Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

ভাষাসৈনিক জাহিদ হোসেন মুসা স্মরণে দোয়া মাহফিল

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৩, ১৭:১৭

ভাষাসৈনিক জাহিদ হোসেন মুসা স্মরণে দোয়া মাহফিল

দোয়া মাহফিলে ভাষাসৈনিক জাহিদ হোসেন মুসার স্মৃতিচারণ করছেন মো. নাসের শাহরিয়ার জাহেদী।

বিশিষ্ট ভাষাসৈনিক ও সমাজসেবক মো. জাহিদ হোসেন মুসা মিয়ার তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ বুধবার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে মহাখালীর এসকেএস টাওয়ারে রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের হেডকোয়ার্টার্সে এ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।

দোয়া মাহফিলে স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান ও জাহিদ হোসেন মুসা মিয়ার জ্যেষ্ঠ সন্তান মো. নাসের শাহরিয়ার জাহেদী।

এছাড়াও স্মৃতিচারণ করেন জাহিদ হোসেন মুসা মিয়ার কনিষ্ঠ ছেলে এম এ লতিফ জাহেদী, নাতি মুসাওয়াত জাহেদী ও নাতনি তাসনিয়া জাহেদী। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন রেডিয়েন্ট নিউট্রাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইশতিয়াক (অব.)।

অনুষ্ঠান শেষে জাহিদ হোসেন মুসা মিয়ার রুহের মাগফেরাত কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।

মো. জাহিদ হোসেন মুসা ঝিনাইদহের তথা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের কাছে সম্মান ও ভালোবাসা স্মরণীয় একটি নাম। সকলের কাছে তিনি পরিচিত ছিলেন মুসা মিয়া নামে। সদালাপী এই মানুষটি ছিলেন একাধারে ভাষাসৈনিক, রাজনীতিক, শিক্ষানুরাগী এবং সমাজসেবক। ১৯৩২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি নানার বাড়ি যশোর জেলার ঝিনাইদহ মহকুমার কালীগঞ্জের পাইকপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। রাজনৈতিক আবহের মধ্যে বড় হওয়ার কারণে তিনি ছাত্রাবস্থায়ই প্রগতিশীল রাজনীতিতে যুক্ত হন।

পাকিস্তান আমলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সূচনা পর্ব থেকেই ঝিনাইদহে তাঁর পৈতৃক বাড়িতে জাতীয় রাজনীতিবিদদের অনেকেরই যাতায়াত ছিল। এ সময় তাঁর ঘনিষ্ঠতা হয় মওলানা ভাসানীর সাথে। মওলানা ভাসানী ঝিনাইদহে এলে তাঁদের বাড়িতেই থাকতেন। এছাড়াও সে সময় ওই বাড়িতে আসতেন কাজী জাফর আহমদ, রাশেদ খান মেনন, হাজি দানেশ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। 

রাজনৈতিক জীবনে ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত ভাষা আন্দোলনের সময়কালে তিনি ঝিনাইদহ মহকুমা ও যশোর জেলায় মাতৃভাষার মর্যাদা আদায়ের আন্দোলনের সক্রিয় সংগঠক হিসেবে ভূমিকা রাখেন। ১৯৫২-৫৭ সাল পর্যন্ত ঝিনাইদহ মহকুমা (বর্তমানে জেলা) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সাথে যুক্ত হন। এরপর মওলানা ভাসানীর নির্দেশে ১৯৭৩ সালে ঝিনাইদহ মহকুমা ন্যাপের সভাপতি থাকাকালে তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হন।

জাহিদ হোসেন মুসার সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও অবাধ বিচরণ ছিল। শিল্পানুরাগী মুসা মিয়া নিজে গান করতেন, গান লিখতেন, কবিতা ভালোবাসতেন এবং লিখতেন। তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ- ‘অনেক দেরিতে’।

জাতীয় পর্যায়ে ভাসানী ন্যাপের রাজনৈতিক অবস্থান দূর্বল হয়ে যাওয়ার পর সামাজসেবামূলক কর্মকান্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। ২০০৯ সালে জাহিদ হোসেন মুসার নেতৃত্বে যাত্রা শুরু করে জাহেদী ফাউন্ডেশন নামে একটি সমাজসেবামূলক সংস্থা। যার মাধ্যমে নারী শিশু ও দুস্থদের জন্য খাদ্য কর্মসূচি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে।

২০২০ সালের ১৭ নভেম্বর বর্ষীয়ান এই ভাষাসংগ্রামী রাজধানীর একটি  হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। মৃত্যুর আগঅবধি জাহিদ হোসেন মুসা রেডিয়েন্ট গ্রুপ অব কোম্পানিজ ও সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকালের সম্মানিত উপদেষ্টা ছিলেন।

বর্ণাঢ্য জীবনে নানা সামাজিক অবদান ও ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনস্বরূপ ২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে তাঁর নামে শোক প্রস্তাব উত্থাপনপূর্বক এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। তাঁর কর্মময় জীবন ও অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ঝিনাইদহ পৌরসভার একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের নামকরণ করা হয় ‘ভাষাসৈনিক মুসা মিয়া সড়ক’। 

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫