Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

অ্যাপের ঋণে ভারতে আত্মহত্যা, বাংলাদেশেও বিস্তৃত হচ্ছে ফাঁদ

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২৩, ১৯:৫৩

অ্যাপের ঋণে ভারতে আত্মহত্যা, বাংলাদেশেও বিস্তৃত হচ্ছে ফাঁদ

মানুষ লোভের বশে কোনো কিছু যাচাই না করেই ফাঁদে পা দিচ্ছেন। ছবি- সংগৃহীত

ভারতে অ্যাপভিত্তিক ঋণের ফাঁদে পড়ে ৬০ জনের মতো মানুষ আত্মহত্যা করেছেন বলে গত সপ্তাহে বিবিসির একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়। উদ্বেগের বিষয় হলো, বাংলাদেশেও ঋণ দেওয়ার অ্যাপ বাড়ছে। আর ওই সব অ্যাপ আইন মানছে না।

বাংলাদেশে অ্যাপ খুলে ঋণ দেওয়ার নামে প্রতারণার ঘটনায় পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট আটটি মামলার তদন্ত করছে। এসব মামলায় গত আগস্টে চীনের ৭ নাগরিকসহ ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

৫ হাজার টাকা ঋণ দিয়ে ৫০ হাজার দাবি

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, চীনের নাগরিকেরা অ্যাপভিত্তিক ক্ষুদ্রঋণের প্রলোভন দেখান। বিনা জামানতে ঋণ দেওয়ার কথা বলে মানুষকে ফাঁদে ফেলেন। ওই অ্যাপের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য, ই-মেইল, মুঠোফোনের নম্বরসহ বিভিন্ন ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে নেওয়া হয়। এরপর কাউকে ৫ হাজার টাকা ঋণ দিয়ে ৫০ হাজার থেকে কয়েক লাখ টাকা দাবি করা হয়। গ্রাহক টাকা দিতে অস্বীকার করলে ব্যক্তিগত তথ্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়াসহ মামলার ভয় দেখানো হয়।

অনলাইনে কিছু অ্যাপের মাধ্যমে ঋণ দেওয়ার প্রচারণা নিয়ে জানতে চাইলে ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক গণমাধ্যমকে জানান, এগুলো বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাকি যেগুলোর নাম আসছে, সেগুলোর ব্যাপারে খোঁজ নিতে হবে।

মেজবাউল বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ও মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি যাদের অনুমোদন দেবে, তারাই ঋণকার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে। এর বাইরে যারা আছে, তারা বৈধ নয়।

জালে আটকে আত্মহত্যার খবর

বিবিসি জানিয়েছে, ভারতসহ এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার প্রায় ১৪টি দেশে দ্রুত ঋণ পাইয়ে দেওয়ার ফাঁদ দেখিয়ে অবৈধ ব্যবসা চলছে। ভারতে এই ফাঁদে পা দিয়ে নির্যাতন আর অপমানের শিকার হয়ে অন্তত ৬০ জন আত্মহত্যা করেছেন।

এসব অ্যাপ থেকে যারা ঋণ নিতেন, তাদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা চাওয়া হতো। টাকা না দিলে ফটোশপ করে নগ্ন ছবি পরিচিতজনদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হতো। বিবিসি বলছে, অ্যাপটি চালু করার সময়ই মানুষের ফোনে থাকা নম্বর ও অন্যান্য তথ্যে প্রবেশাধিকার নিয়ে নিত।

বিবিসির প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, এসব অ্যাপ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ঋণের টাকা উদ্ধারের জন্য কল সেন্টার নিয়োগ দেয়। কল সেন্টারের কর্মীরা দাবি করা টাকা পরিশোধের জন্য অশ্লীল ভাষা ব্যবহার ও হুমকি দিয়ে থাকেন। অ্যাপভিত্তিক ঋণের ব্যবসায় চীনের কিছু নাগরিকের সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পেয়েছে বিবিসি।

বাংলাদেশে প্রসার বাড়ছে

দেশে ঋণের অ্যাপগুলোর ব্যবহার কতটা বাড়ছে, তা জানা যায় ওয়েবসাইটের ট্রাফিক বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান সিমিলারওয়েবে। তারা বাংলাদেশের যেসব আর্থিকবিষয়ক অ্যাপকে জনপ্রিয় হিসেবে উল্লেখ করেছে, সেগুলোর মধ্যে অন্তত ৩২টি বাংলাদেশে অবৈধ। ক্যাশ বক্স, হ্যাপি মানি, কুইক অ্যান্ড সেফ, লোন ট্রাই, গাইড লোন ইত্যাদি অ্যাপ রয়েছে এই তালিকায়।

বাংলাদেশে অনুমোদনহীন ঋণ বিতরণ, অনলাইন জুয়া, অনুমোদনহীন ফরেক্স ট্রেডিং ও ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন নিষিদ্ধ। নিবন্ধিত কোনো প্রতিষ্ঠান বাদে কেউ আর্থিক লেনদেন সেবার প্ল্যাটফর্মও চালাতে পারে না। কিন্তু অ্যাপে ঋণ, জুয়া ও ফরেক্স ট্রেডিং-সবই চলছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগনের আদালতে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ৩৪ কোটি ডলারের পঞ্জি স্কিম চালানোর দায়ে ফোরসেজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের চার প্রতিষ্ঠাতাকে অভিযুক্ত করা হয়। এই বহুস্তর বিপণন বা মাল্টি লেভেল মার্কেটিং প্রতিষ্ঠানের নামে বাংলাদেশে অনেকগুলো ফেসবুক গ্রুপ রয়েছে, যার একটি ‘ফোরসেজ আইও বাংলাদেশ’। এই গ্রুপের সদস্যসংখ্যা ৬৭ হাজারের বেশি।

গ্রুপটির একজন অ্যাডমিন (পরিচালনাকারী) ইয়াসিন অভি গণমাধ্যমকে বলেন, ফোরসেজে সর্বনিম্ন ১৩ মার্কিন ডলার (প্রায় ১ হাজার ৪০০ টাকা) দিয়ে একটি হিসাব বা অ্যাকাউন্ট কেনা যায়। একজন মানুষ যত বেশি লোক এনে হিসাব খুলবেন, তার তত বেশি মুনাফা হবে।

অপসারণ করা যাচ্ছে না জুয়ার ওয়েবসাইট

মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ (এমটিএফই) গ্রুপ ইনকরপোরেটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান দেশের মানুষকে ফাঁদে ফেলে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়ে চলে গেছে বলে গত আগস্টে অভিযোগ ওঠে। ২৯ আগস্ট ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক হয়। সেখানে এ ধরনের জালিয়াতি ঠেকাতে টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্তও হয়।

টাস্কফোর্স গঠনের ব্যাপারে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার গণমাধ্যমকে বলেন, এখন পর্যন্ত ছয় হাজার জুয়ার ওয়েবসাইট বন্ধ করা হয়েছে। তবে আশপাশের দেশের জুয়ার অ্যাপের বিজ্ঞাপন অনলাইনে বাংলাদেশে চলে আসছে। মানুষ লোভের বশে কোনো কিছু যাচাই না করেই এসব ফাঁদে পা দিচ্ছেন।

বিটিআরসি জানিয়েছে, তাদের ডিজিটাল নিরাপত্তা সেল থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ২০ হাজার ৭৮২টি লিংক অপসারণের জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানানো হয়েছে। লিংকগুলো রাষ্ট্রবিরোধী, জননিরাপত্তার জন্য হুমকি, সামাজিক মূল্যবোধবিরোধী, জঙ্গিবাদী, পর্নোগ্রাফি আধেয়, অনলাইন গেমিং, অনলাইন বেটিং বা জুয়া খেলা, সাংস্কৃতিক কিংবা ধর্মীয় বিষয়ে উসকানিমূলক ও উগ্রবাদী গুজবসংশ্লিষ্ট বিষয়ের ছিল।

বিটিআরসি আরও জানায়, গত ৯ মাসে আর্থিক প্রতারণা, জুয়া বা অনলাইন বেটিং-সংশ্লিষ্ট ১ হাজার ৯৪৭টি ওয়েবসাইট ও ৪৮টি অ্যাপ বন্ধ করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে জুয়ায় প্ররোচিত করা হয়, এমন ২ হাজার ৫টি ফেসবুক লিংক এবং ৪৩২টি ইউটিউব লিংক অপসারণ করা হয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, একটি বন্ধ হলে অন্য আরেকটি চলে আসছে। মানুষ ফাঁদে পা দিচ্ছেন।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫