
বাংলাদেশ-চিলি প্রথম ফরেন অফিস কনসাল্টেশান। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ এবং চিলির মধ্যে বাণিজ্য, সংস্কৃতি ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে কার্যকর সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের বিষয়ে চিলির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একমত পোষণ করেছে।
বাংলাদেশ ২০২১-২২ সালে চিলিতে ১৯২ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে। গত ১০ বছরে চিলিতে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি প্রতি বছর প্রায় ২০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। পররাষ্ট্র সচিব দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির পাশাপাশি রপ্তানিযোগ্য পণ্যের বৈচিত্র্য বৃদ্ধির উপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
গতকাল বুধবার (৪ অক্টোবর) বাংলাদেশ এবং চিলির মধ্যে প্রথম ফরেন অফিস কনসালটেশনে পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) মাসুদ বিন মোমেন এ গুরুত্বারোপ করেন।
চিলির রাজধানী সান্টিয়াগোতে বাংলাদেশ ও চিলির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক- ফরেন অফিস কনসাল্টেশান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মাসুদ বিন মোমেনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের পক্ষে অংশগ্রহণ করেন ব্রাজিলে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাদিয়া ফয়জুননেসাসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা। চিলির পক্ষে নেতৃত্ব দেন চিলির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেক্রেটারি জেনারেল এম্বাসেডর অ্যালেক্স ওয়েজিগ আবদালে এবং সংশ্লিষ্ট সিনিয়র কূটনীতিকরা।
উল্লেখ্য, দক্ষিণ আমেরিকাতে বাংলাদেশের একমাত্র কূটনৈতিক মিশন ব্রাসিলিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস চিলির সমবর্তী দায়িত্বপ্রাপ্ত।
বৈঠকে দুদেশের দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কের সামগ্রিক বিষয়- কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, শক্তির রুপান্তর হিসেবে বিকল্প নবায়নযোগ্য শক্তি, নারীর ক্ষমতায়ন, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা প্রভৃতি ক্ষেত্রে স্ব-স্ব রাষ্ট্রের অবস্থান ও পারস্পরিক সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তন, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা ও মানবাধিকার প্রভৃতি ক্ষেত্রে সহযোগিতা সংক্রান্ত বিষয় আলোচনায় প্রাধান্য পায়। পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, গত এক দশকে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব আর্থসামাজিক উন্নয়ন এবং ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিত করেন। ২০৪১ সালের মধ্যে জ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলে পররাষ্ট্র সচিব উল্লেখ করেন। দারিদ্র বিমোচন ও বৈষম্য দূরীকরণ, নারীর ক্ষমতায়ন কিংবা জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের সাফল্যের প্রশংসা করেন অ্যালেক্স। বাংলাদেশ ও চিলির মাঝে চলমান বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক আরও কার্যকর করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
প্রথম ফরেন অফিস কনসাল্টেশানে দিনব্যাপী বৈঠকে দু-দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ফরেন অফিস কনসাল্টেশন সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। রাষ্ট্রদূত সাদিয়া ফয়জুননেসার উপস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন মাসুদ বিন মোমেন এবং চিলি সরকারের পক্ষে স্বাক্ষর করেন অ্যালেক্স ওয়েজিগ আবদালে।
একই দিন বিকেলে চিলির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি ও ভাইস-মিনিস্টার গ্লোরিয়া গঞ্জালেস এবং মাসুদ বিন মোমেনের মধ্যে একটি বৈঠক অনুষ্টিত হয়। বৈঠকে ভাইস-মিনিস্টার গ্লোরিয়া গঞ্জালেস বিগত এক দশকে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন বিশেষ করে দারিদ্র্য বিমোচন ও নারীর ক্ষমতায়নে সরকারের সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং বাণিজ্য-বিনিয়োগসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিভিন্ন ফোরামে বাংলাদেশের সঙ্গে একত্রে কাজ করার আগ্রহ ব্যক্ত করেন। চিলির সমবর্তী দায়িত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাদিয়া ফয়জুননেসা উক্ত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।