
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রথম গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামে অংশ নিতে আগামী মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) ব্রাসেলস যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারি সফর উপলক্ষে ২৪ অক্টোবর-২৬ অক্টোবর বেলজিয়ামে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী।
আজ রবিবার (২২ অক্টোবর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত প্রধানমন্ত্রীর সফর সম্পর্কিত এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. এম আব্দুল মোমেন একথা জানান।
তিনি জানান, আগামী ২৫ ও ২৬ অক্টোবর ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রথমবারের মত বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরাম আয়োজন করতে যাচ্ছে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডেরের আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী এ ইভেন্টে অংশগ্রহণ করবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী ২৪ অক্টোবর সকালে বাংলাদেশ বিমানের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে ব্রাসেলসের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন এবং সন্ধ্যায় ব্রাসেলস পৌঁছাবেন। এরপর ২৬ অক্টোবর রাতে প্রধানমন্ত্রী ঢাকার উদ্দেশে ব্রাসেলস ত্যাগ করবেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রী, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হবেন। প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ব্রাসেলস সফর অত্যন্ত সফল ও ফলপ্রসু হবে বলে আমরা আশাবাদী।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী স্মার্ট, পরিবেশ-বান্ধব এবং নিরাপদ ডিজিটাল প্রযুক্তি, জ্বালানি, পরিবহনখাতে অবকাঠামো নির্মাণ এবং স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও গবেষণা ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে গ্লোবাল গেটওয়ে উদ্যোগের ঘোষণা দেয়। এ উদ্যোগের আওতায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সদস্য রাষ্ট্র ও অন্যান্য অংশীদাররা অগ্রাধিকার খাতে ২০২১-২০২৭ সালের মধ্যে সর্বমোট ৩০০ বিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ করার ঘোষণা দিয়েছে।
তিনি জানান, এ সফরের সময় আগামী ২৫ অক্টোবর সকালে প্রধানমন্ত্রী প্রথমে ইউরোপীয় কমিশনের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ইউরোপীয় ট্রেড কমিশনার ভালদিস ডোমব্রোভস্কিস এবং এরপর ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডেরের সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। প্রধানমন্ত্রীর ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্টের সাথে বৈঠকে বাংলাদেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের ৫০ বছরের অংশীদারিত্ব নতুন উচ্চতায় উন্নীত করার ঘোষণা দিবে বলে আশা করা যায়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ বৈঠকের পর বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ও ইউরোপীয় ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের মধ্যে বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে ৩৫০ মিলিয়ন ইউরোর একটি ঋণ সহায়তা চুক্তি স্বাক্ষর হবে। এছাড়া, বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে অনুদান হিসেবে প্রদানের জন্য ইউরোপীয় কমিশন এবং ইউরোপীয় ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের মধ্যে ৪৫ মিলিয়ন ইউরোর একটি চুক্তি এবং বাংলাদেশ সরকার ও ইউরোপীয় কমিশনের মধ্যে ১২ মিলিয়ন ইউরোর একটি অনুদান চুক্তি স্বাক্ষর হবে। ইউরোপীয় ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক ইতোমধ্যে বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ ব্যক্ত করেছে। এ চুক্তির মধ্যদিয়ে বাংলাদেশে ব্যাংকটির অধিকতর বিনিয়োগের পথ প্রসারিত করবে বলে আশা করা যায়। এ সফরের সময় বাংলাদেশ সরকার এবং ইউরোপীয় কমিশনের মধ্যে বাংলাদেশের সামাজিক খাতে ৭০ মিলিয়ন ইউরোর পাঁচটি আলাদা অনুদান চুক্তি স্বাক্ষর হবে।
সফরসূচি প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামের ওপেনিং প্ল্যানারি সেশনে অংশগ্রহণ করবেন ও বক্তৃতা প্রদান করবেন। এদিন বিকেলে ইউরোপীয় ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ড. ওয়ানার হোয়ের প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করবেন। এছাড়া, ইউরোপীয় কমিশনের কমিশনার ফর ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট জানেজ লেনারকিক এবং ইউরোপীয় কমিশনের কমিশনার ফর ইন্টারন্যাশনাল পার্টনারশিপ মিজ জুট্টা উরপিলাইনেন আলাদাভাবে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এদিন সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামের অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র এবং সরকার প্রধানদের সন্মানে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট আয়োজিত একটি নৈশভোজে অংশগ্রহণ করবেন। পরদিন ২৬ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী আলেক্সান্ডার ডি ক্রোর সাথে একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হবেন। এরপর, প্রধানমন্ত্রী লুক্সেমবার্গের প্রধানমন্ত্রী জাভিয়ার বেট্টেলের সাথে একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, একই দিন বিকেলে প্রধানমন্ত্রী বেলজিয়ামে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশিদের আয়োজিত একটি নাগরিক সংবর্ধনায় অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা যায়।