
ছবি: বিবিসি
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে হাওর অঞ্চলে বোরো ধান কাটা বিঘ্নিত হলে 'বিপর্যয়' হয়ে যেতে পারে।
কৃষিমন্ত্রী ড. মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, এটা নিয়ে খুব টেনশনে আছি, কারণ হাওরের ধান যদি না কাটতে পারি তাহলে আমাদের বিপর্যয় হবে।
তবে তিনি জানান, ভাইরাস মোকাবিলায় সরকারি বিধি-নিষেধ অনুসরণ করে যাতে শ্রমিকরা ধান কাটতে পারেন তার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
এপ্রিল-মে দেশের কৃষির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুই মাস। দেশে এখন চলছে বোরো ধানের মৌসুম। আর সপ্তাহখানেক পরেই ধান কাটা শুরু হবে। হাওর অঞ্চলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ধান কাটা না হলে বৃষ্টিতে সেখানে পানি উঠে ব্যাপক ক্ষতি হয় ফসলের।
বোরো কাটা হলে বোনা হবে আউশ, আমন ও পাট। অন্যদিকে পরিমাণের দিক থেকে দেশের সবচেয়ে বেশি ফল পাকে এই মাসে। তরমুজ ও বাঙ্গি পেকেছে। এপ্রিলের শেষ থেকে পাকা আম বাজারে আসবে। চিচিঙ্গা, ঝিঙে, পটোল, টমেটোসহ গ্রীষ্মকালীন সবজি মাঠ থেকে তোলা আর বাজারে পৌঁছানোর মতো শ্রমিক ও ব্যবসায়ী পাওয়া যাচ্ছে না।
এসময়ে উত্তরবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শ্রমিকরা হাওর এলাকায় ধান কাটার জন্য আসার কথা। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রকোপের কারণে সারা দেশ কার্যত অচল হয়ে রয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য সরকারের বিভিন্ন নির্দেশাবলী রয়েছে।
গত ৯ এপ্রিল কৃষি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে একটি নোটিসে ধান কাটার শ্রমিকদের 'স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাওর এলাকায় আগমন ও চলাচল নির্বিঘ্ন করতে সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ' করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, হাওর এলাকায় ধান কর্তন ও চলাচলকালে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকি হ্রাসে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজের, কৃষকের ও শ্রমিকের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরকারের নির্দেশনাসমূহ যথাযথভাবে পালন করবেন।
কিন্তু হাওরে যেসব শ্রমিক ধান কাটার কাজ করেন তারা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার পর অনেকেই এখন নিজ নিজ গ্রামে চলে গেছেন। এখন তারা কীভাবে সেখান থেকে আসবেন ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কীভাবে কাজ করবেন।
এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী বিবিসিকে বলেন, রংপুর, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, পাবনা, সিরাজগঞ্জ এসব এলাকার জেলা প্রশাসক ও কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে, তারা ব্যবস্থা করবে।
তিনি বলেন, শ্রমিকরা কয়েকজনে মিলে যদি একটা গাড়ি ভাড়া করে তাহলে তাদের পরিবহন নির্বিঘ্ন করা হবে।
করোনাভাইরাসের বিষয়টি বিবেচনা করে তিনি আরো বলেন, সেসব এলাকার সিভিল সার্জন, জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা তারা শ্রমিকদের পর্যবেক্ষণ করবেন। তাদের জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজার যেসব লাগে সেসব কিছু দেবেন। আশা করি, হাওরের ধান যথাসময়ে কাটা সম্ভব হবে।
বর্তমান পরিস্থিতির কারণে যেসব কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাদের সহায়তার ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ চলছে বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যানুসারে এবার হাওরের সাত জেলায় কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বোরো আবাদ হয়েছে ৯ লাখ ৩৬ হাজার হেক্টর জমিতে।
এর মধ্যে শুধু হাওরেই হয়েছে ৪ লাখ ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে। সারাদেশে এ বছর বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২ কোটি ৪ লাখ ৩৬ হাজার মেট্রিক টন।
অধিদফতরের হিসেব মতে, হাওর অঞ্চলে বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৭ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন। অর্থাৎ এই লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ২০ ভাগের জোগান দেয় হাওর অঞ্চলের বোরো ধান।
লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবু জাফর বিবিসিকে বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাথে তাদের একাধিকবার বৈঠক হয়েছে এবং এ সংক্রান্ত নির্দেশ তাদের দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের জেলায় ১৫০ জনের একটা তালিকা রয়েছে শ্রমিকদের। তাদের প্রথমে এখান থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে। বাসে মাস্ক পরে যেভাবে সোশাল ডিসটেন্স বজায় রাখা যায় সেটা করা হবে। আর কাজ শেষ করে ফেরার পথে আবার যে জেলায় তারা কাজ করবে তারা একই নিয়ম মেনে তাদের ফেরত পাঠাবে। শ্রমিকদের পাঠানোর এই প্রক্রিয়া শেষ হতে ৩/৪দিন লাগবে।
উত্তরবঙ্গের আরো তিনটি জেলা গাইবান্ধা, রংপুর, পাবনার সাথে যোগাযোগ করা হলে কর্মকর্তা একই ধরণের সরকারি নির্দেশের কথা জানান।