআয়ের মানুষজন মহামারিতে পড়বে।’

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫