Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

স্বেচ্ছাসেবা নিয়ে কাউন্সিল-অধিদপ্তর

Icon

শাহরিয়ার হোসাইন

প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০২৩, ১০:০৯

স্বেচ্ছাসেবা নিয়ে কাউন্সিল-অধিদপ্তর

বাংলাদেশ সরকার লোগো। ফাইল ছবি

বর্তমানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীনে স্বেচ্ছাসেবা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। একই সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবা কার্যক্রমকে ক্রম উন্নতির দিকে নিতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা এবং কাঙ্ক্ষিত সুযোগ-সুবিধাও নিশ্চিত করা যায়নি। এজন্য জাতীয় স্বেচ্ছাসেবা নীতিমালা করছে সরকার। 

‘জাতীয় স্বেচ্ছাসেবা নীতিমালা, ২০২৩’-এর খসড়া করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। নীতিমালা অনুযায়ী, স্বেচ্ছাসেবার উন্নয়ন ও সমন্বয়ে জাতীয় পর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবা উন্নয়ন কাউন্সিল এবং অধিদপ্তর বা পরিদপ্তর গঠন করা হবে। কমিউনিটি শিক্ষা ও শিখন কার্যক্রম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থী গ্রুপ, দুস্থ, সুবিধাবঞ্চিত, বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার গ্রুপ, পরিবেশ গ্রুপ প্রভৃতি খাতে এ স্বেচ্ছাসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, স্বেচ্ছাসেবকরা বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও সেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন। জাতীয় উন্নয়নে স্বেচ্ছাসেবকদের অবদানের বিষয়ে তথ্যভাণ্ডার তৈরি, তাদেরকে সংগঠিত করা, কার্যক্রম পরিচালনায় সক্ষমতা বৃদ্ধি ও দক্ষতা বজায় রাখা, সুরক্ষা এবং স্বীকৃতির জন্য একটি সমন্বিত নীতিমালা প্রয়োজন। এ প্রেক্ষাপটে, জাতিসংঘ স্বেচ্ছাসেবা সংস্থার (ইউএন ভলান্টিয়ার্স) কারিগরি সহযোগিতায় স্থানীয় সরকার বিভাগ প্রণীত জাতীয় স্বেচ্ছাসেবা নীতিমালার খসড়া গত বছরের ২৮ এপ্রিল মন্ত্রিসভা-বৈঠকে উপস্থাপিত হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, স্বেচ্ছাসেবা কার্যক্রম দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বলে নীতিমালাটির উদ্যোক্তা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় হওয়া সমীচীন হবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ‘জাতীয় স্বেচ্ছাসেবা নীতিমালা, ২০২৩’ চূড়ান্তকরণের উদ্যোগ নিয়েছে। 

দেশের সব ইতিবাচক সামাজিক পরিবর্তন ও উন্নয়নের ধারাকে ত্বরান্বিত করার সমন্বিত কৌশল হিসেবে স্বেচ্ছাসেবা কার্যক্রমকে আরও সুবিন্যস্ত, কার্যকর এবং যুগোপযোগী করার জন্য এই নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে বলে জানায় ত্রাণ মন্ত্রণালয়।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ বলেন, ‘স্থানীয় সরকার থেকে আমরা যেটা পেয়েছিলাম, সেটাকে পরিমার্জন করে নতুন খসড়াটি করা হয়েছে। এখন আমরা খসড়াটির বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের মতামত নিচ্ছি। আমরা বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি ওয়ার্কশপ করব। এরপর মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের জন্য পাঠাব।’

তিনি বলেন, ‘নীতিমালায় আমরা একটা কাঠামো রেখেছি। সেখানে কাউন্সিল হবে, অধিদপ্তর গঠন করা হবে। কারণ স্বেচ্ছাসেবা নীতিমালা হলে বিষয়টি সমন্বয়ে একটি কাঠামো লাগবে। মন্ত্রিসভা যেহেতু দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দিয়েছে, তাই এ মন্ত্রণালয়ের অধীনেই কাঠামোটা থাকবে, যাতে সমন্বয়টা ঠিকভাবে করা যায়।’

খসড়া নীতিমালায় বলা হয়, স্বেচ্ছাসেবার উন্নয়ন ও সমন্বয়ের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবা উন্নয়ন কাউন্সিল এবং উন্নয়ন ও সমন্বয় অধিদপ্তর বা পরিদপ্তর সৃষ্টি করা হবে। এর অধীনে একটি ব্যবস্থাপনা ও সাংগঠনিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা হবে। স্বেচ্ছাসেবার মূলনীতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্বেচ্ছাসেবা কার্যক্রম দেশের স্বাধীনতা, মানবাধিকার এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে পরিচালিত হবে। বাংলাদেশের সব প্রান্তের সব পর্যায়ের জনগণের মধ্য থেকে নির্বাচিত স্বেচ্ছাসেবকরা যে কোনো বিপর্যয় ও দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে।

নীতিমালায় ‘স্বেচ্ছাসেবা’র সংজ্ঞায় বলা হয়েছে- স্বেচ্ছাসেবা হলো এমন কাজ বা কার্যক্রম যা কোনো প্রকার আর্থিক সুবিধা ছাড়া জনগণের কল্যাণে করা হয়। এতে আনুষ্ঠানিক, অনানুষ্ঠানিক, সমাজকল্যাণমূলক ও প্রকল্পভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবার সংজ্ঞাও দেওয়া হয়েছে।

খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী এর কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে- কমিউনিটি শিক্ষা ও শিখন কার্যক্রম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থী গ্রুপ, দুস্থ, সুবিধাবঞ্চিত, বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার গ্রুপ, পরিবেশ গ্রুপ, কমিউনিটি সহায়তা গ্রুপ, কমিউনিটি ও রাজনৈতিক গ্রুপ, সংগঠিত সামাজিক গ্রুপ, সমন্বিত কমিউনিটি কার্যক্রম, কমিউনিটির বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও উৎসব, খেলাধুলা, বিনোদন ও অবসর সময়ের কার্যক্রম, করপোরেট স্বেচ্ছাসেবা, সেবা প্রদান (কাউকে সহযোগিতা করা), সিদ্ধান্ত গ্রহণ (যেমন উপদেষ্টা কমিটি), অনলাইন স্বেচ্ছাসেবা এবং প্রাসঙ্গিক ও স্বতঃস্ফূর্ত স্বেচ্ছাসেবা।

স্বেচ্ছাসেবকদের স্বীকৃতির বিষয়ে খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, বেসরকারি সংস্থা (দেশীয় ও আন্তর্জাতিক), উন্নয়ন সহযোগী, করপেরেট সেক্টর এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, জেন্ডার নির্বিশেষে স্বেচ্ছাসেবকদের বহুমাত্রিক অবদান বা কর্মপ্রবাহের স্বীকৃতি নিশ্চিত করবে।

উন্নয়ন কার্যক্রমে সংযুক্তির ক্ষেত্রে শারীরিক, আর্থিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বাধা নিরসন করে স্বেচ্ছাসেবকদের নিযুক্তির সম্ভাবনার বিষয়টিকে বিশেষ অগ্রাধিকার দেবে। জাতীয় জীবনে স্বেচ্ছাসেবার প্রসারের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে বেসরকারি সংস্থাগুলো সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করবে। এজন্য সরকার জাতীয় পরিষেবা খাতের জিডিপিতে স্বেচ্ছাসেবার অবদানের পরিমাপ ও স্বীকৃতির প্রতিফলনের উদ্যোগ নেবে।

স্থানীয় থেকে জাতীয় পর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবকদের স্বীকৃতি দেওয়া হবে। জাতীয় স্বেচ্ছাসেবা উন্নয়ন কাউন্সিল মাঠ পর্যায়ের সুপারিশ পর্যালোচনা করে জাতীয়ভাবে স্বীকৃতির জন্য স্বেচ্ছাসেবকদের তালিকা অনুমোদন করবে। দেশব্যাপী স্বেচ্ছাসেবার প্রসার ও তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিতে প্রতিবছর ৫ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবা দিবস উদযাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলে নীতিমালায় বলা হয়েছে।

স্বেচ্ছাসেবার সঙ্গে যুক্ত সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনগুলোর তথ্য-উপাত্ত সংরক্ষণে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় একটি কার্যকর তথ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করা হবে জানিয়ে খসড়ায় বলা হয়, স্বেচ্ছাসেবা তথ্য ব্যবস্থাপনাকে সরকারের অন্য তথ্য ব্যবস্থাপনা উদ্যোগ যেমন- ই-গভর্ন্যান্স, এটুআই কর্মসূচি, পৌর ডিজিটাল সেন্টার (পিডিসি), ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (ইউডিসি) ইত্যাদির সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে।

সাধারণ স্বেচ্ছাসেবকদের বয়স হবে ১৮ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে। প্রবীণ স্বেচ্ছাসেবক হবেন সেই সব ব্যক্তি (সর্বোচ্চ ৭০ বছর বয়স্ক) যারা আনুষ্ঠানিক চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর স্বেচ্ছাসেবায় নিযুক্ত হতে আগ্রহী। এছাড়া স্বেচ্ছাসেবকদের প্রকারভেদের মধ্যে রয়েছে- অনলাইন, প্রতিষ্ঠানভিত্তিক, আন্তর্জাতিক, অনিবাসী, কমিউনিটি এবং পেশাদার স্বেচ্ছাসেবক।

এ ছাড়া নীতিমালা বাস্তবায়ন, স্বেচ্ছাসেবা বিষয়ে সচেতনতা তৈরি, ব্যবস্থাপনা, নিয়োগ, অর্থায়ন ও বাজেট সহায়তা, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা গবেষণা ও প্রচার নিয়ে খসড়া নীতিমালায় বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫