Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

নির্বাচন সামনে রেখে সতর্ক প্রশাসন

Icon

শাহরিয়ার হোসাইন

প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ১৯:০৪

নির্বাচন সামনে রেখে সতর্ক প্রশাসন

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সতর্ক প্রশাসনের কর্মকর্তারা। প্রতীকী ছবি

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সতর্ক প্রশাসনের কর্মকর্তারা, কোনো ধরনের বিতর্কে যেতে চাইছেন না। ভোটের আগে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের গোপনে বসার রেওয়াজ থাকলেও এবার তেমন কিছু হতে দিতে চান না তারা।

সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না এটা অনেকটাই নিশ্চিত। আর বিএনপি নির্বাচনে না এলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসছে এটা অনেকটাই নিশ্চিত। অন্যদিকে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিদেশিদের চাপ ও নিষেধাজ্ঞার ভয় রয়েছে।

তাই আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতায় আসছে এটা ধরে নিয়ে বিদেশিদের নিষেধাজ্ঞার হুঁশিয়ারি মাথায় রেখে প্রশাসনের কর্মকর্তারা বিতর্কে জড়াতে চাচ্ছেন না। সতর্কতার সঙ্গে নিচ্ছেন পদক্ষেপ।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উৎসবমুখর পরিবেশে যাতে ভোট হয় সেজন্য জেলা-উপজেলার কর্মকর্তারা সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছেন। মাঠ প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা কর্মকর্তাদের অন্যতম দায়িত্ব। নির্বাচনের সার্বিক বিষয়ে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনে পরিবেশ অনুকূলে রাখতে, অপ্রপচার বা বিশৃঙ্খলা রোধ, নির্বাচনী আচরণ বিধি মানা, সবার সহাবস্থানসহ সব বিষয় নিয়ে সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছেন কর্মকর্তারা।

নির্বাচন উপলক্ষে মাঠ প্রশাসনকে ইতোমধ্যেই তিনটি নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। বলা হয়েছে-অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন সম্পাদন করা সবার জাতীয় দায়িত্ব। এ ব্যাপারে সর্বাত্মক সহায়তা প্রদান করার জন্য চিঠিতে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

বিভাগীয় কমিশনারদের নিয়ে নিয়মিত যে বৈঠক হয় সেখানে কোনো বিষয়কে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি যেন না হয় সে বিষয়ে সকল বিভাগীয় কমিশনারকে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। 

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (জেলা ও প্রশাসন অনু বিভাগ) মো. আমিন উল আহসান বলেন, তফসিলের পর বিভাগীয় কমিশনারদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। এসব বৈঠকে আমরা তাদের বলেছি ইসি যে নির্দেশনা দিচ্ছে সেটি মেনে কাজ করার।

মাঠ প্রশাসনের নিয়মিত বৈঠকে কর্মকর্তাদের এক গুচ্ছ নির্দেশনা দিয়ে রেখেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে কেউ যেন প্রশ্ন তুলতে না পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক হয়ে কাজ করতে বলা হয়েছে নির্দেশনায়।

ভিড় কমেছে সচিবালয়ে

জাতীয় নির্বাচনের তফসিলের পর শুরু হয়েছে নির্বাচনকালীন সরকার। তফসিলের পর সচিবালয়ে তদবিরকারীদের ভিড় অনেকটাই কমে গেছে। সরকারের নিয়মিত কাজের বাইরে যেহেতু বড় কোনো কাজ, বদলি-পদোন্নতির সুযোগ কম সে কারণে ভিড় কমতে পারে বলে মনে করছেন সচিবালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা। কেউ কেউ বলছেন সচিবালয়ে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরই ভিড় বেশি থাকে। তারা এখন নির্বাচনে ব্যস্ত। তদবির নিয়ে আসা দর্শনার্থী কম থাকায় সচিবালয়ে কর্মরতরা স্বস্তিতে নিয়মিত কাজ করতে পারছেন।

সাধারণত সোমবার ছাড়া প্রতিদিন নির্দিষ্ট পাস নিয়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে দর্শনার্থী প্রবেশ করেন সচিবালয়ে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজারের বেশি মানুষ প্রবেশ করত। সেই সংখ্যা এখন সর্বোচ্চ এক হাজারের মতো বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রশাসনকে যে নির্দেশনা

নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের জন্য প্রশাসনকে তিনটি নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। মন্ত্রণালয়-বিভাগ, মাঠ প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ প্রশাসনের সকল স্তরে এই নির্দেশনা দিয়ে গত ২৩ নভেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১২৬ এবং ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২’-এর অনুচ্ছেদ ৫ অনুসারে নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা প্রদান সরকারের নির্বাহী কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট সকলের একটি আবশ্যিক পালনীয় দায়িত্ব। এ ছাড়া গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর ৪৪৬ অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী নির্বাচনী সময়সূচি জারি হওয়ার পর হতে ফলাফল ঘোষণার ১৫ দিন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের অনুমতি ছাড়া ওই অনুচ্ছেদে বর্ণিত কোনো কর্মকর্তা/কর্মচারীকে অন্যত্র বদলি করা যাবে না বলে নির্দেশনার চিঠিতে জানানো হয়।

এমতাবস্থায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে তিনটি ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয় চিঠিতে।

১. আসন্ন নির্বাচন অনুষ্ঠানের কাজে অর্পিত দায়িত্ব আইন ও বিধি অনুযায়ী নিরপেক্ষভাবে পালন করে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা ও সহযোগিতা প্রদান করার লক্ষ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ এবং অধিদপ্তর/দপ্তর/সংস্থা হতে তাদের অধীনস্থ কর্মকর্তা/কর্মচারীদের অবিলম্বে নির্দেশ প্রদান।

২. শিক্ষা মন্ত্রণালয়/প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় হতে সরকারি, সরকারি অনুদান প্রাপ্ত ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক/শিক্ষিকাদের প্রতিও অনুরূপ নির্দেশ জারি করা।

৩. নির্বাচন পরিচালনার কাজ অব্যাহত রাখার নিশ্চয়তা বিধানের জন্য সকল মন্ত্রণালয়/বিভাগ তথা সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত অফিস/প্রতিষ্ঠান/সংস্থাকে তাদের যে সমস্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারী নির্বাচনের কাজে জড়িত আছেন, নির্বাচনের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদেরকে ছুটি প্রদান বা অন্যত্র বদলি করা বা নির্বাচনী দায়িত্ব ব্যাহত হতে পারে এমন দায়িত্ব প্রদান হতে বিরত থাকা।

এ অবস্থায় উল্লিখিত নির্দেশনা জারিসহ আনুষঙ্গিক কার্যাদি সম্পন্ন করে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সর্বাত্মক সহায়তা প্রদান করার জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

একই সঙ্গে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা দেওয়া এবং ‘নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১’-এর বিধান অনুসরণ বিষয়ে নির্দেশনা জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

৮০২ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ

নির্বাচন কমিশনের চাহিদামতো ভোটের মাঠে দায়িত্ব পালনের জন্য ৮০২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিতে ইতোমধ্যে বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্দেশনা দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

গত ২৩ নভেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এক চিঠিতে ৩০০টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট গ্রহণের দুই দিন পর পর্যন্ত দায়িত্ব পালনের জন্য এসব নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিতে বলেছে।

মন্ত্রিসভায় বিদায়ী সুর

নির্বাচনকালীন সরকার শুরু হওয়ার পর গত ২৭ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠক বসে। সেখানে ‘ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইন, ২০২৩’ ও ‘জয়িতা ফাউন্ডেশন আইন, ২০২৩’-এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।

একই সঙ্গে বৈঠকে পাঁচ বছর একসঙ্গে কাজ করার সময় সহযোগিতার জন্য মন্ত্রিসভার সদস্য এবং সচিবদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এজন্য মনে করা হচ্ছে ভোটের আগে আর মন্ত্রিসভা বৈঠক হবে না।

তবে তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনের আগে কি আর মন্ত্রিসভা বৈঠক হবে-জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘হবে না, এ রকম কোনো তথ্য জানা নেই।’

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫